welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে বিভিন্ন দশকে নগরায়ণের গতিপ্রকৃতি:

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে বিভিন্ন দশকে নগরায়ণের গতিপ্রকৃতি:


স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বিভিন্ন দশকে ভারতে নগরায়ণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন ধরা পড়ে। বিভিন্ন আদমশুমার বিশ্লেষণ করলেই এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। ভারত সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে 1947 খিষ্টাব্দে ভারতে শহুরে জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল 53 মিলিয়ন যা ভারতের মোট জনসংখ্যার 15.7%। ভারত ভাগের ফলে বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) এবং পাকিস্তান (পঃ পাকিস্তান) থেকে প্রায় 10 মিলিয়ন উদ্‌দ্বাস্তু (Refugee) ভারতে এসে আশ্রয় নেয়। 1951খ্রিঃ আদমশুমার থেকে জানা যায় যে, ভারতে মোট যে সংখ্যক উদ্‌দ্বাস্তু এসেছিল তার 54% ভারতের বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিয়েছিল। এর ফলে শহুরে মোট জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যদিও ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র 17% শহরে, কিন্তু উদ্বাস্তু জনসংখ্যার একটি বড়ো অংশ শহরে বসবাস করেছে এবং সেখানে স্থিতিশীল হয়েছে। 1941-1951 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শহরে জনসংখ্যা প্রায় 41% বৃদ্ধি পায়।

1951-1961 খ্রিষ্টাব্দ: 1951-1961 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে নগরগুলির আয়তনগত শ্রেণির (town class size) মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। 10,000 বা তার বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহরের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। নগরে কিংবা শহরে জনসংখ্যার এই দ্রুত বৃদ্ধি শহরের আয়তনেও প্রভাব ফেলেছিল। 1951 খ্রিঃ 20,000 জনসংখ্যার কম বসবাস করে এরকম শহরের সংখ্যা 32% ছিল। 1961 খ্রিস্টাব্দে এর পরিমাণ হয় 23.4%। এই সময় সমগ্র ভারতে 20,000-এর বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহরের সংখ্যা 77% বৃদ্ধি পেয়েছিল।

1961-1971 খ্রিস্টাব্দ: 1961 খ্রিস্টাব্দে ভারতে মোট জনসংখ্যার ১৪% ছিল শহুরে জনসংখ্যা। কিন্তু 1971 খ্রিস্টাব্দে শহুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় আগের তুলনায় ২% বেশি। 1961 খ্রিস্টাব্দে দেশে মোট শহুরে জনসংখ্যা ছিল 78.9 মিলিয়ন, 1971 খ্রিষ্টাব্দে এর পরিমাণ হয় 109.1 মিলিয়ন। এই সময় প্রতি বছরে 3.3% হারে শহুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারতের মোট শহুরে জনসংখ্যার বৃদ্ধি হয় 38.2%।

ভারতে প্রথম শ্রেণির শহরের সংখ্যা (100000-এর বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহর) 1961 খ্রিস্টাব্দে ছিল 113টি। কিন্তু 1971 খ্রিস্টাব্দে এই সংখ্যা হয় 14৪টি। শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা 3৪ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয় 61 মিলিয়ন। 1961 খ্রিঃ ভারতে শহুরে জনসংখ্যার 48.4% প্রথম শ্রেণির শহরে বসবাস করতেন। 1971 খ্রিঃ 55.8% শহুরে মানুষ প্রথম শ্রেণির শহরে বসবাস করছিল। এই দশকে 50,000-99,000 জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহরের সংখ্যা 11.9% থেকে কমে 11.3% হয়েছিল। অন্যান্য শহর শ্রেণিতেও এই পরিবর্তন কিছুটা ঘটেছিল। 1961-1971 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ছোটো ছোটো শহরের সংখ্যা কমতে শুরু করে এবং বড়ো শহরের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে।

1971-1981 খ্রিস্টাব্দ: 1991 খ্রিস্টাব্দে আদমশুমারিতে ভারতে মোট শহুরে জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল (অসম এবং জম্মু-কাশ্মীর বাদে) 156 মিলিয়ন। 1981 খ্রিঃ ভারতে শহুরে জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল 159 মিলিয়ন (জম্মু-কাশ্মীর ও অসম নিয়ে)। এই পরিসংখ্যান প্রকৃতপক্ষে ভারতের মোট জনসংখ্যার 23.3%)

1981-1991 খ্রিস্টাব্দ: 1971-1981 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল 50.4মিলিয়ন। কিন্তু 1981-1991 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শহরে জনসংখ্যা 58.1 মিলিয়ন বৃদ্ধি পায়। এই দশকে বার্ষিক শহুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 3.৪% থেকে কমে 3.1% হয়েছিল। "The level of urbanisation increased by 2.4 percentage points during 1981-91 as compared to 3.4 percentage points during 1971-81", এই দশকে শহুরে জনসংখ্যা যতটা বেশি বৃদ্ধি পাবে আশা করা হয়েছিল ততটা বৃদ্ধি পায়নি। 1961-71 দশকে শহুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল 38.2%। 1971-81 দশকে শহুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল 46.1% কিন্তু 1981-1991-এর দশকে এর পরিমাণ হয় মাত্র 36.2%। এই পরিসংখ্যান থেকে এটাই ধরা পড়ে যে, 1980-এর দশকে ভারতে নগরায়ণের হার ছিল ধীর গতি সম্পন্ন।

1991-2001 খ্রিস্টাব্দ: 1901খ্রি.-2001 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় 20 মিলিয়ন। এই বিপুল জনসংখ্যা আগের দশকের শহরে জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট শহুরে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। প্রধানত প্রত্যেকটি জেলার সদর শহরে মানুষের আগমনের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। সদর শহরগুলির বাইরের সীমানার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, চন্ডীগড় প্রভৃতি শহরে এই প্রভাব লক্ষ করা গেছে।

1991 খ্রিস্টাব্দে ভারতের মোট জনসংখ্যার 32.54% ছিল শহরবাসী। 2001 খ্রিস্টাব্দে এর পরিমাণ হয় 37.81%। 1991-এর আদমশুমারিতে মেট্রোপলিটান শহরের সংখ্যা ছিল 23টি। 2001 খ্রিস্টাব্দে বৃদ্ধি পেয়ে তা হয় 35টি।

2001-2011 খ্রিস্টাব্দ: 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ভারতে মোট শহরের সংখ্যা 7935টি। আগের আদমশুমার অপেক্ষা বর্তমানে 2774টি শহর বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে 160.7 মিলিয়ন মানুষ মহানগরে বসবাস করেন যা মোট শহুরে জনসংখ্যার 42.6%। বর্তমানে দেশে প্রথম শ্রেণির শহরের সংখ্যা 468টি। 2001 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারিতে এই সংখ্যা ছিল 394টি। আমাদের দেশের 264.9 মিলিয়ন মানুষ প্রথম শ্রেণির শহরে বসবাস করেন যা মোট শহরবাসীর 70%। বর্তমানে দেশে 53 টি মহানগর আছে। দেশে মোট শহুরে জনসংখ্যার পরিমাণ 377 মিলিয়ন যা দেশের মোট জনসংখ্যার 31.16%।

ভারতে নগরায়ণের সম্প্রসারণের ফলে মেগাসিটিগুলিতে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে সালটি গুরুত্বপূর্ণ মেগাসিটি হল- বৃহত্তর মুম্বাই (জনসংখ্যা 18.4 মিলিয়ন), দিল্লি (জনসংখ্যা- 16.3 মিলিয়ন) এবা বৃহত্তর কলকাতা (জনসংখ্যা- 14.1 মিলিয়ন)।

বিগত এক দশকে ছোটো শহরগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মেগাসিটিগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিছুটা ধীর গতিসম্পন্ন হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, বৃহত্তর মুম্বাই নগরীতে 1991-2001 খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল 30.47% কিন্তু 2011 খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে হয়েছে 12.05%। একইভাবে দিল্লি মহানগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 52.24% থেকে কমে 26.69% হয়েছে। কলকাতা মহানগরীও এর ব্যতিক্রম নয়। এই মহানগরীতে 1991-2001 খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল 19.60% কিন্তু 2011 খ্রস্টাব্দে এর পরিমাণ হয়েছে মাত্র 6.87%। তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং কর্ণাটক- এই চারটি রাজ্যে নগরায়ণের হার সর্বাধিক। এই রাজ্যগুলিতে গ্রাম ও শহরের জনসংখ্যার ঘনত্বের পার্থক্য অনেক বেশি দেখা যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01