ভট্টাচার্য ও ভট্টাচার্যের শ্রেণিবিভাগ:
-সমাজবিজ্ঞানী বারজেলের পৌর বসতির শ্রেণিবিভাগ অনুসরণ করে ভট্টাচার্য এবং ভট্টাচার্য (1977 খ্রিঃ) ভারতের শহরগুলিকে ১টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এগুলি হল-
(৫) অর্থনৈতিক কেন্দ্র (ডিগবয়, ঝরিয়া)
জনসংখ্যা ও বসতি ভূগোল
(ii) সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (বারাণসী, বৃন্দাবন, মথুরা),
(iii) রাজনৈতিক কেন্দ্র (দিল্লি, গোয়ালিওর),
(iv) বিনোদনমূলক কেন্দ্র (দার্জিলিং, পুরী),
(৮) আসান শহর (দমদম),
(গ) প্রতীকমূলক নগর (Symbolic city).
(vii) বহুবিধ বহুমুখী নগর (পাটনা, কলকাতা)।
. আয়তনের ভিত্তিতে শহরের শ্রেণিবিভাগ(Classification of towns on the basis of size) :
জনসংখ্যার ভিত্তিতে শহরের শ্রেণিবিভাগ করতে গিয়ে অনেকে শহরকে এটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে কোনো শহর বসতিতে মোট জনসংখ্যা এবং জনঘনত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মোট জনসংখ্যা এবং জনঘনত্বের ভিত্তিতে ছোটো শহর, মাঝারি শহর, নগর, মহানগর- এই চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
(1) ছোটো শহর যেসব শহরের জনসংখ্যা 50000-এর কম
(ii) মাঝারি শহর যেসব শহরের জনসংখ্যা 50000-99999 জন।
(ii) নগর : যেসব শহরের জনসংখ্যা 100000 জন।
(iv) মহানগর : যেসব শহরের জনসংখ্যা 10,00000 জন।
. ভারতীয় শহরের আদমশুমারি ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ (Classification of Indian Cities by Census Organisation) :
1981 খ্রি: আদমশুমারি অনুসারে শহর হল এমন এক বসতি যার জনসংখ্যা 5000 জন হবে, যেখানে প্রতি বর্গ কিমিতে 400 জন লোক বসবাস করে এবং সেখানকার মোট জনসংখ্যার 75% কৃষিছাড়া অন্য কোনো অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে নিজেদের নিয়োজিত করবে।
2001 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় 28% (২৮%) মানুষ শহরবাসী। প্রায় 28.54 কোটি মানুষ শহরে বসবাস করেন।
মহানগর: ভারতে 10 লক্ষেরও অধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহরকে মহানগর বলা হয়। 2001 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে ভারতে 39টি মহানগর আছে। এই মহানগরগুলি হল:
(i) বৃহত্তর মুম্বাই, (ii) বৃহত্তর কলিকাতা, (iii) দিল্লি, (iv) চেন্নাই, (v) বেঙ্গালুরু, (vi) হায়দ্রাবাদ, (vii) আমেদাবাদ, (viii) পুনে, (ix) সুরাট, (x) কানপুর, (xi) জয়পুর, (xii) লখনউ, (xiii) নাগপুর, (xiv) পাটনা, (xv) ইন্দোর, (xvi) ভাদোদরা, (xvii) ভোপাল, (xvii) কোয়েম্বাটুর, (xix) লুধিয়ানা, (xx) কোচি, (xxi) বিশাখাপত্তনম, (xxii) আগ্রা, (xxiii) থানে, (xxiv) বারাণসী, (xxv) মাদুরাই, (xxvi) কল্যাণ-দোম্বিন্ডালি, (xxvii) মীরাট, (xxviii) নাসিক, (xxix) জব্বলপুর, (xxx) জামশেদপুর, (xxxi) আসানসোল, (xxxii) ধানবাদ, (xxxiii) ফরিদাবাদ, (xxxiv) এলাহাবাদ, (xxxv) অমৃতসর, (xxxvi) বিজয়ওয়াড়া, (xxxvii) হাওড়া (xxxviii) পিস্প্রি-চিন্দুয়া (xxxix) রাজকোট।
ভারতের জনগণনাবিভাগ জনসংখ্যার পরিমাণের ভিত্তিতে নিম্নলিখিতভাগে ভারতীয় শহরের শ্রেণিবিভাগ করেছেন।
1. প্রথম শ্রেণির শহর জনসংখ্যা । লক্ষের বেশি।
2. দ্বিতীয় শ্রেণির শহর জনসংখ্যা 50000 99999
3. তৃতীয় শ্রেণির শহর জনসংখ্যা 20000 499991
4. চতুর্থ শ্রেণির শহর জনসংখ্যা 10000 19999
কেন্দ্রীয় স্থান তত্ত্ব (Central Place Theory):
ভূমিকা (Introduction): ভূপৃষ্ঠে বসতি বিস্তারের ধরনের (বিচ্ছিন্ন বসতি, গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি) সঙ্গে ভূমিরূপের যে সম্পর্ক তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্থান তত্ত্বের (The Theory of Central Place) উদ্ভব ঘটে। মানব বসতি অত্যন্ত গতিশীল প্রকৃতির। গ্রামীণ বসতি থেকে শহর, শহর থেকে নগর এবং নগর থেকে মহানগরের রূপান্তরের মাধ্যমে বসতির বিবর্তন ঘটেছে। 1933 খ্রিস্টাব্দে Walter Christeller বসতিগুলির অবস্থান ও বিস্তারের ধরন hierachy সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেন। পরবর্তীকালে এই তত্ত্বকে আরও বাস্তবসম্মত রূপ দেন August Losch.
ক্রিস্টেলারের কেন্দ্রীয় স্থান তত্ত্ব:
1933 খ্রিঃ জার্মান ভৌগোলিক ক্রিস্টেলার তাঁর লেখা 'Central Places in Southern Germany' -তে কেন্দ্রীয় স্থান তত্ত্বের ব্যাখ্যা করেছেন।
ক্রিস্টেলার তাঁর তত্ত্বের ব্যাখ্যা করার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলি আরোপ করেছেন-
(৫) ভূপ্রকৃতি, মাটি, জলবায়ু, সম্পদের বণ্টন প্রভৃতি দিক দিয়ে অঞ্চলটি সমধর্মী হবে।
(ii) ভূপৃষ্ঠে জনসংখ্যার বণ্টন সমভাবে হবে।
(iii) কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে চারদিকে যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা একই ধরনের হবে।
(iv) কেবলমাত্র একই ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা চালু থাকবে এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে চারদিকে একই অনুপাতে পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
(৮) সমতল ভূপৃষ্ঠে কেন্দ্রীয় স্থান (Central Place) অবস্থিত হবে। এই স্থানে বিভিন্ন জিনিসপত্র (goods), পরিসেবা এবং প্রশাসনিক কার্য প্রভৃতির প্রাপ্তি ঘটে।
(vi) ক্রেতাগণ সবচেয়ে কমদূরত্ব ভ্রমণ করে সমস্ত ধরনের পরিসেবা পাবে।
(vii) সমস্ত ক্রেতাগণের প্রায় একই আয় হবে এবং তাদের চাহিদা একই রকমের হবে।
(viii) জিনিসপত্রের জোগানদাতা অর্থনৈতিক মানুষের (Economic man) মতো আচরণ করবে। তাঁরা কেন্দ্রীয় অবস্থানে সবচেয়ে বড়ো বাজার তৈরি করবে এবং সর্বোচ্চ লাভ করবে।
(ix) The Central Place Hierachy will act as close system, অর্থাৎ, ন্যূনতম সংখ্যক কেন্দ্রীয় স্থান এই আবদ্ধ প্রণালীর মধ্যে কার্য করবে।
(x) একটি সুবিন্যস্ত জনগোষ্ঠী বাস করবে এবং প্রস্তাবিত অঞ্চলে এই সমস্ত শর্তগুলি ছাড়াও চারটি নীতির (Principle) উল্লেখ তিনি করেছেন।
(c) Threshold এবং
Centrality (b) Complementary Area
(d) Range
(a) কেন্দ্রীয়তা (Centrality): কেন্দ্রীয় স্থান বলতে এমন এক অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের কর্মপরিধি লক্ষ করা যায় এবং পরিসেবা খুব উন্নতমানের হয়। বিভিন্ন জিনিসপত্রের জোগানের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকবে।
(b) পরিপূরক অজ্জ্বল (Complemntary Area): কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে চারদিকে যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে এবং যেখানে ছোটো ছোটো বসতি গড়ে উঠেছে সেই এলাকাকে বোঝায়।
(c) Threshold Population: Threshold Population বলতে এমন একটি ন্যূনতম জনসংখ্যাকে বোঝায় যা কোনো একটি শহরের ন্যূনতম পরিসেবা পাওয়ার দরকার হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একজন বোনডাকে প্রতিমাসে ন্যূনতম কিছু সংখ্যক লোকের পরিসেবা দিতে হবে যার ফলে সে দোকান ভাড়া দিতে পারে এবং তার পরেও সে সমস্ত খরচ চালাতে এবং কর্মচারীদের বেতন দেবে।
(d) The Range of Good: Range of Good বলতে বোঝায় সর্বোচ্চ দূরত্বকে যা একজন ক্রেতা তার জিনিসপত্র কেনা বা কোনো পরিসেবা পাওয়ার জন্য পরিভ্রমণ করতে তৈরি থাকে। কেন্দ্রীয় অবস্থান থেকে এই স্থান যদি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত হয় তাহলে পরিবহণের জন্য সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় হয়। একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের পর মানুষজন কোনো কিছু কিনতে সক্ষম হয় না। কারণ পরিবহণ ব্যয়ে সমস্ত অর্থ খরচ হয়ে যায়।
• কেন্দ্রীয় স্থান তত্ত্বের ধারণা (Concept of Central Place Theory): দক্ষিণ জার্মানির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় স্থান সম্পর্কে গবেষণা করে ক্রিস্টেলার তাঁর তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর মতে কোনো বসতির একেবারে ক্ষুদ্রতম একক থেকে চারপাশে বিস্তার সমভাবে হয় এবং এর আকৃতি হয় ষড়ভুজ বিশিষ্ট (Hexagonal pattern)|
• বসতির আনুক্রমিকতা (Hierachy of Settlements): বসতির বণ্টন প্রসঙ্গে ক্রিস্টেলার তাঁর ত্বকে তাত্ত্বিক ধারা হিসেবে ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের বসতির পারস্পরিক দূরত্ব, জনসংখ্যা, প্রভাব বলয়ের বিস্তার, বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর প্রতি নির্দেশ করেন।
ক্রিস্টেলার তাঁর তত্ত্বে প্রাথমিক স্তরে যে বসতির শনাক্ত করেন, সেটি জ্বল Market Hamlet বা বাজার বসতি। এই বসতির জনসংখ্যা হবে 800 জন। এর সেবাকেন্দ্রের জনসংখ্যা হবে 2700 জন। সমমানের আরেকটি বাজার শহর বা সেবাকেন্দ্রের অবস্থান হবে 7 কিমি দূরত্বে। এর প্রভাব বলয়ের পরিমাণ হবে 45 বর্গ কিমি।
বাজার বসতির পরবর্তী স্তর বা বৃহৎগ্রুপকে তিনি শহর কেন্দ্র (Township Centre) নামে অভিহিত করেন। 1500 জনসংখ্যা বিশিষ্ট এধরনের শহরগুলি একটি অপরটি থেকে 12 কিমি দূরত্বে অবস্থান করবে। এর প্রভাব বলয়ের বিস্তার হবে 135 বর্গকিমি এবং এর জনসংখ্যা হবে 8100 জন।
প্রত্যেকটি বড়ো বসতির ষড়ভুজের প্রত্যেক কোণায় ছোটো বসতির বাজার বা শহর গড়ে ওঠে। এভাবে মূলশহর ও ছোটোবসতির শহরগুলি নিয়ে ক্রমশ বসতিগুলির বিবর্তন ঘটে।
Walter Christeller বসতিগুলির আনুক্রমিতার পাশাপাশি সেবাকেন্দ্র কিংবা বসতিগুলির ব্যাপ্তিস্থানকে বুনেটের (Texture) তিনটি ধারার উল্লেখ করেন।
এই তিনটি ধারা হল
(৫) বাজার অর্থনীতির প্রাধান্য নিয়ে গঠিত বুনেট হল k₁।
(b) পরিবহণ ব্যবস্থা প্রতিফলকারী বুনেট হল ।
(c) প্রশাসনিক অনুকূল বুনেট হল k,।
সমালোচনা (Criticisms): ক্রিস্টেলারের কেন্দ্রীয় স্থান তত্ত্বের বিভিন্ন বিষয় সমালোচিত হয়েছে।
(1) পরবর্তীকালে গবেষণায় দেখা গেছে যে জনবসতিগুলি নির্দিষ্ট কোনো Pattern-এ বিস্তৃত হয়নি এমনকি এগুলি যেমন সমভাবে বণ্টিত হয়নি তেমনি Settlement-গুলি random প্রকৃতির বিস্তৃত হয়েছে।
(2) বসতির বিস্তার সর্বদা ষড়ভুজ আকারে (hexagonal) হয় না। বাস্তব জগতে এটা প্রায় অসম্ভব।
(3) কোনো বসতির কোনো কেন্দ্র থেকে চারদিকে সমভাবে তার প্রভাবিত অঞ্চল তৈরি হতে পারে না।
(4) এই তত্ত্বে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বহুমুখী পরিবর্তের কোনো ব্যাখ্যা নেই।
(5) অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো Lower Order Centre কিছু কাজ পরিচালনা করে যা higher mire-এ দেখা যায়।
অনেক সমালোচনা থাকলেও তাঁর তত্ত্বের কিছু পরিমার্জন করে এখনও এই তত্ত্বকে বসতির বিন্যাস এ বিস্তারের ব্যাখ্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে.