ছেদবিন্দু বিশ্লেষণ (Breaking Point Analysis)
যেকোনও ক্রিয়ামূলক ক্ষেত্রের আঞ্চলিককরণ তথা, সীমানা নির্ধারণ প্রসঙ্গে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ছেদবিন্দু বা ভগ্নবিন্দু বিশ্লেষণ পদ্ধতি। সাধারণত, যে পদ্ধতিতে কোন বৃহতায়তন শহর বা নগরের প্রভাব ক্ষেত্রের সীমানা নির্ধারণ করা হয়, সেটিই ছেদবিন্দু (Breaking Point) নামে পরিচিত। আসলে, এখানে নির্দিষ্ট একটি নগরীয় ক্ষেত্রে পরস্পর সহযোগী সম্পর্কে লিপ্ত বিভিন্ন কর্মকান্ড অথবা, বিভিন্ন পরিসেবার বণ্টন ভিত্তিক আপেক্ষিক ক্ষমতা (Relative ability) এবং সম্ভাবনা (Posibility) বিচার করে, তাদের ক্রিয়াশীল প্রভাব ক্ষেত্রগুলিকে কতকগুলি ছেদবিন্দু আকারে উপস্থাপন করে খুব সহজেই আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
এপ্রসঙ্গে, ডব্লিউ. জে. রেইলি (W. J. Railly) 1931 খ্রিস্টাব্দে কোনো কেন্দ্রীয় বাণিজ্য এলাকা নির্ধারণের জন্য সেখানকার পরিসেবা ভিত্তিক প্রকৃত প্রবাহের (Actual Flow) পরিবর্তে দুটি পরিসেবা কেন্দ্রের আকর্ষণের তাত্ত্বিক পরিমাপকে (a theoretical measure of attraction)-কে অধিক পরিমাণে গুরুত্ব দিয়েছেন।
উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব (Objective and Importance):
1. বাহ্যিক যে কোনও অঞ্চলের সীমানাকে সহজে এবং খুব কম সময়ে চিহ্নিত করা।
২. একটি বড়ো শহর কোন দিকে বিস্তৃত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও শহরটি কোন দিকে বিস্তৃত হতে পারে তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া।
একটি নগর বা অন্য কোনও বাণিজ্য এলাকার প্রভাব বলয় চিহ্নিত করা।
4. মূল নগর অথবা মূল বাণিজ্য কেন্দ্রের আশেপাশের অঞ্চলগুলির মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের বিষয়টিকে উপস্থাপন করা প্রভৃতি।
পদ্ধতিতত্ত্ব(Methodology)
ডব্লিউ. জে. রেইলি (W. J. Railly)-এর মতে যে শহর যত বড় হবে সেই শহরের বাণিজ্য এলাকা ততবেশি হবে। একইভাবে উক্ত ধারণা অনুযায়ী Sphere of Influence-এর মাত্রা কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে বাইরের দিকে তত বেশি থাকবে। অপরপক্ষে যদি দুটি শহরের আয়তন প্রায় একই প্রকার হয় (Two cities are equal in size) তাহলে সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য এলাকার সীমানা নির্ধারণ হবে দুটি শহরের মধ্যবর্তী স্থানে শহরগুলি যদি অসম প্রকৃতির হয় (in terms of size) তাহলে সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য এলাকার সীমানা নির্ধারণ হবে দুটি শহরের মধ্যবর্তী স্থানের দ্বারা কিন্তু শহরগুলি যদি অসম প্রকৃতি হয় (in terms of population, Economic Activity, Amenities and Facilities, better opportunities) সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য এলাকার যে অংশে ছোট শহরের বাণিজ্য এলাকা সাথে মিলিত হবে সেই সীমানা কে Breaking Point (BP) বলা হবে।
1931 সালে ডব্লিউ. জে. রেইলি (W. J.Railly) Law of Retail Gravitation-এর যে ধারণা প্রদান করেছেন তাঁর মতে দুটি শহরের মধ্যে ব্রেকিং পয়েন্ট বের করার জন্য প্রদত্ত সূত্রটি হল।
(Ba)/(Bb) = [(Pa)/(Pb)] * [(Db)/(Da)] ^ 2
B * = Quantity of Trade being made by Town a with middle place (a শহরের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যাবসার পরিমাণ।
B_{0} = Quantity of Trade being made by Town b with middle place (b শহরের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যাবসার পরিমাণ)
P * = Population of Town a (a শহরের জনসংখ্যা)
P_{y} = Population of Town b (b শহরের জনসংখ্যা)
D_{x} = Distance from intermediate place to Town a (পাশাপাশি অবস্থিত দুটি শহরের মধ্যবর্তী অংশ থেকে ৪ শহরের দূরত্ব)
D_{n} = Distance from intermediate place to Town a। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি শহরের মধ্যবর্তী অংশ থেকে ৮ শহরের দূরত্ব)
পরবর্তীকালে, C. P. Converse (1949) রেইলি প্রদত্ত ধারণা কিছুটা পরিবর্তন করে, আরও সরলীকৃত রূপে ছেদবিন্দু বিশ্লেষণের ধারণা প্রদান করেন। উক্ত ধারণা অনুযায়ী এবং ৮ শহরের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব যথাক্রমে D * এবং D_{y}।
ছেদবিন্দুর অংকন পদ্ধতি (Method of drawing Intersection Points) :
1. একটি প্রদত্ত মানচিত্রের মধ্যে একটি মুখ্য শহরের অবস্থান (Central Location) এবং তার চারিপাশে কতকগুলো পৌণ শহরের অবস্থান (Location of Secondary Town) এবং সংযোগকারী রেখা (Connection Line) দেওয়া থাকবে।
2. উপরে উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসারে, ব্রেকিং পয়েন্টার (The value of Breaking Point) মান প্রথমে কিলোমিটারে বের করে নিতে হবে (Equation-1 এবং Table-11)।
3. পরবর্তী সময়ে মুখ্য শহর থেকে প্রতিটি গৌণ শহরের ব্রেকিং পয়েন্টের মান সেন্টিমিটার স্কেলে রূপান্তর করে নিতে হবে (Table-11)।
4. এরপর রোটামিটারের সাহায্যে, মুখ্য শহর থেকে গৌণ শহরের দিকে ব্রেকিং পয়েন্টের মান যত সেন্টিমিটার এসেছে (উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মাদুরাই থেকে সালেমের ব্রেকিং পয়েন্ট এর মান 3.80 (D.) সেন্টিমিটার তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
5. একইভাবে, প্রতিটি মুখ্য শহর থেকে অন্যান্য গৌণ শহরের দিকে ব্রেকিং পয়েন্ট চিহ্নিত করে নিতে হবে।
6. তারপর প্রতিটি ব্রেকিং পয়েন্টকে Straight Line দ্বারা যুক্ত করলে আমরা মুখ্য শহরটির প্রভাবিত এলাকা বা ক্রিয়ামূলক অঞ্চলটিকে (Functional Region) চিহ্নিত করতে পারব।
1981 এবং 2011 সালের মধ্যে ছেদবিন্দু বিশ্লেষণ সংক্রান্ত তুলনামূলক আলোচনা(Comparative study between in 1981 and 2011)
বর্তমানে প্রতিটি ছোটো শহর তার অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিকাঠামোগত উন্নয়নকে হাতিয়ার করে অতি দ্রুততার সাথে সমগ্র অঞ্চলের একটি সার্বিক বিকাশ ঘটাতে বদ্ধপরিকর। ঠিক সেই কারণের জন্য, উক্ত শহরগুলিতে Medical Amenities and Facilities, Educational Development, Market Facility, শিল্প-কলকারখানা, কাজের সুযোগ, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটার ফলে উক্ত শহরের জনসংখ্যার ধারণ ক্ষমতা (Capacity of Population in terms of Man) অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
1981 খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী সালেমের জনসংখ্যা 3,61,177 থেকে বেড়ে 2011 খ্রিস্টাব্দে বেড়ে দাঁড়িয়েছে 34,80,008 জন। ঠিক সেই কারণে, 1981 খ্রিস্টাব্দের তথ্যের পরিপেক্ষিতে Break of Bulk Point-গুলি ছোটো শহরের কাছে অবস্থান করতো, তবে এখন তা ছোটো শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করছে। কারণ হিসেবে বলা যায়, মানুষ দূরের বড়ো শহরে যেসব সুযোগ-সুবিধা উপলব্ধ করত, ছোটো শহরে এখন সেই সমস্ত সুযোগ-সুবিধার বিকাশ ঘটেছে। যার সুবাদে ছোটো শহরের প্রভাবিত অঞ্চল (influencing area of secondary town) উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টেবিল নং 11 এবং চিত্র নং 7 থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, 1981 খ্রিস্টাব্দে মাদুরাইয়ের প্রভাবিত অঞ্চল হিসেবে আমরা যে চিত্রটি পেয়েছি, 2011 খ্রিস্টাব্দে তার মধ্যে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। মাদুরাই ও সালেমের মধ্যে ব্রেক অফ বাল্ক পয়েন্ট বা ব্রেকিং পয়েন্ট-এর পরিবর্তন লক্ষণীয়। মাদুরাই থেকে সালেমের দিকে 1981 খ্রিস্টাব্দে তথ্য অনুযায়ী ব্রেকিং পয়েন্ট ছিল B,, কিন্তু 2011 খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি তার কিছুটা পশ্চাদপসরণ হয়ে B, তে অবস্থান করছে। কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে, সালেমের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও অন্যান্য সুযোগ- সুবিধার ক্রমবিকাশের ফল মাদুরাই-এর প্রতি মানুষের সংযোগ কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ, মানুষ অনেক জেতে সালেম থেকে মাদুরাই না গিয়ে সালেমের মধ্যে সেই চাহিদা পূরণ করছে। বাকি শহরগুলির ক্ষেত্রে একই ধরনের পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুতরাং বলা যেতে পারে, The area of influence of a particular City/Town Metropolitan City depends on higher order series
সমালোচনা (Criticism):
1. জনসংখ্যা কেবলমাত্র Gravitational Pull Identification-এর একমাত্র এবং অন্যতম কারণ হতে পারে না, কারণ প্রতিটি মানুষের পছন্দ, ইচ্ছা, অর্থনৈতিক ক্ষমতা ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে।
2. মহাকর্ষ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে রেইলি যে ক্রিয়ামূলক অঞ্চল এর সীমানা নির্ধারণের কথা বলেছেন, যেখানে তিনি প্রতিটি পয়েন্টেকে Straight Line এর মাধ্যমে সংযোগ করার কথা বলেছেন, তা অনেক ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারে।