সুন্দরবন অঞ্চলে বন্যা আয়লার উদাহরন সহ
ভূমিকা: সুন্দরবন অঞ্চলে বন্যা নিত্যসমস্যা। ২০০৯ সালে ঘটা আয়লা, ২০১৯ সালে ঘটা বুলবুল, ২০২০ সালে ঘটা আমফান (উমপেন) ঘূর্ণীঝড়প্রসূত বন্যা বিপর্যয় ছিল ভয়াবহ। সুন্দরবনের ৫৪টি দ্বীপের কোনো না কোনো দ্বীপ বা দ্বীপের অংশবিশেষ প্রতিবছরই প্রায় বন্যাকবলিত হয়। এতে বিপন্ন হয় সুন্দরবনের অসংখ্য মানুষ, বিপন্ন হয় অরণ্য এবং বনের প্রাণীকুল। সুন্দন্দরবনে দু ধরনের বন্যা হয় (১) নদীর প্লাবন অর্থাৎ নদীতে বহনক্ষমতার অতিরিক্ত জল এসে নদী দুকূল ছাপিয়ে নিম্নভূমি প্লাবিত করে। (২) উপকূলীয় বন্যা যখন সমুদ্রের জল উর্ধ্বজলসীমা ছাপিয়ে উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত করে। সামুদ্রিক ঝড়ে জলোচ্ছাস ঘটেও এধরনের বন্যা ঘটে।
সুন্দরবনে বন্যার পৌনঃ পুনিকতা ও আয়লার মতো ঘুর্ণীঝড়প্রসূত বন্যার ভয়াবহতা যেভাবে বেড়েছে তার কারণ অনুসন্ধান এবং বন্যা বিপর্যয় মোকাবিলার মাধ্যমে সুন্দরবন অঞ্চলে জনজীবন ও পরিবেশ রক্ষা করা অবশ্য প্রয়োজন।
ক. জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্যঃ
সুন্দরবন অঞ্চল মৌসুমী জলবায়ুর খামখেয়ালিপনার অধীন একটি অরণ্য ও জলাভূমিময় একটি অঞ্চল। উপকু লবর্তী হওয়ায় ঘূর্ণীঝড়ের দ্বারা ঘন ঘন সামুদ্রিক জলোচ্ছাসের কবলে পড়ে।
খ. নদী সংক্রান্ত তথ্যঃ
সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী: ইছামতি, বিদ্যাধরী, মাতলা, বড়তলা, ঠাকুরান, সপ্তমুখী, রায়মঙ্গল, কালিন্দী, পিয়ালী প্রভৃতি নদী সুন্দরবন অঞ্চলে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা নিয়ে প্রবাহিত। এই নদীগুলি এবং সামুদ্রিক খাড়িগুলি বিভিন্ন আকৃতি ও আয়তনবিশিষ্ট বহু সংখ্যক দ্বীপকে বেষ্টন করে আছে
চার্টে প্রদত্ত বৃষ্টিপাতের ঋতুভিত্তিক বণ্টন এবং এখানকার নদীবিন্যাস দেখে স্বাভাবিকভাবে ধারণা হয় বৃষ্টিবহুল গ্রীষ্মকালে বন্যাপ্রবণতা বেশি। ঘূর্ণীঝড়ের আগমনে সামুদ্রিক জলোচ্ছাস এবং অববাহিকা অঞ্চলের বৃষ্টিপাত নদীগুলিতে জলের পরিমাণ এতটাই বাড়িয়ে দেয় মাঝে মাঝেই, তা নদীর ধারণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গিয়ে দুকুল প্লাবিত করে বন্যার সৃষ্টি করে ।
আয়লা ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দল (Disaster Management Team) ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় উভয় সরকারের তরফ থেকে সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে বন্যা দুর্গতদের ত্রানকার্যে অবতীর্ন হন। হেলিকপ্টার ও মোটর বোটের সাহায্যে সেনাবাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যগণ বন্যা কবলিত এলাকায় পৌঁছতে চেষ্টা করেন। বন্যার জল কোথাও কোথাও প্রায় ২০ ফুট গভীর হয়। হাজার হাজার হরিণ ও অন্যান্য পশু নিখোঁজ হয়। বহু লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ৮ হাজার মানুষ নিখোঁজ হন, ৪ হাজারের অধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ২ লক্ষ গৃহ ও প্রায় ১.২৬ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।