উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল
এই পার্বত্য অঞ্চল দক্ষিণের তরাই ও ডুয়ার্স এলাকা থেকে হঠাৎ খাড়া হয়ে উঠে গেছে এবং নদীগুলো গভীর খাত কেটে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হচ্ছে। সমতলের মাত্র ১৫০মিটার থেকে শুরু হয়ে সমোন্নতিরেখা উঃ পঃ-এ এটি সান্দাকফুর কাছে ৩৬০০ মিটার সমোন্নতিরেখার মান অতিক্রম করেছে। দুটি শৈলশিরা (Transverse Range) উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত হয়ে পশ্চিমে সিংগলিলা ও পূর্বে ডংকিয়াকে প্রায় বেষ্টন করে রেখেছে। এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ভূ -তত্ত্ব ও ভূমিরূপ প্রক্রিয়ার পারস্পরিক ক্রিয়ায় এক বিশিষ্ট রূপ পেয়েছে। অসংখ্য ছোটো বড় নদী বিন্যাস অঞ্চলটিকে কর্তৃক করে অতি বন্ধুর করেছে। শৈলশিরা ও উপত্যকার সমন্বয়ে ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় ও শোভামণ্ডিত ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে।
প্রধান নদী তিস্তার উপত্যকা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত হয়ে সমগ্র অঞ্চলকে পূর্ব ও পশ্চিম এই দুই অংশে বিভক্ত করেছে।
সমগ্র অঞ্চলটিকে- ক. তিস্তার পশ্চিম দিকে পার্বত্য অঞ্চল ও খ. তিস্তার পূর্ব দিকে পার্বত্য অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়।
তিস্তার পশ্চিম দিকে পার্বত্য অঞ্চল: এখানে রয়েছে সিংগলিলা ও দার্জিলিং শৈলশ্রেণি। সিংগলিলা পর্বতশ্রেণি দার্জিলিং ও নেপাল সীমান্তে অবস্থিত। তিস্তার পশ্চিম দিকে দার্জিলিং ও নেপাল সীমান্তে সিংগালিলার সান্দাকফু শৃঙ্গ (৩,৬৩০ মি.) পশ্চিমবঙ্গে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এখানকার ফালুট (৩,৫৯৫ মি.), সবরগ্রাম (৩,৫৪৩ মি.), টংলু (৩,০৩৬ মি.), টাইগার হিল (২,৫৬৭ মি.) অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ। টাইগার হিল থেকে বেরিয়ে গেছে এমন কয়েকটি শৈলশিরা হল- দার্জিলিং-লেবং, তাকদা-পেশক ও ডাওহিল শৈলশিরাগুলি। ডাওহিলের পশ্চিমপাশে রয়েছে পার্বত্য শহর কাশিয়াং।
তিস্তার পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চলকে উচ্চতার বিচারে ১. উর্ধ শৈলশিরা ২. মাঝারি উচ্চতার শৈলশিরায় বিভক্ত করা যায়।
১. উর্ধ্ব শৈলশিরা: উর্ধ শৈলশিরায় ঘুম-সোনাডায় শৈলশিরার উপরের অংশে মোটামুটি ১৪০০ মি. সমোন্নতিরেখার বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট এই অঞ্চল। উত্তর-পশ্চিম সীমানায় সিংগলিলা শৈলশিরা বরাবর এই সুদৃশ্য ভূমিরূপে সুউচ্চ শৃঙ্গ দুটি হল সান্দাকফু (৩,৬৩০ মি.) ও ফালুট (৩.৫৯৫ মি.)।
২. মাঝারি উচ্চতার শৈলশিরা: এটি উর্ধ্ব ও তিস্তা উপত্যকার পূর্বদিকে অবস্থিত নিম্ন শৈলশিরার মধ্যবর্তী একটি সংকীর্ণ অঞ্চল এবং মোটামুটি ৮০০ মি. ও ১৪০০ মি. সমোন্নতি রেখাদ্বয়ের মধ্যবর্তী অবস্থান। তবে এর ভূ-প্রাকৃতিক বন্ধুরতা তত বেশি নয় এবং উচ্চতাও মাঝারি। এজন্য বহু চা বাগিচা এখানে গড়ে উঠেছে। বিখ্যাত দার্জিলিং চা উৎপাদনের আদর্শ অঞ্চল এখানকার পর্বতঢাল।