জলের ব্যবহার ও অতি ব্যবহারের গুণাগুণ
• জলের ব্যবহারিক উপকারিতা: বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ মানুষের বেঁচে থাকা ও স্বাস্থ্যের জন্য আবশ্যক। শিল্পে ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জলের ব্যবহার প্রয়োজন হয়। জলের অভাবে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, যদি সেচের মাধ্যমে গাছের প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করা হয়। জলসেচের ফলে মাটির উর্বরা শক্তি কাজে আসে এবং শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। জলসেচের জল কৃষিজমি প্লাবিত করলে সেখানে স্বল্প সময়ের মৎস্য চাষ করে কৃষকের বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়। সেচ সেবিত জমির জল নিম্নগামী হয়ে ভৌমজলের পুনঃপ্রাপ্তিতে সাহায্য করে।
• অতিরিক্ত জল উত্তোলনের কুফল: কূপ ও নলকূপ মাধ্যমে জল উত্তোলনে জলের অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত জল উত্তোলন ভৌমজল সঞ্চয় হ্রাস করে। এর ফলে ভূমিভাগ বসে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।গভীর ও অগভীর নলকূপ আর্সেনিক সমৃদ্ধ শিলাস্তরের জল উত্তোলন করলে আর্সেনিকজনিত রোগের কারণ হতে পারে। দক্ষিণবলো এই সমস্যা রয়েছে অতিরিক্ত জল উত্তোলনে ভৌমজলের সঞ্চয় হ্রাস পায় ফলে পরবর্তী সময়ে জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায়। খালের মাধ্যমে অতিরিক্ত জল কৃষিজমিতে জমে থাকলে ফসলের পক্ষে তা ক্ষতিকর হতে পারে। জল জমে থাকাকালীন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা বন্যার জল আগমনে পরিস্থিতি সংকটজনক হতে পারে।
• বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বা রেন ওয়াটার হারভেস্টিং (Rain Water Harvesting):
জলের অভাব মেটাতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উৎসাহ ও উদ্যোগ সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ পদ্ধতি নিম্নরূপ-
(১) ছাদের বৃষ্টির জল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ :এই পদ্ধতিতে ছাদে বৃষ্টির জল আটকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে তা ভু-পৃষ্ঠস্থ বা ভূ-গর্ভস্থ জলাধারে প্রেরণ করে সংগৃহীত হয়। গৃহস্থালির প্রয়োজনে এই জল পরে ব্যবহার করা হয়।
(২) ভূ-পৃষ্ঠস্থ জলধারার জল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: বৃষ্টির জল যখন ভূমিভাগের মৃত্তিকাকে সম্পৃক্ত করে ফেলে তখন অতিরিক্ত জল ভূ-পৃষ্ঠস্থ জলাধারারূপে নিকাশিত হয়। এই অতিরিক্ত জল একত্র সংগ্রহ করে নির্মিত ভূ-পৃষ্ঠস্থ বা ভূ-গর্ভস্থ জলাধারে প্রেরণ করে সংগৃহীত হয়। ভৌমজলের পুনঃপ্রাপ্তিতেও এই জল ব্যবহার করা যায়।
এভাবে জল সংরক্ষণ ভৌমজলের উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তাকে হ্রাস করে এবং কৃষক ও গৃহস্থের হাতের কাছেই সংরক্ষিত জল থাকায় ভবিষ্যতে জলসেচ বা পানীয় জলের প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যায়। এভাবে জল সংরক্ষণ করলে রাস্তাঘাটে জল দাঁড়িয়ে থাকার সমস্যা অনেকাংশে দূরীভূত হয়। গ্রীষ্মকালীন বা শুখা মরশুমে জলের সমস্যা লাঘব হয়।