অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল প্রভাব
(1) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অনেক ক্ষেত্রে সম্পদ উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায়। কৃষি, শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্যে শ্রমিকের জোগান (Labour Supply) বৃদ্ধি পায়।
(ii) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেঙ্গ শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ঠিকই, 34.7. শিল্পকেন্দ্রগুলিতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি নাও গে পারে। তবে শ্রমনিবিড় (Labour intensive) কলকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে শ্রমিকের চরি বৃদ্ধি পায়।
(iii) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সম্পদ উৎপাদনে সমর্থ জনগোষ্ঠীর আয়তন বৃদ্ধি পায়।
(iv) অধিক জনসংখ্যার অর্থ অধিক সম্পদ উৎপাদন। তা ছাড়া সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে অি মূলধন ভাণ্ডার দেশে গড়ে উঠবে।
(v) শিল্পায়ন ও নগরায়ণ ঘটে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে। এর ফলে বাজারের আয়তন বৃদ্ধি পা
(vi) অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
(vii) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শ্রমশক্তির জোগান বৃদ্ধি পায়।
(vii) মানুষ নিজেই যেহেতু সম্পদ, সেইজন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানব সম্পদের পরিমাণ পায়।
(ix) শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিকূল প্রভাব:
দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে নানাবিধ প্রতিকূল প্রভাব দেখা যায়-
(i) দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটলে দেশে অপুষ্টি ও দারিদ্র্য দেখা যায়। যেসব দেশে সম্পদ সীমিয় সেই সবদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। কারণ জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে জ্যামিতি হারে (Geometic Progression) i e বৃদ্ধি পায় পাটিগণিতের নিয়ম অনুসারে 4.8. 2. 16, 32, 64 etc. কিন্তু খাদ্যের উৎপাদ
2, 3, 4, 5, 6, 8, 10 etc.
(ii) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ঘটনা দ্রুত হারে ঘটলে, দেশে সম্পদ উৎপাদনে অক্ষম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অনুৎপাদক মানুষের ক্রমবর্ধমান চাপ দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে।
(iii) জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যদি সম্পদ উৎপাদনের হার অপেক্ষা অধিক হয় তাহলে মাথাপিছু উৎপাদনের হার কমবে। উৎপাদনের হার কমলে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
(iv) অনিয়ন্ত্রিতভাবে জনসংখ্যার বৃদ্ধি হলে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, দেশে বেকারত্ব একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। অধিকাংশ অনুন্নত দেশে ছদ্মবেকারত্ব লক্ষ করা যায়। পরিবারের কর্মহীন সদস্যরা একখণ্ড জমিতে শ্রমদান করতে থাকে, যে শ্রমের হয়তো প্রয়োজন ছিল না। ভারতে এ ধরনের ছদ্মবেকারত্ব প্রবল আকার ধারণ করেছে।
(v) অধিক জনসংখ্যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। অধিক জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় বাসস্থান জোগান দিতে গিয়ে বনভূমি নষ্ট করতে হয়। কৃষিজমির ওপরেও অধিক মানুষের চাপ পড়ে এবং জমির অবক্ষয় ঘটে।
(vi)দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর্থসামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
(vii) তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনযাত্রার নিম্নমান দেখা যায়। যেমন- চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা কমে যাওয়া, পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি, অপরাধ প্রবণতাবৃদ্ধি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনুন্নতি ঘটে।
(viii) অত্যধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
(ix) জনসংখ্যা অত্যধিক হারে বৃদ্ধি ঘটলে মূলধনী সঞ্চয়ের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যায়।
(x) দ্রারিদ্র্য এবং অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়।