ভারতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসমূহ
জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসমূহের অবস্থান অনুযায়ী ভারতকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করা যায় যথা-
(১) উত্তর ভারত, (২) উত্তর-পশ্চিম ভারত, (৩) উত্তর-পূর্ব ভারত, (৪) পূর্ব ভারত, (৫) পশ্চিম ভারত, (৬) মধ্য ভারত ও (৭) দক্ষিণ ভারত।
(১) উত্তর ভারত
(ক) জম্মু ও কাশ্মীরঃ (১) নিম্ন ঝিলাম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র: ঝিলাম বা বিতস্তা নদীর ওপর। (২) সালাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পঃ রিয়াসীর কাছে চন্দ্রভাগা বা চেনাব নদীর ওপর।
(খ) হিমাচল প্রদেশঃ (১) পত্বাধ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিপাশা নদীর ওপর। (২) দেহার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, শতদ্রু নদীর ওপর। (৩) বয়রা-সিউল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বয়রা, সিউল ও ভালেদ নদী তিনটির ওপর। (গ) উত্তরপ্রদেশঃ (১) গঙ্গাখাল জলবিদ্যুৎ গ্রীড, (২) রামগঙ্গা প্রকল্প, (৩) রিহান্দ প্রবয়, (৪) যমুনা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
(২) উত্তর-পশ্চিম ভারত
(ক) পান্তাবঃ (১) ভাক্সা-নাঙ্গাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, পাঞ্জাবে শতদ্রু নদীর ওপর। (২) উল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, উল নদীর ওপর।
রাজস্থানঃ (১) রানা প্রতাপসাগর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, (২) জওহরসাগর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
(৩) উত্তর-পূর্ব ভারত
(ক) মণিপুরঃ (১) লোকটাক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র
পূর্ব ভারত
(ক) ঝাড়খণ্ডঃ (১) দামোদর নদী প্রকল্প।
(খ) ওড়িশাঃ (১) হীরাকুঁদ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহানদীর ওপর। (২) চিপলিমা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহানদীর ওপর।
(গ) পশ্চিমবঙ্গঃ (১) ম্যাসেজ্জোর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ময়ূরাক্ষী নদীর ওপর। (২) জলঢাকা বিদ্যুৎ প্রকল্প, উত্তরবঙ্গে জলঢাকা নদীর ওপর। (৩) সিদ্রাপঃ দার্জিলিং শহরে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবার জন্য দার্জিলিং-এর অদূরে এই অতি ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি অবস্থিত। এটি ভারতের প্রাচীনতম (১৮৯৭) জলবিদ্যুৎকেন্দ্র।
(৫) পশ্চিম ভারত
(ক) মহারাষ্ট্রঃ (১) খোপলি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, (২) ভিরা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, (৩) ভিবপুরী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
(৬) মধ্যভারত
(ক) মধ্যপ্রদেশ: (১) গান্ধীসাগর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চম্বল নদীর ওপর।
দক্ষিণ ভারত
(ক) কর্ণাটক: (১) শিবসমুদ্রম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পঃ ভারতের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাচীন (১৯০২ খ্রি)। কাবেরী নদীর শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত থেকে এই কেন্দ্রে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাচীনা হয়েছে। কোলার স্বর্ণখনি ও কাছাকাছি শহরগগুলিতে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। (২) সরাবতী জলবিদ্য প্রকল্পঃ সরাবতী নদীর ওপর। (৩) কালি নদী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ কালী নদীর ওপর।
তামিলনাড়ুঃ (১) পাইকারা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: নীলগিরি পাহাড়ে পাইলেরা মাদীর ওপর। (২) মেনুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পঃ কাবেরী নদীর ওপর। (৩) কুন্দা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, (৪) পেরিয়ার, (৫) পাপনাশম, টে কোদায়ার, (৭) সোলায়ার প্রভৃতি প্রকল্পেও যথেষ্ট বিদ্যুৎ উপাদন করা হয়।
(খ) অন্দ্রপ্রদেশঃ (১) শ্রীশৈলম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কৃষ্মানদীর ওপর। (২) মাচকুন্দ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাচকুন্দ নদীর ওপর। (৩) নাগার্জুন সাগর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কৃক্মা নদীর ওপর। (৪) উচ্চ সিলেবু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিলেবু নদীর ওপর। (৫) নিম্ন সিলেবু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, (৬) নিজাম সাগর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গোদাবরীর উপনদী মঞ্জিরার ওপর।
(ঘ) কেরালাঃ (১) ইদুক্তি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পেরিয়ার নদীর পার্বত্য প্রবাহে। (২) শবরগিরি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, (৩) পল্লীভাসাল, (৪) পেরিয়াঙ্কাল, (৫) পান্নিয়ার, (৬) কাটিয়াড়ি প্রভৃতি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য।
▲ উত্তর ও পূর্ব ভারতে মূলত তাপবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় কিন্তু দক্ষিণ ভারতে মূলত জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় কেন?
উত্তর ও পূর্ব ভারতে মূলত তাপবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। কারণঃ
• এই অঞ্চলগুলি কয়লাক্ষেত্রের নিকটবর্তী অথবা খনিগুলির সাথে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা দ্বারা যুক্ত।
• খরস্রোতা নদীগুলি জনবহুল সমভূমি এলাকা থেকে বহু দূরে পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত।
• ছোটো ছোটো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে খরচ কম বলে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
দক্ষিণ ভারতে মূলত জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। কারণঃ
• দক্ষিণ ভারতে নদীগুলি মালভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত বলে খরস্রোতা।
• মালভূমি অঞ্চলে স্বাভাবিক অবনমিত স্থান থাকায় জলাধার নির্মাণের সুবিধা এবং কৃত্রিম খরস্রোত সৃষ্টির ও সুবিধা।
• জলাধার ও খরস্রোতা নদীগুলি শহর ও শিল্পাঞ্চলের অদূরেই অবস্থিত হওয়ায় সুনিশ্চিত চাহিদা বিদ্যমান এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় কম।
• ইউনিট-পিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে উৎসাহ।
• কয়লাখনি কম থাকায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব আরোপ।
• স্বাধীনতার আগে থেকে ব্রিটিশ উদ্যোগে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের যে প্রবণতা ছিল তা স্বাধীন ভারতেও রয়েছে।