welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গের পলিগঠিত সমভূমি

মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গের পলিগঠিত সমভূমি



(i) রাঢ়: ভাগীরথী-হুগলির পশ্চিমে এবং পশ্চিমের তরঙ্গায়িত সমভূমি ও মালভূমি অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত রাঢ় অঞ্চলের সমভূমি। এটি ভাগীরথী-হুগলি ও পশ্চিমের মালভূমি থেকে আসা নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত। বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমাংশ রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। প্রাচীন পলিমাটি দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটির মাটির রং হয়েছে লাল। রাঢ় অঞ্চলের প্রধান নদীগুলি হল-অজয়, দামোদর, ময়ূরাক্ষী, বক্রেশ্বর, শিলাবতী, কংসাবতী প্রভৃতি। কৃষিকার্যে এই অঞ্চলটি বেশ অগ্রসর।

(ii) বাগরী: ভাগীরথীর পূর্বদিকে বাগ্রি মূলত নবীন পলি দ্বারা গঠিত, হালকা গঠন এবং মৃত্তিকা সামান্য অম্ল ধর্মী থেকে নিরপেক্ষ হওয়ায় চাষআবাদ ভাল হয়। ভাগীরথী-জলঙ্গীর প্রবাহ বরাবর স্বাভাবিক বাঁধ গঠিত হয়েছে। অসংখ্য খাল, বিল ও জলাভূমি এই স্বাভাবিক বাঁধ সংলগ্নে রয়েছে। ভূমিভাগের উচ্চতা সর্বাধিক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বাধিক ১৫ মিটার উচ্চতা এবং স্বাভাবিক বাঁধ এবং নদী তীরবর্তী উচ্চভূমির উচ্চতা ২০ মিটারের বেশি নয়। নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথ অনেক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি করেছে। বিশেষত নাকাশিপাড়া, কালিগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চলে। চাপরাবিল, কুটিরবিল, বাঘেরবিল, গুরগুরিয়াখাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বর্ষাকালে প্লাবিত হলে বিশাল জলাভূমি সৃষ্টি হয়।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে নদীয়ার কালিয়াগঞ্জ ও তেহট্ট ব্লকের মধ্যবর্তী অত্যন্ত নিম্নভূমি যা কতকটা সরার ন্যায় দেখতে, তাই কালান্তর নামে পরিচিত। এটি ভাগীরথী ও জলঙ্গী নদীর মধ্যে অবস্থিত। অসংখ্য বড় বড় জলাভূমি এবং মৃতপ্রায় নদী নিয়ে গঠিত কালান্তর অঞ্চল। এটি মূলতঃ জলাভূমি। বর্ষার সময় সমগ্র অঞ্চল বিশাল জলাভূমির আকার ধারণ করে। জলনিঃসরণের কোন প্রাকৃতিক উপায়ে বিশেষ না থাকায় এ অঞ্চলে জল জমে থাকে, প্রায় সারা বছর। বর্ষাকালে তা বিশাল জলাভূমির আকার নেয়। কেন্দ্রীয় অংশে সারা বছর জল থাকে, প্রান্তবর্তী এলাকাগুলি বর্ষাকাল ভিন্ন অন্যান্য সময় জলপৃষ্ঠের উপরে জেগে থাকে। বেশিরভাগ অঞ্চলই নদীর মধ্যবর্তী সমভূমির অন্তর্গত। পূর্বদিকে জলঙ্গী স্বাভাবিক বাঁধ এবং পশ্চিম দিকে ভাগীরথী স্বাভাবিক বাঁধ। মধ্যবর্তী স্থানে অবনমিত সমভূমি অঞ্চল।

(iii) গঙ্গার ব-দ্বীপ অঞ্চল: এটি তিনভাগে বিভক্ত 

(1) মৃতপ্রায় ব-দ্বীপ (Moribund Delta): গঙ্গা বা পদ্মার দক্ষিণে ও ভাগীরথী-হুগলির পূর্বদিকের অঞ্চল জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা, ভৈরবী, চূর্ণী প্রভৃতি নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত। এটিকে বাগরীও বলে। মুরশিদাবাদ জেলার পূর্বাংশ, নদীয়া ও উত্তরে ২৪ পরগনা জেলার অংশবিশেষ এর অন্তর্গত। উল্লিখিত নদীগুলো গঙ্গা বা পদ্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এদের মধ্য দিয়ে গঙ্গার পলিযুক্ত জল ঠিকমতো প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে নদীগুলি অনেকাংশে হেজে-মজে গেছে।


(2) পরিণত ব-দ্বীপ (Mature Delta): সক্রিয় ব-দ্বীপের উপরে উত্তরে ২৪ পরগনা ও নদিয়ার অংশবিশেষ, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ব-দ্বীপ গঠনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ায় পরিণত ২-দ্বীপের অন্তর্গত।

(3) সক্রিয় ব-দ্বীপ (Active Delta) বা সুন্দরবন অঞ্চল: পশ্চিমবলোর দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার হিজলি থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রায়মঙ্গল নদী মোহনা পর্যন্ত পশ্চিমবলোর উপকূল অঞ্চল সুন্দরবন নামে পরিচিত। অনেক দ্বীপ, চরভূমি, লবনাক্ত ম্যানগ্রোভ জলাভূমির সমন্বয়ে সুন্দরবন অঞ্চল গঠিত। একদিকে নতুন দ্বীপ যেমন জলের উপর জেগে উঠছে, অন্যদিকে কোনো কোনো দ্বীপ জলমগ্ন হচ্ছে (উদাহরণ, ঘোড়ামারা দ্বীপ) রায়মঙ্গল, মাতলা, বিদ্যাধরী প্রভৃতি নদী ও অসংখ্য খাঁড়ি এবং লবণাক্ত জলাভূমি এই অঞ্চলে রয়েছে। এক সময়ে সুন্দরী গাছের প্রাচুর্য এই অঞ্চলে ছিল বলে এখানকার নাম সুন্দরবন হয়েছে। এটি একটি গভীর বনভূমি এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার-এর জন্য এই বনভূমি বিখ্যাত।

(iv) উপকূলভূমি: বঙ্গোপসাগর উপকূলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণাংশ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দক্ষিণের কিছু অংশ এই অঞ্চল গঠিত। লবণাক্ত মৃত্তিকাময় এই সমভূমির অদূরে পশ্চিমদিকে পলল সমভূমির মধ্যে বিচ্ছিন্ন বালিয়াড়ি দেখা যায়। পূর্বদিকে পলিগঠিত সমভূমি সমুদ্রতট পর্যন্ত বিস্তৃত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01