welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ

 ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ

 


এই অঞ্চলকে (ক) উচ্চ সমপ্রায়ভূমি এবং(খ) নিম্নের তরঙ্গায়িত সমভূমি এই দুই অংশে বিভক্ত করা যায়। ৩০০ মিটার সমোচ্চ রেখাটি এই দুটি অংশকে পৃথক করছে।

(ক) উচ্চ সমপ্রায়ভূমি প্রকৃতপক্ষে রাঁচী মালভূমির পশ্চিমদিকের বহিঃপ্রসূত অংশের অবশিষ্ট ভূমিরূপ। এটি সুবর্ণরেখা, কংসাবতী, দামোদর প্রভৃতি নদীর জলবিভাজিকারূপে কাজ করছে।

একেবারে উত্তর-পশ্চিম পুরুলিয়া, রাঁচী ও হাজারিবাগের মিলনকেন্দ্রটি উত্তরের ঘোড়ামারা পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডঙ্কা গঢ়া নালা (Danka Garha Nala)-র সঙ্গঙ্গমে অবস্থিত। এখান থেকে পূর্ববাহিনী সুবর্ণরেখা দক্ষিণদিকে কনুই-এর ন্যায় বাঁক নিয়ে জেলার পশ্চিম সীমা নির্দেশ করছে এবং রাঁচী-মুরি থেকে ঝালদা-বলরামপুর পর্যন্ত একদা জিহ্বার ন্যায় প্রসারিত শৈলশ্রেণির অভিক্ষিপ্তাংশ (Spur)-কে ব্যবচ্ছিন্ন করছে। এই কর্তিত জিহ্বার ন্যায় ভূমিরূপের পূর্বাংশ অযোধ্যা পাহাড় এবং পুরুলিয়া তথা জঙ্গল মহলের প্রধান উচ্চভূমি অঞ্চল। এটি কংসাবতী ও সুবর্ণরেখা নদীদ্বয়ের মধ্যবর্তী জলবিভাজিকারূপে কাজ করছে। অযোধ্যা পাহাড়ের পশ্চিম ও দক্ষিণে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকগুলি ক্ষয়জাত পাহাড় রয়েছে। পাহাড়শ্রেণির গড় উচ্চতা ৫০০ মিটার ও বিস্তার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর। দক্ষিণ-পশ্চিমে ৬৮৮ মিটার উঁচু চামটু (Chamtu)-র উচ্চতা সর্বাধিক। জাজুহাটু গম্বুজ (Jajuhatu dome) একটি দর্শনীয় পাহাড়, ৫৪২.৫ মি. উচু। এখানে কেন্দ্রবিমুখ জল-নির্গম প্রণালী দৃষ্ট হয়।।

বাঘমুন্ডি-অযোধ্যা উচ্চভূমির প্রধান শিখরগুলির মধ্যে উত্তর-পশ্চিমদিকে গোপ্তা পাহাড় ও গুগুই পাহাড় (উভয়ই ৫৮০.৫ মি.উচু এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গোর্গাবুরু (৬৭৭ মি.) ও কর্মা (৬৫৩ মি.) পাহাড় অবস্থিত।

দা-লাভা গঠিত পাহাড়শ্রেনি অযোধ্যা পাহাড় অপেক্ষা উচ্চতায় কম এবং ক্রমশঃ ঢালু হয়ে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনিপুরের ক্ষয়জাত সমভূমিতে নেমে গেছে। পুরুলিয়া জেলার উত্তর-পশ্চিমদিকে রয়েছে ঘোড়ামারা উচ্চভূমি। বিজলি পোখার (৬২১ মি.) পূর্বপার্শ্বে উল্লেখযোগ্য শিখর। জেলার পূর্বদিকে রয়েছে পঞ্চকোট বা পাঞেৎ পাহাড় (সর্বাধিক উচ্চতা ৬৪৩.৫ মি.)।

 নিম্নের তরঙ্গায়িত সমভূমি বা ক্ষয়জাত সমভূমিঃ এই সমভূমির দুই পার্শ্বে রয়েছে দামোদর উপত্যকা ও বাগোদর উচ্চভূমি। দক্ষিণে দ্যা পাহাড় ও পূর্বে তরঙ্গায়িত ও স্থানীয়ভাবে ক্ষয়িত ল্যাটেরাইট-অধ্যুষিত সমভূমি। এই সমভূমি অঞ্চলে ক্ষয়কার্য এত নিপুনভাবে হয়েছে যে, বিভিন্ন কাঠিন্যের শিলা গঠনও ক্ষয়িত হয়ে অবনমিত হয়েছে এবং সমপ্রায়ভূমি গঠনে (Peneplanation) প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে নি। তবে উত্তরে কতিপয় অতি কঠিন শিলা-গঠিত বিচ্ছিন্ন পাহাড় এই সমপ্রায় ভূমিরূপে বৈচিত্র এনেছে বলা যায়।

ছোটোনাগপুর মালভূমির যে অংশটি বাঁকুড়া জেলায় প্রবেশ করেছে, সেখানে রয়েছে বাঁকুড়ার সর্বাধিক উচ্চতাসম্পন্ন দুটি পাহাড় শুশুনিয়া (৪৪৮ মি.) ও বিহারিনাথ (৪৫১ মি.)।

শুশুনিয়া পাহাড় পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। উইলিয়াম হান্টার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাঁকুড়ার ভূ-প্রকৃতি "পলিগঠিত সমভূমি, তরঙ্গায়িত সমভূমি বিচ্ছিন্ন পাহাড় এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শৈলশিরায় গিয়ে মিশেছে যা আবার মধ্য ভারতের মালভূমির অগ্রবর্তী দ্বারী হিসেবে দন্ডায়মান রয়েছে।"

পশ্চিম মেদিনিপুরের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাংশে উচু নীচু ভূভাগ, ছোটোনাগপুর মালভূমির প্রসারিত অংশ তরঙ্গায়িত কঠিন ল্যাটেরাইট গঠিত ভূভাগ গঠন করে পর্যায়ক্রমে উত্তল ও অবতল ভূমিরূপে শেষ হয়ে দক্ষিণ দিকে পলিগঠিত সমভূমিতে এসে মিশেছে।

নদনদী: দামোদর, কংসাবতী, সুবর্ণরেখা প্রভৃতি নদী জঙ্গল মহলের বিস্তীর্ণ অংশ বিধৌত করে প্রবাহিত হয়েছে।

দামোদরঃ ছোটোনাগপুর মালভূমিতে উৎপন্ন হয়ে ঝাড়খন্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুরুলিয়ার পাঞ্চেৎ পাহাড়ের কাছে পুরুলিয়ায় প্রবেশকরে পাঞেৎ জলাধারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাঁকুড়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে। এবং বাঁকুড়ার সালতাড়োর কাছে বাঁকুড়ায় প্রবেশ করেছে।

সুবর্ণরেখা: ঝাড়খন্ডে উৎপন্ন এই নদী পুরুলিয়ার পশ্চিম সীমানা ধরে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ বাহিনী হয়েছে। এর বামতীরে ঘোড়ামারা পাহাড় থেকে উৎপন্ন ডঙ্কা গর্হা নালা এবং অযোধ্যা-বাঘমুন্ডি পাহাড়শ্রেনী থেকে উৎপন্ন শাপহি নালা, শান্দা নাল, খেলারি মোরিয়া নালা প্রভৃতি এসে মিশেছে। এরপর দক্ষিণদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের উত্তর-পশ্চিমে প্রবেশ করেছে এবং মেদিনীপুরের সদর মহকুমার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দাঁতনের দক্ষিণে ওড়িশায় প্রবেশ করে এই নদী তালসারির কাছে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

কংসাবতী: জঙ্গল মহলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নদী। জঙ্গল মহলের ঘোড়ামারা পাহাড়ের জাবরবন শিখ র দক্ষিণ-পূর্ব বাহিনী কংসাবতী বা কংসাই বা কসাই নালার উৎপত্তিস্থল। বেগুনকুদার ৩ কি.মি. উত্তরে গিরগিরি নালা ও মহরঝোর (যথাক্রমে গোঞ্জা পাহাড় ও অযোধ্যা পাহাড় থেকে নিঃসৃত)-এর মিলিত প্রবাহ কাংসাই নালার সাথে মিশে কংসাবতী বা কাঁসাই নদীতে পরিণত হয়েছে। এই মিলনস্থল থেকে কংসাবতী নদী বালি ও কাকরপূর্ণ প্রশস্ততর উপত্যকার পূ বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। তবে এই অংশে কেবল বর্ষায়ই এই নদী জলপূর্ণ হয়। বাঘমুন্ডি পাহাড়ের উত্ত রপার্শ্ব বেয়ে অনেকগুলি অনিত্যবহা নদী কংসাবতীর দক্ষিণ তীরে উপনদীরূপে মিলিত হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফৌড়া নালা, চাখা নালা, বন্ধু নালা প্রভৃতি। বন্ধু নালার মিলনস্থল থেকে ৪ কিলোমিটার নিম্নে ২০ কিলোমিটার পথ কংসাবতী একটি প্রশস্ত নিত্যবহা নদী। পুরুলিয়া শহর এই নিত্যবহা জলধারার ৩ কিমি. উত্তরে অবস্থিত। একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় (২০৫ মি. উচ্চতায়) এসে এই নিত্যবহা অংশ সমাপ্ত হয় এবং পুনরায় অনিত্যবহা নদীতে পরিণত হয়।

এই অংশে নদীর বামতীরে পাটলি নালা এসে মিশেছে। এর ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে কংসাবতী পূনরায় একটি প্রশস্ত নিত্যবহা নদীরূপে প্রবাহিত হয়। পুঞা ও মানবাজার থানা এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহকালে কংসাবতী বাঁক নিয়ে দক্ষিণদিকে বাঁকুড়া জেলার খাত্রা এলাকার মধ্য দিয়ে রানিবাধে প্রবেশ করে কংসাবতী জলধারা সৃষ্টি করে আরো ভক্ষিণে রায়পুর থানার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিমে প্রবেশ করেছে। অত্যন্ত আকাবাঁকা পথে এই নদী প্রথমে দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পরে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মেদিনীপুর শহরকে উত্তর তীরে রেখে মহিষাদলে হলদি নদীতে মিলিত হয়েছে।

কুমারী নদী: বাঘমুন্ডি উচ্চভূমির পূর্বপার্শ্বে উৎপন্ন হয়ে কুমারী নদী সোজা এবং খাড়াই খাতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে ও পরে অপেক্ষাকৃত কম খাড়াইযুক্ত খাতে ও আঁকাবাঁকা পথে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। মানবাজার খানার ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে রঙ্গাতারে কুমারী দক্ষিণ-পূর্বে সুস্পষ্ট বাঁক নিয়ে নিত্যবহা খাতে প্রবাহিত হয়ে কংসাবতী জলাধারে পতিত হয়েছে। ঝাড়খন্ডের দদ্মা পাহাড় শ্রেণি থেকে নির্গত হয়ে অনেকগুলি ক্ষুদ্র উপনদী কুমারীর দক্ষিণ তীরে মিলিত হয়েছে।

শিলাবতী: শিলাবতী বা শিলাই নদী পুরুলিয়া জেলায় উৎপন্ন হয়ে বাঁকুড়ার খাতরার মধ্য দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বাহিনী হয়ে ঘাটাল-এর কাছে দ্বারকেশ্বর নদীতে পড়েছে এবং পরবর্তী প্রবাহে রূপনারায়ণ নদী রূপে গঙ্গার নিম্নপ্রবাহে এসে হুগলী নদীতে মিশেছে।

জলবায়ু (Climate): উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং ঋতু-নিয়ন্ত্রিত বৃষ্টিপাত এই জেলার বৈশিষ্ট।। সমগ্র বৎসর চারটি ঋতুতে বিভাজ্য। শীতকাল শুরু হয় নভেম্বরের মাঝামাঝি এবং থাকে ফেব্রুয়ারীর শেষ পর্যন্ত। মার্চ থেকে মে গ্রীষ্মকাল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের অন্তর্গত। অক্টোবর ও নভেম্বরের প্রথমার্ধে থাকে মৌসুমী-উত্তর (Post Monsoon) জলবায়ু।

জঙ্গল মহলে গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ১৩২ সেমি। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জেলার উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে বৃদ্ধি পায়। পশ্চিমের পাহাড়ী অঞ্চলে সর্বাধিক বৃষ্টি হয়। জেলার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ বৃষ্টিপাত হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বরে, মৌসুমি বায়ুর আগমণে। জুলাই সর্বাপেক্ষা বৃষ্টিবহুল মাস। বঙ্গোপসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়েও মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরে গড়ে ৮ টি অনুরুপ ঘূর্ণিঝড় এই জেলার উপর দিয়ে বয়ে যায়। মৌসুমি বৃষ্টিপাত একটানা না হয়ে বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি থাকে (Pulsatory nature)। এটি শস্য উৎপাদনের সহায়ক। বিভিন্ন বৎসরে এবং বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণে যথেষ্ট তারতম্য থাকে। কোন বৎসর খরা হলে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলা অপেক্ষা পুরুলিয়া অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জেলার বৃষ্টি-দিবসের সংখ ॥ গড়ে ৭১টি। এই সংখ্যা মানবাজার ও পারায় ৬৭টি করে এবং ঝালকায় ৭৬টি। জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারীতে কোনো কোনো বছরে পশ্চিমী ঝামেলার (Western Disturbence) জন্য দুই-একদিন মেঘ ও বৃষ্টিপাত হয়।

মার্চ-এর শুরু থেকেই উত্তাপ বাড়িতে থাকে। মে উষ্ণতম মাস। এই সময় গড় সর্বাধিক উত্তাপ ৪০° সেঃ (১০৪.৫° ফাঃ) ও সর্বনিম্ন উত্তাপ ২৭° সেঃ (৮১০ ফাঃ) হয়। মে-জুন মাসে কোন কোন দিন উত্তাপের পরিমাণ শুস্ক জলবায়ুর জন্য বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫০-৪৬° সেঃ (১১৩০-১১৪.৮০ ফাঃ) পর্যন্ত উঠে যায়। সন্ধ্যাবেলায় কোন কোন দিন বজ্রবৃষ্টি হইলে উত্তাপ নেমে গিয়ে কিছু স্বস্তি প্রদান করে। দৈনিক উত্তাপের হ্রাস-বৃদ্ধি সর্বাধিক শুস্ক গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষায় এটি সর্বনিম্ন। জানুয়ারী শীতলতম মাস। এই মাসে সর্বাধিক উত্তাপ ২৬° সেঃ (ফাঃ) ও সর্বনিম্ন উত্তাপ ১৩০ সেঃ (৫৫০ ফাঃ)। পশ্চিমী ঝামেলা-জনিত শৈত্যপ্রবাহে উত্তাপ ৭০-৮০ সেন্টিগ্রেডেও কখনও কখনও নেমে যায়। শীতে দিবাভাগ আরামদায়ক উষ্ণ ও রাত্রি শীতল এবং শুদ্ধ: মৃদু বাতাস প্রবাহিত হয়।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহে আর্দ্রতা স্বভাবত অধিক (৭৫৩৬-৮৫%)। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমণকালের শেষে এই আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। গ্রীষ্ম বৎসরের শুদ্ধতম ঋতু। এই সময় বায়ুর আর্দ্রতার পরিমাণ সন্ধ্যাবেলার দিকে মাত্র ২৫%-৩৫% থাকে।

মৃত্তিকা (Soil): জঙ্গলমহলের এক বৃহত্তম অংশ নীস মৃত্তিকার অন্তর্গত। এই জাতীয় মৃত্তিকা মূল শিলা নীস থেকে গঠিত। এই মৃত্তিকা সাধারণতঃ বালু মিশ্রিত দো-আঁশ প্রকৃতির এবং কম উর্বর। ধৌত প্রক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম নীচে চলে গেলে ও উপরের অংশে লৌহ ও অ্যালুমিনিয়ামের সঞ্চয়ে নীস মৃত্তিকায় ল্যাটেরাইজেশন হয়েছে বলা হয়। পুরুলিয়ায় অধিকাংশ মৃত্তিকা হাল্কা লাল থেকে বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এই মৃত্তিকায় ক্ষয়কার্য খুব অধিক। নীস পর্যায়ক্রমে জলসিক্ত ও শুদ্ধ হবার ফলে অক্সিজেন প্রক্রিয়ায় উপত্যকার উর্ধ্ব অংশে শিলার বিচুর্ণীভবন ঘটে থাকে। এই বিচুর্ণীকৃত দ্রব্যাদি উপত্যকার নিম্নাংশে বৃষ্টি-বাহিত হয়ে জমা হয়। এর ফলে উপত্যকার এই অংশ উর্বর। কিন্তু উচ্চ ভূমিভাগে ধান-চাষ হলেও উপরের অংশে এই মৃত্তিকায় নিকৃষ্ট শ্রেণীর দানাশস্য, ডাল ও কিছু তৈলবীজ জন্মায়।

প্রাচীন পলিগঠিত ভূ-ভাগ রয়েছে বাঘমুন্ডি পাহাড়ের উত্তরে, জঙ্গলমহলের পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এই মৃত্তিকার গ্রথন (texture) বা বুনন স্কুল, বর্ণ রক্তাভ এবং এতে ক্ষারজাতীয় পদার্থের প্রাধান্য। সুবর্ণরেখা, কাঁসাই, দামোদর প্রভৃতি নদী-বরাবর তটবর্তী এলাকায় নবীন পলিমাটি গঠিত হতে দেখা যায়। এই মৃত্তিকার প্রথন সুক্ষ ও এটি খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উর্বর এবং ধান চাষেই এর ব্যবহার অধিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01