welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতের জাত বা বর্ণ ব্যবস্থা(Caste system of India)

ভারতের জাত বা বর্ণ ব্যবস্থা(Caste system of India)


ভূমিকা: জাত বা বর্ণগত শ্রেনীবিভাগ ভারতের সামাজিক পরিকাঠামোর অঙ্গ হিসেবে বৈদিক যুগ থেকেই চলে আসছে। একটি মানুষের সামাজিক অবস্থান, তার সামাজিক সম্পর্ক, আচরণ কিরূপ হবে তা অনেকাংশে নির্ণীত হয়েছে সে কোন জাতিতে জন্মগ্রহণ করেছে তার দ্বারা। তার সামাজিক আন্তঃসম্পর্ক ও সামাজিক ক্রিয়ায় জাত ব্যবস্থা তথা সে কোন জাতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে তা তার সমগ্র জীবনকে প্রভাবিত করত।

জাত বা বর্ণ ব্যবস্থার সূত্রপাত: জাত ব্যবস্থা শুরু হয় আর্যদের ভারতবর্ষে আগমনের পরে। তথাকথিত অনার্যগণ ভারতের প্রাচীন অধিবাসী। তারা বনে জঙ্গলে সংগ্রহ, তৃণভূমিতে পশুচারণ করে মূলত জীবিকা অর্জন করতেন। সীমিতভাবে প্রাচীন প্রথায় কৃষিকাজও করতেন। পরবর্তীকালে আর্যরা অধিক সংখ্যা আগমন করলে অরণ্য কেটে তৃণভূমি পরিষ্কার করে উর্বর জমিগুলিকে কৃষিকাজের অধিনে নিয়ে আসেন। ফলে প্রয়োজন হয় প্রচুর শ্রমশক্তির। এভাবে কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে যে সমাজ ব্যবস্থায় শুধু খাদ্য ফসল উৎপাদনই নয়, তার সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন চাহিদার জন্য শ্রম শক্তির প্রয়োজন হয়। আর্যগণ জ্ঞানী এবং যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী হওয়ায় তারা সহজেই ভারতবর্ষে বিভিন্ন অংশে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করে এবং অন্যান্য অধিবাসীদের উপর তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে শুরু করে। তৈরি হয় বর্ণভেদ। এই বর্ণভেদ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণে বিভক্ত। এছাড়াও এই বর্ণের বাইরে যারা রয়েছেন তাদের বলা হয় নমঃশূদ্র এবং যারা অপরিচ্ছন্ন কাজ করবে বলে তাদেরকে বলা হয় অস্পৃশ্য। এরা মৃতদেহ সৎকার, পশুর চর্ম সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ অথবা সমাজে মানুষের পরিত্যাজ্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে বাসস্থানকে পরিষ্কার রাখবেন। এভাবে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস জাতপাতের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে বহু যুগ আগে থেকেই, বলা হয় সেই বৈদিক যুগ থেকেই।

বর্ণভেদের শ্রেণী বিভাজনটি এরূপ-

১. ব্রাহ্মণ, যারা ধর্মাচারণ করবেন এবং পৌরহিত্য করবেন। 

২. ক্ষত্রিয়, যারা যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী তারা যুদ্ধ বিগ্রহে অংশগ্রহণ করবেন এবং প্রজা পালন করবেন। 

৩. বৈশ্য, যারা ব্যবসা, বিপণন গো-পালন ইত্যাদি কাজে নিযুক্ত থাকবেন। 

৪. শূদ্র, এরা মূলত কৃষিজীবি ও সমাজের উচ্চতর বর্ণকে পরিষেবা প্রদানকারী জনসাধারণ। এছাড়া এর বাইরে রয়েছে 

৫ নমঃশূদ্র, যারা উপরের সমস্ত জাতিগত মানুষদের ভিন্নতর পরিষেবা দেবেন যেমন মৃতদেহ সৎকার, মৃত পশুর চর্ম সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ, আবর্জনা তথা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবেন, এরূপ জনজাতিকে অপরিচ্ছন্ন ও অস্পৃশ্য বলে সমাজের থেকে দূরে রাখা হতো অথচ সমাজে তাদের প্রয়োজন অনিবার্য ছিল এবং আছে। শুরু থেকে জাতিপ্রথাকে শ্রমবিভাজনের ভিত্তি ধরা হত কিন্তু পরে তা সামাজিক শ্রেনীবিভাজন এবং সামাজিক সুবিধাভোগী শ্রেনীদের স্তরবিন্যাসে উপনীত হয়। এই জাত পাত উত্তরাধিকারসূত্রে চলে আসে এবং সামাজিক সুবিধাভোগের অগ্রতাকে মান্যতা দিয়ে এসেছে।

বাসস্থান বিস্তারে প্রভাব: গ্রামাঞ্চলে বাসগৃহ কোথায় হবে, গ্রামীণ বসতি বিন্যাসে এই জাতপাত ব্যবস্থার প্রভাব দেখা যায়। অপেক্ষাকৃত উচ্চতর জমিতে বা অপেক্ষাকৃত উর্বর জমিতে বাস করবেন ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা; তারথেকে কিছুটা দূরে বাস করবেন বৈশ্য বা বিপননকারী ও কৃষিজীবী অপেক্ষাকৃত সম্পন্ন মানুষেরা; আর আরো দূরে নিম্নভূমিতে অথব্য পতিত জমিতে অথবা অনুর্বর জমিতে বাস করবেন নমশূদ্ররা। এইভাবে বসতি বিন্যাস হয় এবং জাত পাত ধরে গ্রামগুলির নামকরণও হয়, যেমন কায়স্থ পাড়া, যুগিপাড়া, তেলিপাড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

জাত প্রথা ও ভূমিস্বত্বঃ ভূমির মালিকানা মূলত উচ্চতর বর্ণের হাতে। উর্বর এবং প্রচুর ভূমির মালিকানা থাকে উচ্চতর বর্ণের ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ ও বৈশ্যদের হাতে এবং প্রান্তিক কৃষিজীবী ও ভূমিহীন খেতমজুর হন শূদ্র বা শূদ্রতর গোষ্ঠীভুক্ত মানুষজন।

সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা (Feudal System): সাধারণত উচ্চ বর্ণের হাতে থাকে। সামন্ত্রতান্ত্রিক ব্যবস্থার জমির মালিকানা অধিকাংশই উচ্চবর্ণের হাতে থাকে। ভূমিহীনরা এই উচ্চ বর্ণের জমিতে কাজ করেন অর্থাৎ ভু মিহীনরা বা নিম্নবর্ণের মানুষেরা উচ্চবর্ণের জমিতে পরিষেবা দিয়ে থাকেন এবং তাদের জীবনযাত্রা সাচ্ছন্দপূর্ণ হওয়ার জন্য অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করেন।

ব্রাহ্মণঃ ব্রাহ্মণ সমাজের উচ্চতম বর্ণ। যদিও কর্মের দিক থেকে এরা ধর্মাচারণ করবেন, পৌরহিত্য করবেন, এদের কিন্তু একটা সময় রাজার বদান্যতায় ভূমির পরিমাণ প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে সকলের ক্ষেত্রে তা হয়নি। ব্রাহ্মনগণ বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পদবী গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেরালায় নামবুদ্রি: তামিলনাড়ুতে আয়ার, আইঙ্গার; কাশ্মীরে পণ্ডিত, ভাট, ধার; গুজরাটে উপাধ্যায়, অসমে বেজবরুয়া, রামবরুয়া ইত্যাদি, পশ্চিমবঙ্গে চ্যাটার্জী, মুখার্জী, ব্যানার্জি, ভট্টাচার্য্য ইত্যাদি; বিহারে মিশ্র, ঠাকুর ইত্যাদি; ওড়িশায় মিশ্র, সৎপতি, সামন্ত ইত্যাদি; মহারাষ্ট্রে দেশমুখ, দেশপান্ডে, ফার্ণভিস ইত্যাদি; উত্তরাখণ্ডে দিক্ষিত, দুবে, দ্বিবেদী, ত্রিবেদী, চতুর্বেদী, তিওয়ারী, বাজপেয়ী ইত্যাদি; মণিপুরে ব্রাহ্মণদের সামগ্রিকভাবে বামন বলা হয়। এছাড়া অন্যান্য রাজে অন্যান্য নামে ব্রাহ্মনরা পরিচিত। ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় এবং প্রায় ১৬ শতাংশ ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়।

ক্ষত্রিয়: ক্ষত্রিয়গণ প্রজা পালন করবেন, যুদ্ধবিগ্রহ পরিচালনা করবেন। ক্ষত্রিয়গণ ও ব্রাহ্মণগণ মিলে রাজ্য শাসন করবেন এবং এদের অধীনস্থ থাকবেন সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর লোক। ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয় মিলে ভারতবর্ষে মোট জনসংখ্যার প্রায় কুড়ি শতাংশ বা ১/৫ ভাগ। এদের মধ্যে ব্রাহ্মান প্রায় ৪ শতাংশ ও ক্ষত্রিয় প্রায় ১৬ শতাংশ। এই ২০ শতাংশ মানুষ সমাজের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে পরিচালনা করবেন। তাদের পরিষেবা প্রদানে নিয়োজিত করবেন। ক্ষত্রিয়গণ বাহুবলী হওয়ায় ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হওয়ায় তারা রাজা জমিদার সামন্ত ইত্যাদি ভূমিকা পালন করতেন এবং প্রজা শাসন করতেন, ফলে তারা বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হন এবং প্রচুর ভূমির মালিকানা তাদের হাতে থাকে।

বৈশ্য: ব্রাহ্মন ও ক্ষত্রিদের পরেই বৈশ্যদের স্থান। এরা মূলত পশুপালক, ধাতব দ্রব্য উৎপাদনকারী, সম্পন্ন কৃষিজীবি ইত্যাদি এবং উক্ত কর্মে নিয়োজিত থাকেন। বৈশ্যগণ সমাজে মাঝারী অবস্থান পেয়ে থাকেন। এরা সমাজের উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের মধ্যেখানে অবস্থান করেন।

শূদ্রঃ মূলতঃ কৃষিজীবী সম্প্রদায় শূদ্রগণ। এরা সমাজে পরিষেবা মূলক কাজকর্ম প্রদানে নিয়োজিত। শূদ্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় জাঠ সম্প্রদায়, বিহারে ভূমিহার, অন্ধ্রপ্রদেশে রেড্ডি, পশ্চিমবঙ্গে মাহিষ্য ও কর্ণাটকে ভেল্লালা সম্প্রদায় ইত্যাদি।

নমশূদ্রঃ সমাজে যা অন্যরা করবেন না, নিকৃষ্টতম কাজ বলে বিবেচিত হয়, সেই কাজগুলো সমাজে নমশূ প্রদের জন্য পরে থাকে। তারা একসময় অস্পৃশ্য (Untouchables) হিসেবে পরিচিত হতেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশে চামার, পশ্চিমবঙ্গে চন্ডাল, গুজরাটে মেঘ, অন্ধ্রপ্রদেশে মাল, মহারাষ্ট্রে মাহার, তামিলনাড়ুতে আদি দ্রাবিড় ইত্যাদি সম্প্রদায়।

তফসিলি জাতি (Scheduled Caste)

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সাংবিধানিকভাবে ভারতের সংরক্ষণ নীতি চালু হয় জাতিগতভাবে পিছিয়ে পড়া জাতি উপজাতি নিয়ে। রাজনৈতিক তাগিদ এবং সামাজিক বৈষম্যের কারনে পরবর্তীকালে অধিকতর জাতি ও উপজাতি শ্রেণীতে সংরক্ষণএর আওতায় নিয়ে আসা হয়। কোন কোন জাতি তপশিলী জাতি ভুক্ত হবে তাতে রাজ্যভিত্তিক ভেদান্তর হয়ে থাকে। এরুপ জাতিভুক্ত মানুষজন বসতিস্থান হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত জনসংখ্যা হলেও বহুক্ষেত্রে তারা জেলা, রাজ্য ছাড়িয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন আর্থসামাজিক কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তফসিলি জাতিভুক্ত জনসংখ্যা বণ্টন দেশে বিভিন্ন সময়ের জনগণনায় ধরা পড়েছে।

জাতভিত্তিক জনসংখ্যা বন্টন ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান সাম্প্রতিককালে তৈরি হয় না। সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান বিস্তারিত ভাবে প্রস্তুত হয়েছিল প্রায় নয় দশক আগে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ১৯৩১এর জনগণনায়। উক্ত জনগণনায় ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ এবং মুসলিম জনসংখ্যা এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন জাতি সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা গণনা করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন ভারতে জনসংখ্যার অভূতপূর্ব বিচলন ঘটে সীমান্ত অতিক্রম করে। পৌরায়ন ও শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গেও এই বিচলন বৃদ্ধি পায়। জাতপাত ভিত্তিক শোষনও আলগা হতে থাকে। শিক্ষার অগ্রগতি ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়ে মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন অনেক বেশি।

ভারতে জাত ব্যবস্থা বহু প্রাচীন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে জাত ভিত্তিক বিভাগ বহু প্রচলিত। বৈদিক যুগে চতুঃবর্ণ সৃষ্টি হয়েছিল কর্ম বিভাজনের উদ্দেশ্যে। ব্রাহ্মণ ধর্ম চর্চার জন্য, ক্ষত্রিয় নাগরিক সুরক্ষার দায়িত্ব, বৈশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পন্ন কৃষি কাজের জন্য, শূদ্র কৃষি ও সেবামূলক কাজের জন্য, এভাবে বিভাজন হয়। পরবর্তীকালে এই জাতি বিভাজনের সুযোগ নিয়ে উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় ও নিম্নবর্ণ শূদ্র সৃষ্টি করা হয়। বৈশ্যগণ এর মাঝামাঝি থাকেন। নমশূদ্রগণ সবার শেষে থাকেন আউটকাস্ট বা বহিঃজাতি হিসেবে এই জাতিভেদের বাইরে যারা, যেসব কাজ উচ্চ ও নিম্নবর্ণের মানুষরা করবেন না সেই কাজগুলো তাদেরকে করতে হয়। এভাবে উচ্চবর্ণ কর্তৃক নিম্নবর্ণ ও অতি নিম্নবর্ণকে শোষনের সুযোগ তৈরী হয়। সৃষ্টি হয় জাতপাত ভিত্তিক সংঘাত। বসতি বিন্যাসেও এর প্রভাব পড়ে। আধুনিককালে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রাজনীতিও অনেক ক্ষেত্রে জাতপাত নির্ভর হয়ে পড়েছে। সাংবিধানিকভাবে প্রশাসনও জাতপাত নির্ভর সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছেন। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক মাপকাঠি বেধে দেওয়া হয়নি, তাই জাতিগতভাবে নিম্নবর্গের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য, যে বৈষম্য একদা প্রবল ছিল জাতিগত ভাবে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণ মানুষের মধ্যে।

তফসিলি জাতিভুক্ত জনসংখ্যা সর্বাধিক রয়েছে উত্তর প্রদেশে, ৩ কোটি ৫১ লক্ষ্য ৩৮ হাজার, যা ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ২১.১৫ শতাংশ; দ্বিতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গ, ১ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫৩ হাজার জনসংখ্যা, যা এই রাজ্যের জনসংখ্যার ২৩.০২ শতাংশ; তৃতীয় বিহার ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৯ হাজার যা এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৫.৭২ শতাংশ; চতুর্থ স্থানে অন্ধ্রপ্রদেশ ১ কোটি ৩০ লক্ষ্য ৩৯ হাজার, জনসংখ্যার হার এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৬.১৯ শতাংশ; পঞ্চম স্থানে তামিলনাড়ু, জনসংখ্যা ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৫৮ হাজার যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ, ষষ্ঠ মহারাষ্ট্র, ৯৮লক্ষ ৮২ হাজার জনসংখ্যা তফসিলি জাতিভুক্ত। যা রাজ্যের ১০.৩০ শতাংশ। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রাজ্যের মধ্যে রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, ওড়িষা ও হরিয়ানা ইত্যাদি।

ভারতবর্ষের মোট তফসিলি জাতিভুক্ত জনসংখ্যা ২০০১ সালের আদমসুমারী অনুযায়ী ১৬ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৬ হাজার।

তফসিলি উপজাতি (Scheduled Tribe):

উপজাতি জনসংখ্যা ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে আছে। প্রায় প্রতি রাজ্যেই কম-বেশি উপজাতি জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে উত্তর-পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে তফসিলি উপজাতি জনসংখ্যা মোট রাজ্যের জনসংখ্যায় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

ভারতবর্ষে মোট তফসিলি উপজাতিভুক্ত জনসংখ্যা ২০১১ সেন্সাস অনুযায়ী ১০ কোটি ৪৫ লক্ষ ৪৬ হাজার। এর মধ্যে সর্বাধিক উপজাতি জনসংখ্যা রয়েছে মধ্যপ্রদেশে, ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ১০ হাজার, যা ঐ রাজ্যের জনসংখ্যার ২০.২৭ শতাশ। মহারাষ্ট্রে রয়েছেন ১ কোটি ০৫ লক্ষ ১০ হাজার, যা এই রাজ্যের জনসংখ্যার ৮.৮৫ শতাংশ। ওড়িশা তৃতীয় স্থানে, ৯৫ লক্ষ ৯১ হাজার জনসংখ্যা উপজাতি শ্রেণীভুক্ত, যা এই রাজ্যের জনসংখ্যার ২২.১৩ শতাংশ। চতুর্থ স্থানে রাজস্থান, ৯২ লক্ষ ৩৯ হাজার তফসিলি উপজাতিভুক্ত জনসংখ্যা, যা রাজ্যের জনসংখ্যার ১২.৫২ শতাংশ। গুজরাটে ৮৯ লক্ষ ১৭ হাজার তফসিলি উপজাতিভুক্ত, যা এই রাজ্যের জনসংখ তার ১৪.৭৬ শতাংশ। ব্যাড়খন্ড ৮৬ লক্ষ ৪৫ হাজার উপজাতি জনসংখ্যা, যা রাজ্যের ২৬.৩০ শতাংশ। ছত্তিশগড় ৭৮ লক্ষ ২৩ হাজার উপজাতির জনসংখ্যা, যা রাজ্যের ৩১.৭৬ শতাংশ। এছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, জম্মু ও কাশ্মীর, অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে প্রচুর উপজাতি জনসংখ্যা রয়েছে।

রাজ্যের জনসংখ্যার অধিকাংশই উপজাতি, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকা মিলিয়ে এরূপ অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে লাক্ষাদ্বীপ, যদিও উপজাতি জনসংখ্যা ৬০ হাজার মাত্র, তবে তা মোট জনসংখ্যার ৯৪.৫১ শতাংশ (২০০১)। মিজোরামে উপজাতি জনসংখ্যা ৮ লক্ষ ৩৯ হাজার, যা এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যা ৯৪.৪৬ শতাংশ। নাগাল্যন্ডে ১৭ লক্ষ ৭৪ হাজার উপজাতি জনসংখ্যা, যা রাজ্যের জনসংখ্যার ৮৯.১৫ শতাংশ। মেঘালয়ে উপজাতি জনসংখ্যা ১৯ লক্ষ ৯৩ হাজার, যা রাজ্যের জনসংখ্যার ৮৫.৯৪ শতাংশ। দাদরা ও নগর হাভেলি, এই কেন্দ্রশাসিত এলাকার উপজাতি জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৩৭ হাজার, যা এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৬২.২৪ শতাংশ। অরুণাচলপ্রদেশে মোট উপজাতি জনসংখ্যা ৭ লক্ষ ৫ হাজার, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৬৪.২২ শতাংশ।

এই তফসিলি উপজাতি জনশিক্ষার বাইরেও রয়েছেন অঘোষিত উপজাতি (Denotified Tribe) অর্থাৎ এই উপজাতি জনসংখ্যা সরকার ঘোষিত তফসিলি উপজাতি জনসংখ্যা সূচীভুক্ত নন। সরকারি সংরক্ষণ ব্যবস্থার সুবিধা পান কেবল ঘোষিত উপজাতি জনসংখ্যা। এর বাইরেও রয়েছেন অনেক উপজাতি যারা সরকারী সংরক্ষণের সুবিধা পান নি, এজন্য তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সংবিধান প্রনেতাগণ স্বাধীনতার পরবর্তী ২৫ বৎসরকাল সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে রাজনৈতিক ও সামাজিক বাধ্যবাধকতা এই ব্যবস্থাকে বহমান রেখেছে।

যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক মাপকাঠি বেধে দেওয়া হয়নি, তাই জাতিগতভাবে নিম্নবর্গের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য, যে বৈষম্য একদা প্রবল ছিল জাতিগত ভাবে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণ মানুষের মধ্যে। সমগ্র ব্যবস্থাটির পূনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01