অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উচ্চপ্রজনন হারের কারণ(Causes of high fertility in underdeveloped and developing countries)
বর্তমানে পৃথিবীর অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উচ্চপ্রজনন হার লক্ষ করা যায়। এর বহুবিধ কারণ আছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন প্রভৃতি দেশে গড় প্রজনন হার।-এর কম কিন্তু আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলিতে নারী-প্রতি প্রজননের গড় হার 4-এর বেশি হয়। এর পিছনে বহুবিধ কারণগুলি হল
(i) অত্যধিক দারিদ্র (High Poverty): দারিদ্র্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন যে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দরিদ্র বাবা-মা মনে করেন যে, অধিক সন্তান জন্ম দিলে ভবিষ্যতে বড়ো হয়ে তারা অনেক রোজগার করবে। ফলে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণে উৎসাহী হন না। সমাজবিজ্ঞানী কাস্ত্রোর মতে দারিদ্রদ্র্য, জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুঘটকের কাজ করে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অত্যধিক দারিদ্র্য এবং বাইরে কাজকর্মের সুযোগ-সুবিধা খুব কম থাকে। ফলে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকার সুযোগ বেশি প এই কারণে প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।
(ii) বহুবিবাহ এবং ধর্মীয় অনুশাসন (Remarriage and Religious bondage) : এশিয়া, এবং ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কিছু কিছু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বহুবিবা প্রচলন দেখা যায়। তা ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ ধর্মের বিরোধী বলে অনেকে মনে করেন। এই কারণে জন্মরবেশি হয়।
(iii) বাল্যবিবাহ (Child Marriage): ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল প্রশ্ন দেশগুলিতে গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহের হার বেশি, বিশেষ করে মেয়েদের অনেক অল্প বয়সে বিবাহ সেখা হয়। ফলে মেয়েদের প্রজনন সময় অনেক দীর্ঘ হয়। এই কারণে প্রজনন হারও বেশি হয়।
(iv) স্ত্রী-শিক্ষার অভাব (Lack of female education): স্ত্রীশিক্ষার অভাবেও নারীদের মা প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়। মেয়েদের মধ্যে যদি শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায় তাহলে তাদের বিভিন্ন চাকুরি পাওজ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষিত চাকুরীজীবী ও সংস্কৃতি সম্পন্ন মহিলাগণ ভ সন্তানের জন্ম দিতে আগ্রহী হন না।
(v) কৃষিকাজে প্রাধান্য (Priority on Agriculture): ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এই সম দেশের অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা হল কৃষিকাজ। নিবিড় শ্রম প্রগাঢ় পদ্ধতিতে (Intensive fermu কৃষিকাজ করা হয় বলে জমিতে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ফালে কৃষক পরিবার তার নিজের সন্তানয়ে কৃষিকাজে নিয়োগ করেন। তা ছাড়া অন্যান্য পেশাগত কাজের অভাব থাকায় দরিদ্র মানুষ খুব স্বল্প মজুরি বিভিন্ন কাজে যোগ দেন। এসব কাজের মাধ্যমে কিছু রোজগার হয়। তাই দরিদ্র বাবা-মায়েরা মনে করে অধিক সন্তান তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করবে অধিক আয়ের মাধ্যমে।
(vi) পরিবার পরিকল্পনার ব্যর্থতা (Failure of Family Planning Programme): অনিশ্চক্ষ কুসংস্কার, অর্থাভাব, সরকারি পরিকল্পনার অভাব, সাধারণ মানুষের মধ্যে অসচেতনা প্রভৃতি আর্থসামাজি পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্য 'পরিবার পরিকল্পনা' কর্মসূচি বিশেষ সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ফা জন্মনিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে প্রজনন হার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
(vii) উচ্চ মৃত্যুহার (High Mortality Rate): উন্নয়নশীল দেশগুলিতে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভা চিকিৎসার স্বল্প সুযোগ-সুবিধা, রোগ-ব্যাধি প্রভৃতি কারণে মৃত্যুহার অনেক বেশি হয়। এজন্য বাবান অধিক সন্তানে আগ্রহী হন। কারণ অধিক সন্তান থাকলে শেষ পর্যন্ত তাঁরা নিঃসন্তান হবেন না।এ ফলে প্রজনন হার বাড়ছে।
(viii) পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা (Want of male child): আমাদের মতো দেশগুলিতে পরিবারে মায়েরা কন্যা সন্তান অপেক্ষা পুত্র সন্তান বেশি পছন্দ করেন। ফলে পুত্রসন্তান লাভের আশায় বারক সন্তান জন্ম দিতে থাকেন। কারণ তাঁদের মনে হয় ছেলের হাতে তাঁদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত ও সুরক্ষি হবে এবং পুত্রসন্তান তাঁদের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদন করবে।
(ix) নারী স্বাধীনতা এবং তাদের অধিকার (Woman's freedom and their rights): উন্নয়নশী এবং অনুন্নত দেশগুলিতে সন্তান ধারণে নারীর নিজস্ব মতামত বা অধিকার অনেক কম আছে। কি সেই তুলনায় উন্নত দেশগুলিতে নারীরা অনেক স্বাধীনচেতা। সন্তান সংখ্যা নির্ধারণে পুরুষব্যক্তির মতে নারীদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ হয়। এজন্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রজনন হার (fertility rate) বেশি হয়.