সুন্দরবন কেন বন্যাপ্রবণ
ক. প্রাকৃতিক কারণ:
• দ্বীপগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সামান্যই উপরে। তাই ঘূর্ণীঝড়জনিত সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে সহজেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
• উপকূলবর্তী অঞ্চলে অরণ্যহ্রাস ও উপকূল ক্ষয়-এর দরুণ স্থলভাগে জলের অনুপ্রবেশ সহজ হয়।
• জোয়ারের সময় বর্ষার জলে স্ফীত নদীগুলিতে জোয়ারের জল ও বৃষ্টির জল মিলেমিশে বন্যার কারণ হয়।
• ঘূর্ণীঝড়ে সমুদ্রের জলের অনুপ্রবেশে নদীখাতের ধারণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেলে বন্যা হয়।
• জলবায়ুর পরিবর্তন: পৃথিবীব্যাপী উন্নতাবৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রজলপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধির ফলে কিছু কিছু দ্বীপ সহজেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
খ. মানবিক কারণ:
• জলনিকাশি নালাগুলি বুজিয়ে চাষবাস, রাস্তাঘাট নির্মাণ হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থায় বাধা ঘটে। ফলে বৃষ্টির জলমগ্নতা বাড়ে।
• নদী বাধের উপরে বসবাস, কৃষি ও অন্যান্য কাজ।
• নদী চরে বসতি ও চাষবাস।
• নদীতীরবর্তী ও উপকূলবর্তী অরণ্যচ্ছেদনে নদী ও সামুদ্রিক খাড়িগুলিতে পলির পরিমাণ বৃদ্ধি করে জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস করে।
• নদীর তীরবর্তী নিম্নভূমিতে বসবাস গড়ে ওঠায় বন্যার জল প্লাবিত হয়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনজাতি: সুন্দরবন বসতযোগ্য করে তুলতে সেই ১৮ শতকে এই অঞ্চলের জমিদারগণ ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে প্রচুর সংখ্যায় আদিবাসী যেমন ওরাঁও, মুন্ডা, সাঁওতাল প্রভৃতি জনজাতির মানুষদের জঙ্গঙ্গল পরিষ্কার করার কাজে নিয়ে আসেন এবং পরবর্তীকালে তাদের বসবাসের সুযোগ করে দেন। ফলে উক্ত জনজাতির অনেকেই সুন্দরবনে থেকে যান এবং এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠী মানুষদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে থাকেন। এই সকল মানুষেরা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নতির অভাবে, আর্থিক দিক দিয়ে অনগ্রসর রয়ে গেছেন।
স্বাধীনতার পর পূর্ববঙ্গ থেকে বহু মানুষের পশ্চিমবঙ্গে আগমন ঘটে এবং তাদের একাংশ সুন্দরবন অঞ্চলে বসবাসের জন্য যান।
সুন্দরবন মূলতঃ জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি । যাতায়াত মূলতঃ জলপথ নির্ভর। শিল্প কলকারখ ানা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজকর্মের অভাবে এলাকায় মানুষদের আর্থিক উন্নতি পিছিয়ে রয়েছে। নোনা জলের সমস্যা রয়েছে ভৌমজলে। ফলে পানীয় ও সেচের জল দুই-এরই অভাব রয়েছে। কৃষিতেও এর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে। গরীব মানুষ অনেকেই বন্যাপ্রবণ নিম্নভূমিতে বসবাসে বাধ্য হন। বন্যায় এই সকল মানুষেরা বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অরণ্য ও বন্যপ্রাণী:
সমুদ্রের জলচ্ছাস বৃদ্ধি পেয়ে এবং উপকূলক্ষয়ের ফলে অনেক দ্বীপ আয়তনে সংকুচিত হয়েছে। কোনো কোনোটি জোয়ারের সময় জলমগ্ন হয়ে যায় পুরোপুরি বা আংশিকভাবে। এর ফলে বহু উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী বিপন্ন হয়েছে এবং সংখ্যালোপ পেয়েছে। এছাড়া চোরা শিকারী ও কাঠ পাচারকারীদের জন্যও প্রাণী ও উদ্ভিদ সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আজ বিপন্ন তালিকাভুক্ত। হরিণ ও কুমিরের আগের মত দেখা পাওয়া যায় না। সুন্দরী বৃক্ষও খুব কমে গেছে।