welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

কৃষির সম্ভাবনা

 কৃষির সম্ভাবনা


তবে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার অবশ্য শুরু হয়েছে।সরকার থেকে ব্যাঙ্ক ও সমবায় সংস্থাগুলির মাধ্যমে ঋণদান ও কৃষি-প্রযুক্তি সরবরাহ সুনিশ্চিত করবার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। অর্ধেক কৃষিজমি সেচের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সেচ ব্যবস্থা মুখ্যতঃ দীঘি ও পুস্করিণী থেকে হয়। নদী থেকে জল তুলে এবং খালের সাহায্যে সেচ সেবিত জমির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করবার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন বীজ-খামার থেকে কৃষকদের উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার ও বন্টনের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে এবং এজন্য

প্রয়োগ-কৌশল শিক্ষণ ও ঋনদানের ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

পশুপালন (Animal Husbandry): গো পালন প্রধান। গবাদিপশু ছাড়াও ছাগল, ভেড়া, শূকর ও মুরগী এই জেলায় প্রতিপালন করা হয়। পুরুলিয়া থানার খাত্রায় একটি সরকারী পোলট্রি খামার রয়েছে। এছাড়া অনেকগুলি ছোটো ছোটো খামারে ডিম ও মাংসের জন্য মুরগী পালন করা হয়। প্রধানতঃ দুগ্ধের প্রয়োজনে ও জমিতে লাঙল দেওয়ার জন্য গবাদিপশু পালন করা হয়। সংখ্যাধিক্যে গরুর পরেই জেলায় ছাগলের স্থান। কারণ ছাগল আর্দ্র এবং উষ্ণ, শুদ্ধ, রুক্ষ আবহাওয়া দুই-ই সহ্য করতে পারে। কৃষকদের আর্থিক সংলঙ্গতি থাকলে পশুপালন ব্যাপক প্রসার লাভ করতে পারত। সরকারী সহায়তা পেলে পশুপালনের উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির শিল্প-শহরাঞ্চলে পশুজাত দ্রব্য বিক্রয় করে কৃষিজীবী আদিবাসী ও অভাবক্লিষ্ট গ্রামীণ জনসাধারণ তাদের দুর্দশা কিছুটা দূর করিতে সক্ষম হবেন।

খনিজসম্পদ (Mineral Resources):

খনিজ দ্রব্যের বৈচিত্রে ও ব্যাপকতায় জঙ্গল মহলের অন্তর্গত পুরুলিয়া জেলার স্থান পশ্চিমবঙ্গে সর্বাগ্রে। বিভিন্ন প্রকার খনিজ দ্রব্যের মধ্যে চায়না ক্লে বা কেওলিন (Chaina clay), কয়লা, তাম্র, ফেস্পার, ফ্লুয়োরাইট, চুনাপাথর ও কোয়াটার্জ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাণিজ্যিক গুরুত্ব না থাকলেও এ্যাসবেস্টস, ক্যালসাইট, ফায়ার ক্লে, গার্পেট, গ্রাফাইট, ইলমেনাইট, পাইরাইট, কায়ানাইট, ম্যাগনেটাইট, অভ্র, লৌহ-আকরিক ও কয়েক প্রকার তেজস্ক্রিয় খনিজ এই জেলায় রয়েছে।

চায়না কেঃ চায়না ক্লে দুইভাবে এই জেলায় পাওয়া যায়। একভাবে গ্রানাইটের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় ও অপরভাবে ফিলাইটের সঙ্গে। প্রথমোক্তটির উল্লেখযোগ্য সঞ্চয় রয়েছে রামকেনালি স্টেশনের নিকট খাত্রায়, আদ্রা থেকে ১৯ কি. মি. দূরে কালাঝারে ও কালাবনিতে, ঝালদার অদূরে মাহাতামারা এবং রাঙামাটিতে। ফিলাইটের সহিত কেওলিন সঞ্চিত আছে মানবাজার থেকে ৮ কি.মি. দূরে খড়িদুয়ারা, শিয়ালভাঙা, দানদুধি এবং তামাখানে। তবে এখানকার শিলা থেকে কেওলিন ২৫%-এর বেশী পাওয়া সম্ভব নয়। উত্তোলনযোগ্য চায়না ক্লে-র সঞ্চয় আছে রঘুনাথপুর থানার আমতারে, পুরুলিয়া, ঝালদা এবং বাঘমুন্ডি থানার কালাবনি, মাহাতামারা এবং শ্রাবন্দিতে। ধাতারার চায়না ক্লে কাগজ, রবার ও বয়ন-শিল্পে ব্যবহারোপযোগী। এখানকার সঞ্চয়ের পরিমাণ ৮.২ লক্ষ টন। কালাবনির চায়না ক্লে উৎকৃষ্ট ও মৃৎশিল্পে ব্যবহারোপযোগী।

কয়লা (Coal): কয়লা উত্তোলন পুরুলিয়ায় এখনও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উত্তোলন বলে পরিগণিত। সঞ্চয়ের পরিমাণ উচ্চশ্রেণীর ৪.৩ কোটি টন ও নিম্নশ্রেণীর ১.১ কোটি টন কয়লা। উৎপাদনশীল সব কয়টি কয়লা খনিই নেতুরিয়া থানায় অবস্থিত। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার খনন কার্যের ফলে রাণীগঞ্জ কয়লা-স্তরের পূ বদিকে বিস্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে দামোদরের দক্ষিণে নওয়াদার গোপালপুর, বরাচক, বরাধেমো ও দিশেরগড়ে ।

দিশেরগড়ের কয়লান্তর ৩ থেকে ১২.৪ মিটার পুরু এবং ১.৫৩ কোটি টন উচ্চশ্রেণীর কয়লা ৩.২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভূগর্ভের ৩৮১ হইতে ৬১০ মি. গভীরতায় বিস্তৃত রহিয়াছে। পাশ্ববর্তী এলাকায় অনুসন্ধান ব্যাপকতর করলে আরো সুবিস্তৃত কয়লা-ভরের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

তাজ (Copper): মানবাজার থানার তামাপুন-এ ৬ মিটার গভীর একটি প্রাচীন তামখনি উন্মোচিত হয়েছে, যার সঞ্চয়ের পরিমাণ ৮,০০০ টন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাতিরামগোরা ও কান্তাগোরায় তা উত্তোলিত হত। এই এলাকায় সরকারীভাবে পুনরায় অনুসন্ধান চালানো হয় এবং এটি একটি সম্ভবনাময় অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এখানকার প্রধান আকরিক হল চাল্কোপাইরাইট।

ফেম্পার-এর সঞ্চয় বহু স্থানে রয়েছে। এটি রেলপথে কলিকাতায় পাঠান হয়, যেখানে এটি ব্যবহারের পূর্বে মিহি পাউডারে পরিণত করা হয়।

ফুয়োরাইড ইস্পাত, এনামেল ও রাসায়নিক-শিল্পের একটি প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একটি বিরল খনিজ। পুরুলিয়ায় এটি ঝান্দা থানার অন্তর্গত বেলামু পাহাড়ে পাওয়া যায়। পূর্বাঞ্চলের ইস্পাত কেন্দ্রগুলিতে এর চাহিদা রয়েছে।

চুনাপাথর জেলার কতিপয় এলাকায়ই রয়েছে। ঝালদা থানা এলাকায় প্রায় ২ কোটি টন চুনাপাথর মজুত রয়েছে এবং এটি কাঁচামাল হিসাবে সিমেন্ট শিল্পের বিশেষ উপযাগেী। হংসপাথরে পূর্বেও চুনাপাথর উত্তোলিত হত। বর্তমানে এখানে প্রায় ১৩ লক্ষ টন চুনাপাথর সঞ্চিত আছে। এ ছাড়াও তামাথুন, গোবিন্দপুর, মিরগীচান্দায় ও কাস্তাগোরাড় অদূরে চুনাপাথর সঞ্চিত রয়েছে। জেলায় বার্ষিক চুনাপাথর উত্তোলনের পরিমাণ প্রায় ৩০,০০০ টন। উৎকৃষ্ট মানের জন্য এটি প্রধানতঃ চুন প্রস্তুতে ব্যবহহৃত হয়।

লৌহ-আকরিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্জয় রয়েছে পাঞ্চেত পাহাড়, ঝালদা, গৌরাঙ্গদিহ, সুপুর ও মানবাজার এলাকায়। এদের অধিকাংশই রয়েছে পেগমাটাইট ও কোয়ার্টজের শিরায় এবং এতে রয়েছে ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট প্রভৃতি। বাউচ-এ উচ্চশ্রেণীর হেমাটাইট এবং ঝালদায় কৃষ্ণ বর্ণের ম্যাগনেটাইট সঞ্ছিত রয়েছে। ম্যাঙ্গানীজ এর বণ্টন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়, তবে সিংভূম- সীমান্তে পাহাড়পুরের সওয়টি বাণিজ্যিক সম্ভবনাময়। বড়বাজারের উত্তরভাগে কাশীপুর, বলরামপুর ও জয়পুর থানা এলাকায় ক্ষুদ্রাকৃতি অভ্রের পাত রয়েছে। পূর্বে কয়েক স্থানে অভ্র উত্তোলিত হত। কৃষ্ণবর্ণের গ্রাফাইট সিস্ট আণবিক রি-এ্যাক্টরে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু পুরুলিয়ায় এটি এত মালিন্যযুক্ত যে, বর্তমান কারিগরীজ্ঞানে কার্যোপযোগী করা বিশেষ সম্ভব হচ্ছে না। এই খনিজ রয়েছে কালাঝোর, কাশীপুর ও গৌরাঙ্গদিহ, আদ্রার অদূরে বঙ্গোরা, দিমাডিহা ও পাঞ্চেত পাহাড় অঞ্চলে। শালবনিতে কায়ানাইট উত্তোলিত হয়। বলরামপুরে উৎকৃষ্ট কায়ানাইট ও সিলিমেনাইট অন্যান্য খনিজের সহিত মিশ্রিত অবস্থায় রয়েছে।

শিল্প (Industries)

জঙ্গল মহল মূলতঃ একটি কৃষিনির্ভর অঞ্চল। ক্ষুদ্র ও কুটিরজাত শিল্পই প্রধান। এদের মধ্যে আছে লাক্ষাশিল্প, তসর ও বস্ত্রবয়ন, পিতল ও কাসার দ্রব্য, ছুরি কাচি নির্মাণ, চর্মশিল্প, মৃৎশিল্প, বিড়ি প্রস্তুত ইত্যাদি। বৃহৎ কার্যক্রম বলতে কয়লা উত্তোলন ও কোল ওয়াশারি উল্লেখনীয়।

লাক্ষা, তসর-বস্ত্রবয়ন, পিতল-কাঁসা, ও ছুরি-কাচি নির্মাণ পুরুলিয়ার প্রাচীন ও ঐতিহ্যমন্ডিত শিল্প। একসময় এই সকল ক্ষুদ্র ও কুটার শিল্পে উদ্যোগীদের আর্থিক সংগতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যা এই সংগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের শতকরা ৮০ ভাগের অধিক লাক্ষা জঙ্গল মহলের পুরুলিয়া জেলা থেকে সংগৃহীত হয়। লাক্ষা মূলতঃ একটি রপ্তানী ভিত্তিক উৎপাদন হলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবর্তদ্রব্যের আবির্ভাবে এবং থাইল্যান্ডে লাক্ষার দাম অস্বাভাবিক পড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব এই শিল্পের উপর পড়েছে। যাই হোক, সুলভশ্রমিক ও লাক্ষা উৎপাদনের উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে। সময়োপযোগী ও পর্যাপ্ত সরকারী আনুকুলাই এই শিল্পের সার্থক উন্নতি ঘটাতে পারবে। লাক্ষা সংগৃহীত হয় সাধারণতঃ ঝাল্দা, বাঘমুন্ডি, মানবাজার, বান্দুয়ান, তুলিন, গরজাইপুর, রঘুনাথপুর ও তার পাশ্ববর্তী এলাকাসমূহে। লাক্ষাকীট প্রতিপালিত হয় কুসুম, পলাশ, কুল প্রভৃতি বৃক্ষে। বলরামপুর ও ঝালদায় গালার কারখানা রয়েছে।

তসর-বস্ত্রবয়নঃ একটি প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ শিল্প। রঘুনাথপুর পূর্বে এই শিল্পের মূল কেন্দ্র ছিল। কিন্তু বনভূ মির দ্রুত হ্রাসে গুটিপোকা সংগ্রহের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে অধিক দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করিতে হয় বলে এই শিল্পে পারিবারিক উদ্যোগের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে রঘুনাথপুরসহ কাশীপুর, পুরুলিয়া, দালদালি, চিতা, মানবাজার, বাঘমুন্ডি এবং আরসা থানা এলাকায় তসর বস্ত্র উৎপাদিত হচ্ছে। থান, মটকা, অঙ্গ, বাসন, বাস্তা, কেতা, পাগরী, শাড়ি ও ধুতী প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার তসরবস্ত্র প্রস্তুত হয়। সাধারণতঃ ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে তসরবস্ত্রের ব্যবহার ও বিক্রয় অধিক দেখা যায় এবং পুরুলিয়ার তসরবন্ত্রের বাজার পশ্চিমবঙ্গাসহ উত্তর-ভারতের অপর কয়েকটি রাজ্যেও রয়েছে।

এই জেলায় বয়ন-শিল্লিগণ যে তসর দ্বারা বস্ত্র প্রস্তুত করেন তার অধিকাংশই চক্রধরপুর, চাইবাসা, চাকুলিয়া, গিরিডি ও ময়ূরভঞ্জ থেকে সংগৃহীত হয়। তসরবস্ত্র শিল্পের উন্নতি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও এটি গুরুত্ব পাবে। এই শিল্প-শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি করে কাজের আকর্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং কাঁচামালের সরবাহ ও বিক্রয়-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ঐতিহ্যের সংলো উন্নততর প্রযুক্তির সংযোগ সাধনও শিল্পের বিকাশ ও উন্নতিতে সাহায্য করবে।

জঙ্গলমহলে হস্তচালিত তাঁতবস্ত্রবয়নও একটি প্রাচীন শিল্প। হস্তচালিত তাঁতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন বাড়বে এবং গুণমানও রক্ষিত হবে।

ছুরি-কাঁচি নির্মাণ-শিল্প: এই শিল্প জঙ্গল মহলে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বে ঝাল্লা ও পুরুলিয়ার এই শিল্পে সুনাম ছিল। ঝান্দার দক্ষ কারিগরেরা ইংল্যান্ডে প্রস্তুত অস্ত্র মেরামতি ও ঐ ধরণের অস্ত্র প্রস্তুত করতে পারতেন। বর্তমানে এই অঞ্চলে বহু শিল্প ইউনিট উৎপাদনে নিযুক্ত আছে। এখানে প্রস্তুত তুরপুণ (Auger), বাটালি (Chisel), ছুরি ইত্যাদির প্রচুর চাহিদা রয়েছে কলকাতা এবং অন্যান্য রাজ্যেও। এই শিল্পে কাঁচামাল হিসাবে প্রচুর লৌহের টুকরো (Scrap iron) ব্যবহৃত হয় যা কলকাতা শিল্পাঞ্চল ও টাটানগর থেকে সহজেই পাওয়া যায়। উৎকৃষ্ট দ্রব্য উৎপাদনের জন্য কার্বন ইস্পাত ব্যবহৃত হয়। ঐতিহ্যমন্ডিত একসময়ের গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্প বর্তমানে সরকারী সহায়তায় পুনরায় উন্নতি লাভ করছে।

পিতল ও কাঁসার দ্রব্য নির্মাণ কিছুকাল আগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং গৃহস্থালীতে পাত্র হিসাবে এর বিপুল ব্যবহারও ছিল। কিন্তু ইদানিং কালে অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও ইস্পাত দ্রব্য সুলভে পাওয়া যায়। পিতল ও কাসার মু ল্য বৃদ্ধির জন্য এদের ব্যবহার কমে যাচ্ছে এবং এই শিল্পের অবস্থার অবনতি সরকারী প্রচেষ্টা ছাড়া আকানো দুস্কর।

বিড়ি-প্রস্তুত পুরুলিয়ায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রায় ২০,০০০ বিড়ি শ্রমিক প্রধানতঃ ঝান্দা, পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, বলরামপুর ও কাশীপুরে বিড়ি প্রস্তুত কার্যে নিযুক্ত আছেন। নুন্যাধিক দুটি সমবায় সংস্থার পরিচালনায় বিড়ি প্রস্তুত হয়। এই কারখানাগুলি প্রধানতঃ পুরুলিয়া, ঝাল্দা, আদ্রা, আনারা, রঘুনাথপুর, দুবরা,পুন্‌চা ও হুড়ায় অবস্থিত। জেলায় দৈনিক প্রায় ২.৫ কোটি বিড়ি প্রস্তুত হয়। বিড়ি শিল্পের কাঁচামাল হল প্রধানতঃ কেন্দুপাতাও তামাক। জেলায় প্রচুর কেন্দুপাতা উৎপন্ন হয়। তামাক অধিকাংশই দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত, বিশেষতঃ গুজরাট থেকে আমদানী করা হয়।

চর্মশিল্পের মধ্যে কাঁচা চামড়া ট্যান করা ও জুতো তৈয়ারী শিল্প দেখা যায় জয়পুর, পুরুলিয়া, বিশপুরিয়া, গোবরা, মাগুরা ও মানবাজারে। এই শিল্পের উন্নতিতে সরকার সাহায্য করছে। প্রায় ৩,০০০ লোক এই শিল্পে নিযুক্ত আছেন।

আসবাবপত্র, গৃহের দরজা, জানালা নির্মান ইত্যাদিতেও যথেষ্ট শ্রমনিযুক্ত হয়ে থাকে এবং পুরুলিয়ার এই কার্যে সহস্রাধিক লোক জীবিকা সংগ্রহ করে থাকেন।

মৃৎশিল্পও পুরুলিয়ায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। টালি, ইট ও মূর্তি তৈয়ারীতে প্রায় ৩,০০০ লোক কর্মরত। মৃৎ শিল্পে সরকারী সহায়তাও পাওয়া যায়।

ঝুড়ি নির্মাণ মূলতঃ আদিবাসী সম্প্রদায় এর লোকেরা করে থাকেন। দৈনন্দিন কাজে এর উপযোগিতা থাকলেও উদ্যোগের সংখ্যা সীমিত।

গুর ও খান্দসরি ইক্ষুর রস থেকে প্রস্তুত হয়। এটি পুরুলিয়ায় আসায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এখানে প্রায় ১,০০০ শ্রমিক ইক্ষু চাষ এবং তা থেকে গুড় প্রস্তুতে নিযুক্ত আছেন। আধুনিক ও স্বল্পশ্রমসাধ্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে এটি একটি আকর্ষণীয় উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিণত হতে পারে।

মুখোশ-নির্মাণ শিল্প দেখা যায় জয়পুর থানার অর্ন্তগত ডরুমোদি (Dormodi)-তে এবং বাঘমুন্ডি থানার চারিদা গ্রামে। মুখোশ নির্মাণ শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা নগণ্য হলেও এবং এ থেকে আয় বিশেষ উল্লেখযোগ্য না হলেও পুরুলিয়ার বিখ্যাত ছৌ-নাচের মুখোশ সরবরাহে এর যথেষ্ট গুরুত্ব আছে এবং এর সাথে জড়িয়ে আছে পুরুলিয়া জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খ্যাতি।

জঙ্গল মহলে কয়েকটি আধুনিক চাউলকল স্থাপিত হয়েছে। পুরুলিয়া জেলার চেলিয়ামা, রঘুনাথপুর, ঝাল্ল্লা ও মানবাজারে চালকল আছে। এছাড়া আরও অনেকগুলি ছোট চাউলকল জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্থানে ধানভানার কাজে নিযুক্ত রয়েছে।

পর্যটন শিল্প: পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় দর্শনে ও পর্বতারোহনে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। এছাড়া ঝাড়গ্রাম ও কাকড়াঝোরের বনাঞ্চল একসময় পর্যটকদের অন্যতম ভ্রমনস্থান হিসেবে চিহ্নিত ছিল। পরিকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেলে এবং প্রচারের যথাযোগ্য ব্যবস্থা করা গেলে জঙ্গলমহলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের আকর্ষনে ভবিষ্যতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটবে, একথা নিশ্চিতভাবে বলা ।

জঙ্গলমহলে শিল্পের অবস্থা পর্যালোচনা করিলে বিস্ময়ের উদ্রেক হয় যে, প্রাকৃতিক সম্পদের বিশেষতঃ খনিজ ও বনসম্পদের বিশেষ দৈন্য না থাকা সত্ত্বেও এবং আসানসোল, টাটনগর, বোকারো, রাণীগঞ্জ, বার্ণপুর-এর মত উন্নত শিল্পাঞ্চলের নিকট সান্নিধ্যে অবস্থান সত্ত্বেও জঙ্গল মহল রাজ্যের সর্বাপেক্ষা পশ্চাদপদ অঞ্চল (most backward region) হিসাবে চিহ্নিত। কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে যে, কাঁচামালের উপযুক্ত প্রাপ্তিযোগ্যতা না থাকায়, বাজার সম্পর্কে বিশ্লেষণমুখী ধারণা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই শিল্প সমবায় সংস্থার অনুপস্থিতি, দ্রুত, সহজ ও সুলভ পরিবহণ-ব্যবস্থার অভাব এবং বিদ্যুতের ঘাটতি এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নতির পরিপন্থি। বর্তমানে সামগ্রিক আর্থিক উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। শিল্পের উন্নতি সহজসাধ্য করার ব্যবস্থা হলে জঙ্গলমহলের আর্থিক বিকাশ দ্রুততর হবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01