welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতে জনসংখ্যা বণ্টনের তারতম্যের কারণ:

ভারতে জনসংখ্যা বণ্টনের তারতম্যের কারণ:


ভারতের মত বিশাল দেশে ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, খনিজ, বনজ সম্পদের তারতম্য ও কৃষিজ, শিল্পজ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির পার্থক্যে জনবসতির বণ্টনও হয়েছে অসম। নিম্নে এদের আলোচনা করা হল।

[ক] প্রাকৃতিক কারণঃ |১| ভূ-প্রকৃতিঃ উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকার অনেকাংশ দুর্গম, রাস্তাঘাট ও রেলপথের প্রসার হয় নি। পশ্চিমে রাজস্থানের শুষ্ক মরু অঞ্চল, মধ্যভাগের বনাকীর্ণ মালভূমি ইত্যাদি জনবিরল। অপরপক্ষে নদীগঠিত সমভূমি, যেমন- গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও ব-দ্বীপ এবং মহানদী, গোদাবরী ইত্যাদি নদীর ব-দ্বীপ এবং উপকূলের সমভূমি তেমনি জনবহুল।

[২] নদ-নদীঃ ভারতের জনজীবনে এবং জনসংখ্যার বণ্টনে নদীর প্রভাব সুদূর প্রসারী। জলপথের সুবিধা, সেচের ও পানীয় জলের সুবিধায় নদী অথবা খালের ধারে কৃষি-ভিত্তিক জনবসতি গড়ে ওঠে। নদীর প্লাবনভূ মিগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষিসমৃদ্ধ এবং ঘন জনবসতি যুক্ত। গঙ্গা, মহানদী, ব্রহ্মপুত্র, কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী নদীর প্লাবনভূমিগুলি ঘন জনবসতিপূর্ণ।

[৩] মৃত্তিকা: ভারতের উর্বর পললসমৃদ্ধ সমভূমির মৃত্তিকা কৃষি-নির্ভর এক বিপুল জনবসতিকে আকৃষ্ট করেছে। উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমি অঞ্চলে নদীগঠিত পলি মৃত্তিকা অথবা উপকূলের পলল মৃত্তিকার জন্য ঘনবসতি গড়ে ওঠা ছাড়াও দাক্ষিণাত্যে এবং হিমালয়ে নদীর পলল-সমৃদ্ধ উপত্যকায়ও মাঝে মাঝে যথেষ্ট বসতি গড়ে উঠেছে।

[৪] জলবায়ুঃ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও উদ্বুতা কৃষিকার্যের উপযোগী। এই কারণে বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, উত্ত রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ইত্যাদি বৃষ্টি-বহুল উর্বর অঞ্চল জনবহুল। অপরপক্ষে রাজস্থান জনবিরল।

[৫] খনিজ সম্পদঃ খনিজদ্রব্য থাকায় অন্যান্য অবস্থা বিশেষ অনুকূল না হলেও অনেক সময় ঘনবসতি গড়ে উঠে। বিহারের সাকুচি একটি ক্ষুদ্র গ্রাম ছিল। রানীগঞ্জ, ঝরিয়ার কয়লা, সিংভূম ও ওড়িশার আকরিক লৌহ, চুনাপাথর ও ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করে সারি স্থলে বিরাট জামসেদপুর শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠে ঘন জনবসতি গড়ে তুলেছে।

[খ] অপ্রাকৃতিক কারণ:

[১] শিল্পোন্নতিঃ কৃষিজ, খনিজ, বনজ ও প্রানীজ সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমেই শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠে। ফলে শিল্পাঞ্চলের লোকসংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেয়ে জনবহুল হয়। কলকাতা, হাওড়া শিল্পাঞ্চলে জনবসতি খুবই ঘন।

[২] পরিবহন ব্যবস্থা: রেল, সড়ক ও জলপথের সুযোগে জনবসতি বৃদ্ধি পায়। উন্নত রেল, সড়ক ও নদীপথে যোগাযোগ থাকায় গাঙ্গেয় উপত্যকায় কৃষি ও শিল্পের উন্নতি ঘটেছে এবং ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে।

[৩] ঐতিহাসিক কারণ: ইতিহাস-প্রসিদ্ধ স্থানগুলিতে প্রাচীন বসতির পাশাপাশি নতুন জনবসতিও গড়ে ওঠে। উদাহরণঃ মুর্শিদাবাদ, আগ্রা, মগধ, জয়পুর প্রভৃতি।

[৪] ধর্মীয় কারণ: ধর্মস্থানগুলিতে ধর্মপিপাসুদের চাহিদায় জনবসতি গড়ে ওঠে। উদাহরণঃ বৃন্দাবন, মথুরা, বারাণসী ইত্যাদি।

[৫] শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কারণঃ শিক্ষা ও গবেষণা, সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি-লিন্দু জনগণকে আকৃষ্ট করে। শান্তিনিকেতন, কলকাতা, লন্ডনে এই কারণে জনবসতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

[৬] সরকারী নীতি: রাজধানী স্থানান্তর (উদাহরণ: গৌহাটির স্থলে দিসপুর, আমেদাবাদের স্থলে গান্ধীনগর), নতুন শিল্পাঞ্চল (হলদিয়া), মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (ফলতা), উপনগরী (বিধাননগর, কল্যাণী) ইত্যাদি গড়ে তোলার সরকারী নীতি জনবসতি বিকেন্দ্রীকরণে সাহায্য করেছে।

ভারতে জনসংখ্যার সমস্যা: ভারত কি জনাকীর্ণ দেশ?

ভারতের জনসংখ্যা সমস্যার স্বরূপটি বিশ্লেষণ করলে তা বোঝা যাবে। ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (প্রায় ১.৭৬%) যথেষ্ট বেশি। দেশ খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ বলা হলেও বহু লোক অনাহারক্লিষ্ট। সকল লোকের কর্মসংস্থান করা যায়নি। গৃহহীন লোকের সংখ্যা প্রচুর। শিক্ষা ও স্বাস্থের মান ভাল নয়। বসতি বিস্তারের ফলে কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে অথচ খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। দেশে চাহিদার তুলনায় সম্পদের যোগান অপ্রতুল। উৎপন্ন সম্পদ থেকে যে পরিমাণ জনসংখ্যার ভোগ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা যায় তাই কাম্য জনসংখ্যা। জনসংখ্যা এর বেশি হলেই সম্পদ যোগানে ঘাটতি হয় এবং তা জনসংখ্যাজনিত সমস্যার রূপ নেয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো এবং উপযুক্ত পরিমাণ কর্ম এবং সম্পদ সৃষ্টি করা গেলে এই সমস্যা হ্রাস করা যায় (উদাহরণ: জাপান)। সুতরাং বর্তমানে ভারত যথার্থই একটি জনবহুল বা জনাকীর্ণ দেশ।

পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এত ঘন জনবসতি কিন্তু অরুণাচলপ্রদেশ, সিকিম এত জনবিরল কেন?

পশ্চিমবঙ্গ, কেরলে সুবিস্তৃত সমভূমি, উর্বর পলিগঠিত মৃত্তিকা, জলসেচ ইত্যাদি কৃষিকাজে সমৃদ্ধি এনেছে। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত বলে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যও এই দুই রাজ্যে উন্নত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জনবসতির ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম পার্বত্য রাজ্য, বনাচ্ছাদিত সমভূমির অভাবে বসতি বিস্তার বা কৃষি কাজের সুযোগ বেশি ঘটেনি। যাতায়াত ব্যবস্থার অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পের উন্নতিও পশ্চাদ্‌স্পট। ফলে এই দুই রাজ্যে জনঘনত্ব স্বাভাবিকভাবেই কম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01