আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনের কারণ (Causes of International Migration)
বিভিন্ন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য কারণে আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন ঘটে। অন্তভা পনির দিদির কারণগুলিকে আকর্ষণজনিত কারণ (Pull factors) এবং বিকর্ষণজনিত কারণ (Path loca এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
• আকর্ষণজনিত কারণ (Pull factors): যেসব কারণ বা নিয়ন্ত্রক বা উপাদানগুলি একদেশের মানুয়েত অন্যদেশে যাওয়ার জন্য আকৃষ্ট করে, তাকে আকর্ষণ জনিতকারণ বলে। এসব কারণগুলির মধ্যে পুররুয় হল-
আরও উন্নততর বৃত্তি কিংবা চাকরির সুযোগ-সুবিধা।
শিক্ষা ও চিকিৎসায় বিশেষ সুযোগ-সুবিধা।
অধিক অর্থ উপার্জনের সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ব্যাবসায়িক কাজকা সুযোগ-সুবিধা।
(i) তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ব্যক্তিগণের উন্নত দেশগুলিতে গিয়ে চাকরি করা ও বসবাস ইচ্ছা।
(৮) গন্তব্য দেশের পরিব্রাজন সংক্রান্ত সরলনীতি।
(৯) গন্তব্য দেশের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।
• বিকর্ষণজনিত কারণ (Push factors):
(৫) সামাজিক নিরাপত্তার অভাব।
(ii) যুদ্ধবিগ্রহ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যেমন- বন্যা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মন অন্য দেশের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে যান।
(iii) কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা না থাকা।
(iv) দেশ বিভাগের ফলে মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
■ সরকারি নীতি (Government's Policies): সরকারি নীতি যদি বিদেশে যাওয়ার পক্ষে কোনো রক অনুকূল না হয়, তখন মানুষ বিদেশে গমন করে না। কিন্তু নীতি অনুকূল হলেই খুব সহজে পরিব্রাজন ঘটে
■ অত্যধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি (Population Explosion): কোনো দেশে অত্যধিক জনসংখ্যার বৃদ্ধি করে সেখানে জীবনযাত্রার মান নীচে নেমে যায়, শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির সুযোগ হ্রাস পায়। মানুষ তদ ওই স্থান ত্যাগ করে বিদেশ চলে যান।
■ প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক (Good Relationship with neighbouring countries প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকলে খুব সহজেই মানুষ বিদেশে পাড়ি দেয়। বাংলাদেশ, নেগাল তিব্বত প্রভৃতি দেশগুলি থেকে প্রচুর ব্যক্তি ভারতে এসে বসবাস করছে।
■ আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনের প্রভাব (Consequences of International Migration): সমগ্র বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনের গভীর প্রভাব লক্ষ করা যায়। বাস্তুত্যাগী দেশ এবং অভিবাসী দেশ উভয়ের ওপরে আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনের প্রভাব পড়ে।
■ বাস্তু ত্যাগী দেশের ওপর প্রভাব: যেদেশ থেকে পরিব্রাজন ঘটল সেই দেশের ওপর নিন্মলিখিত প্রভাব
=>দেশের জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব কিছুটা কম হয়।
=>বেকার সমস্যার কিছুটা সমাধান ঘটে
=>জমির ওপর এবং অন্যান্য সম্পদের ওপর জনসংখ্যার চাপ কমে যায়।
=>বিদেশের সঙ্গো বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধি পায়।
=>দেশে শ্রমিকের ও শ্রমশক্তির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
=> দেশ থেকে যদি প্রচুর ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক প্রচুর সংখ্যায় বিদেশে চলে যায় তবে দেশে চিকিৎসা, পড়াশুনা প্রভৃতির কাজ ব্যাহত হয়।
■ অভিবাসী দেশের ওপর আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনের প্রভাব: যে দেশে প্রচুর সংখ্যক পরিব্রাজক উপস্থিত হয় সেই দেশ অর্থাৎ অভিবাসী দেশের ওপরও আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনের প্রভাব পড়ে
অভিবাসী দেশের জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ থেকে এভাবে প্রচুর লোক ভারতে প্রবেশ করছে এবং এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটছে।
(ক) ভিন্ন সংস্কৃতির মিলন ঘটে। কারণ দুটি দেশের Culture বা সংস্কৃতির পৃথক সত্ত্বা থাকে।
শ্রমের জোগান বৃদ্ধি পায় বলে উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
(খ) প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, অধ্যাপক, গবেষক প্রমুখ ব্যক্তির আগমনে দেশ ও সমাজ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়।।
(গ) প্রাপ্তবয়স্ক এবং কর্মঠ লোক বেশি সংখ্যায় কোনো দেশে গেলে ওই দেশে নির্ভরশীলতার অনুপাত (Dependency ratio) হ্রাস পায়।
(ঘ) উভয় দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে নৃতাত্ত্বিক মিশ্রণ ঘটে।
(vi) অনেকক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার উদ্ভব ঘটে।
■ ইউরোপীয় পরিব্রাজন (European Migration): আধুনিক এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনে ধানাবলির মধ্যে ইউরোপ থেকে নতুন পৃথিবীতে বৃহদায়তন পরিব্রাজন ঘটেছে। একেবারে প্রথমদিকে গরিব্রাজনকারীদের মধ্যে স্প্যানিশ ও পোর্তুগিজরা অন্যতম। এই স্প্যানিশ ও পোর্তুগিজরা প্রচুর সংখ্যায় ল্যাটিন আমেরিকায় বসবাস করছে। Generally it is said that 'Greed, Gold and God were the matrating forces leading the spaniards into the new world. ইউরোপ থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ টত্তর আমেরিকায় এসে বসবাস করছেন। অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের সময় ইউরোপের লোকদের আমেরিকায় নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার অনুসন্ধান এবং ইউরোপে জনসংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে এখান থেকে পরিব্রাজন ঘটেছিল। পরিব্রাজনের সবচেয়ে বড়ো স্রোত ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য থেকে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এই স্রোতটি সপ্তদশ শতকে উত্তর আমেরিকাতে পৌঁছায়। অষ্টাদশ শতকে অধিকাংশ ইউরোপীয় উত্তর আমেরিকাতে বিশেষ করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়।।
আমেরিকা ছাড়া আরও তিনটি প্রধান অঞ্চল যেখানে ইউরোপীয়রা ছড়িয়ে পড়েছিল সেগুলি হল অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড, সাইবেরিয়া এবং আফ্রিকার কিছু আশ। অস্ট্রেলিয়াতে যারা গিয়েছিল তাদের বেশির ভাগ মিল অপরাধী এবং অস্ট্রেলিয়াতে এদের ইউরোপ থেকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতেও প্রায় 70% ইউরোপীয় যারা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যায় তারা ছিল ব্রিটেনের অধিবাসী। ইউরোপ থেকে ভাচ এবং ব্রিটিশগণ আফ্রিকার দক্ষিন ভাগে এসে বসবাস শুরু করে। পূর্ব ইউরোপ থেকে সাইবেরিয়ার সিকেও পরিব্রাজনের স্রোত তৈরি হয়।