welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

শক্তি সম্পদ কয়লা

 শক্তি সম্পদ কয়লা 


ভারতের উৎপন্ন শক্তি খনিজের মধ্যে কয়লাই প্রধান। ভারতে সম্মিত কয়লার পরিমাণ ১৯,৬০২ কোটি মেট্রিক টন। এই দয়ের অধিকাংশই গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা। মধ্যম মানের এই কয়লা বিটুমিনাস শ্রেণির এবং শিল্পে এর ব্যবহার খুব বেশি।

কয়লা একটি জীবাশ্ম জ্বালানি ও খনিজ। পৃথিবীর মোট শক্তি উৎপাদনের শতকরা ৬০ ভাগ পাওয়া যায় কয়লা থেকে।

কয়লার উৎপত্তি: বহু প্রাচীনকালে (কার্বনিফেরাস উপযুগে, প্রায় ২৮-৩০ কোটি বছর আগে) উবু ও আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে বৃক্ষাদি মাটির নীচে চাপা পড়ে ভূ-গর্ভস্থ তাপ ও চাপের ফলে ক্রমশ কয়লায় পরিণত হয়। উদ্ভিদের সারাংশ দিয়ে গঠিত হয় বলে একে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।

কয়লার গুরুত্ব ও ব্যবহার: তাপ ও শক্তি সরবরাহের প্রধান উৎস কয়লা। কয়লা থেকে উৎপন্ন শক্তি- (i) কলকারখানায়, (ii) রেলইঞ্জিন ও স্টিমার চালাতে, (iii) রান্নায়, (৯) শীতপ্রধান দেশে ঘর গরম রাখতে, (v) আলো জ্বালাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও কয়লা থেকে গ্যাস উৎপাদন করা হয়। ভারতে রেলপথ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লৌহ ইস্পাত শিল্পে এবং অন্যান্য শিল্পে কয়লার ব্যবহার প্রচুর।

শিল্পে ভূমিকা: লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের সর্বপ্রধান কাঁচামাল কয়লা। অন্যান্য শিল্পেও জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের উৎস হল কয়লা। সুতরাং কয়লার প্রাপ্তি ও সহজলভ্যতা শিল্পের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। ভারতের সমৃদ্ধ কয়লা ক্ষেত্রগুলি অনেক শিল্পাঞ্চলের জন্ম দিয়েছে।

উদাহরণ: আসানসোল, রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চল, ছোটোনাগপুর শিল্পাঞ্চল।

কয়লার উপজাত দ্রব্যসমূহ : কয়লা থেকে কোক, অ্যামোনিয়া, আলকাতরা, ন্যাপথলিন, স্যাকারিন, ক্রিয়োজোট, গ্যাস জ্বালানি তেল, গন্ধক, বেঞ্চল প্রভৃতি উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়।

কয়লার শ্রেণিবিভাগ: কার্বনের তারতম্যে কয়লা চার প্রকার হতে পারে। যথা- (১) অ্যানথ্রাসাইট-সর্বোৎকৃষ্ট কয়লা। কুচকুচে কালো, ৮০-৯০% কার্বন থাকে। (২) বিটুমিনাস-উৎকৃষ্ট কয়লা। কুচকুচে থেকে ধূসর কালো, কার্বনের পরিমাণ ৫০-৮০%। (৩) লিগনাইট-নিম্নমানের কয়লা। বাদামি রং-এর দেখতে হয় বলে একে ব্রাউন কোল (Brown Coal) বা বাদামি কয়লাও বলে। কার্বনের ভাগ ৩৫-৫০%। (৪) পিট-নিকৃষ্ট কয়লা, প্রকৃতপক্ষে কাঠ থেকে কয়লার পুরোপুরি রূপান্তর ঘটেনি। জ্বালালে প্রচুর ধোঁয়া হয়। কার্বনের পরিমাণ ৩৫%।

ভারতে কয়লার সঞ্চয়: ভারতে সঞ্চিয় কয়লার পরিমাণ ১৯,৬০২ কোটি টন। ভারতে অধিকাংশ কয়লার সঞ্চয় গন্ডোয়ানা যুগের। এই কয়লা মধ্যম শ্রেণির বিটুমিনাস জাতীয়। দামোদর উপত্যকা কয়লাসমৃদ্ধ। ভারতে অল্প পরিমাণ টার্সিয়ারি যুগের কয়লাও পাওয়া যায়। নিম্নমানের লিগনাইট-জাতীয় এই কয়লার সঞ্চয় প্রায় ৮৪ কোটি টন। পৃথিবীর ৫% কয়লা ভারতে সঞ্চিত আছে।

গন্ডোয়ানা ও টার্সিয়ারি যুগের কয়লা সঞ্চয়ঃ ভারতে অধিকাংশ কয়লা সঞ্চয়ই গন্ডোয়ানা যুগের মধ্যম শ্রেণির বিটুমিনাস জাতীয়। এর পরিমাণ প্রায় ১৯,৬০২ কোটি মেট্রিক টন। দেশে মোট কয়লার সঞ্চয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশই গন্ডোয়ানা শ্রেণির। টার্সিয়ারি কয়লা নিকৃষ্ট মানের। এর সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রায় ৮৪ কোটি টন। এটি বাদামি লিগনাইট ও পিট জাতীয় কয়লা। উত্তর-পূর্ব ভারতে অসম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচলপ্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জম্মুর রিয়াসী অঞ্চল, রাজস্থানের বিকানীর অঞ্চল এবং তামিলনাড়ুর দক্ষিণ আর্কটে টার্সিয়ারি কয়লা কিছু পরিমাণে পাওয়া যায়। পৃথিবীর মোট ৫% কয়লা ভারতে সঞ্চিত আছে বলে অনুমান করা হয়।

সমস্যা ও সম্ভাবনা: রেলভাড়া বারবার বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়লার মূল্য বৃদ্ধি ঘটে।ভারতে কয়লাখনিগুলি কয়েকটি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত। উন্নত যন্ত্রপাতির অভাবে কয়লার উত্তোলন ব্যয় বেড়ে যায়।উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত করার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। এছাড়া উচ্চমানের কয়লা সঞ্চয় হ্রাস, ও বহু খনি গভীরতর অভাব, পুরনো কয়লা খনি অঞ্চলে বজনিত সমস্যা, ওয়াগনের অভাবে কয়লা প্রেরণে হয়ে পড়ায় নিরাপত্তার অসুবিধা ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন পরিকল্পনাকালে এই সমস্ত সমস্যা দূর করার চেস্টা করা হয়েছে এবং 'ধানবাদের জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান' (Fuel Research Institute) কয়লা উত্তোলনে উন্নতির ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছে। বলা চলে ভারতে। কয়লা শিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতের শিন্ধোদয়নেকয়লাখনির ভূমিকাঃ

 কয়লাই ভারতের প্রধানতম শক্তি সম্পদ এবং যে কোনো শিল্প স্থাপনে শাস্ত্র সম্পদের গুরুত্ব অত্যন্ত অধিক। কয়লা ভারতের শিল্পোন্নয়নে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।

পূর্ব ভারতের আসানসোল রানিগঞ্জ দুর্গাপুর শিল্পবলয় দামোদর উপত্যকার কয়লাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। লৌহ ও ইস্পাতকেন্দ্রগুলির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাঁচামাল কয়লা। কয়লার উপজাত দ্রব্যের ওপর নির্ভর করে বেশ কয়েকটি রাসায়নিক শিল্প গড়ে উঠেছে। লৌহ-ইস্পাত শিল্প উন্নতি করায়, লৌহ ও ইস্পাত ব্যবহারকারী বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে। খনি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-নির্মাণ শিল্প উন্নতি করেছে।

কয়লার নিকটবর্তীতায় কলকাতা-হাওড়া শিল্পাঞ্চলে ইঞ্জিনিয়ারিং, রাসায়নিক, কাগজ, পাট ও কাপাস বয়ন প্রভৃতি শিল্প গড়ে উঠেছে। এই শিল্পগুলি কয়লাজাত তাপবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে।

ওড়িশার তালচের কয়লাখনি রাউরকেল্লা লৌহ ও ইস্পাত শিল্প এবং স্থানীয় সহায়ক শিল্পগুলি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া, বোকারো কয়লাক্ষেত্র বোকারো, জামসেদপুরের লৌহ ও ইস্পাত শিল্পে কয়লা সরবরাহ করে।

ছত্তিশগড়ের কোরবা কয়লাখনির কয়লা ব্যবহার করে ভিলাই লৌহ ও ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। অন্তপ্রদেশের সিঙ্গারেণী কয়লাখনির নিকটবর্তীতায় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছোটো বড়ো বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

তামিলনাড়ুর লিগনাইটের ওপর নির্ভর করে নেভেলীতে দুটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, একটি সার কারখানা গড়ে উঠেছে।

ভারতের প্রায় সবকটি লৌহ ইস্পাত শিল্পই হয় কয়লাখনি অঞ্চলে অথবা কয়লাপ্রাপ্তির সুবিধা নিয়ে অন্যত্র গড়ে উঠেছে। এই লৌহ-ইস্পাত শিল্পগুলি আবার সহায়ক শিল্পগুলিকে আকৃষ্ট করেছে। কয়লার ওপর ভিত্তি করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে। এই তাপবিদ্যুৎ ব্যবহার করে ভারতের অধিকাংশ শিল্প ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01