welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

তিস্তা উপত্যকার পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চল

তিস্তা উপত্যকার পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চল


 এই অঞ্চল সাধারনভাবে অনুচ্চ (২০০-৮০০ মি.) হলেও স্থানবিশেষে উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে। দার্জিলিং হিমালয়ের উচ্চতম শৃঙ্গ ঋষিলা (৩,১৩০ মি.) তিস্তার পূ বদিকে পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। তিস্তার পূর্বদিকে রয়েছে দূরবীন দারা পর্বত। কালিম্পং শহরের কাছে দুরবিনদারা শৃঙ্গ, ১,৮০০ মিটার উঁচু। জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর দিকে সিচুলা পর্বত। তারও পূর্বে অনুচ্চ বক্সা রেঞ্জ ও জয়ন্তী পাহাড়। তিস্তার পূর্বদিকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল অসংখ্য নদী দ্বারা ক্ষয়ের ফলে ব্যবচ্ছিন্ন শৈল শ্রেণি গঠিত। দার্জিলিং হিমালয়ের এটিই সর্বাধিক ক্ষয়ের অন্তর্গত হয়েছে। পর্বত গাত্রের ঢাল মৃদু থেকে মাঝারী (১০০-৩০০) বেশিরভাগ জায়গায়।

পার্বত্য অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য: (i) অত্যন্ত বন্ধুর ভূ-প্রকৃতি। (i) পাহাড়ের ঢাল খুব খাড়াই। (১) স্থানে স্থানে গভীর গিরিখাত। (iv) সরু শৈলশিরা। (৮) পাললিক ও রূপান্তরিত শিলাগঠিত ভূমিরূপ প্রাকৃতি এই পার্বত্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য।

পশ্চিমের মালভূমি ও তরঙ্গায়িত সমভূমি অঞ্চল: এই অঞ্চল ছোটোনাগপুর মালভূমির পূর্বপ্রান্তের ক্ষয়প্রাপ্ত নিম্ন-মালভূমির অন্তর্গত, গঠন মূলতঃ গ্রানাইট ও নীস্ শিলা গঠিত। সমগ্র পুরুলিয়া জেলা এবং বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত।

গঠন- মূলতঃ গ্রানাইট ও নীস্ শিলা গঠিত।

ভূমিরূপ- সমগ্র অঞ্চলটি সুবর্ণরেখা, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, কংসাবতী প্রভৃতি নদীগুলি দ্বারা ক্ষয়িত হয়ে এবং আবহবিকার, পূঞ্জক্ষয় প্রভৃতি নগ্নীভবন প্রক্রিয়ায় অবনমিত হয়ে সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। কেবল মাঝে মাঝে কঠিন শিলা গঠিত কয়েকটি পাহাড় বা টিলা ক্ষয়কার্য প্রতিরোধ করে আশপাশের সমভূমি থেকে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এটি একটি প্রাচীন মালভূমির বর্তমান ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমিরূপ। এর চরম উচ্চতা ও স্থানীয় উচ্চতা দুই-ই মধ্যম প্রকৃতির। চরম উচ্চতা বৃদ্ধি পায় পশ্চিমের মালভূমির পশ্চিম ও দক্ষিণদিকে, যেখানে উচ্চ ভূ মিভাগ প্রায় সমতল ও অরণ্যাবৃত। অন্যত্র ভূমিভাগ সামান্য তরঙ্গায়িত এবং মাঝে মধ্যে কটিন শিলা গঠিত ছোটো ছোটো পাহাড় ক্ষয়কার্য প্রতিরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চল যে এককালের উচ্চ মালভূমি থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানের সমপ্রায়ভু মিতে পরিণত হয়েছে অবশিষ্ট পাহাড় গুলিই (যেমন পাঞ্চেৎ পাহাড়) তার সাক্ষ্য বহন করে।

এই অঞ্চলকে (ক) উচ্চ সমপ্রায়ভূমি এবং (খ) নিম্নের তরঙ্গায়িত সমভূমি -এই অংশে বিভক্ত করা যায়। ৩০০ মিটার সমোচ্চ রেখাটি এই দুটি অংশকে পৃথক করছে। (ক) উচ্চ সমপ্রায়ভূমি প্রকৃতপক্ষে রাঁচী মালভূ মির পশ্চিমদিকের বহিঃ প্রসূত অংশের অবশিষ্ট ভূমিরূপ। এটি সুবর্ণরেখা, কংসাবতী, দামোদর প্রভৃতি নদীর জলবিভাজিকারূপে কাজ করছে।

একেবারে উত্তর-পশ্চিম পুরুলিয়া, রাঁচী ও হাজারিবাগের মিলনকেন্দ্রটি উত্তরের ঘোড়ামারা পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডঙ্কা গড়া নালা (Danka Garha Nala)-র সঙ্গমে অবস্থিত। এখান থেকে পূর্ববাহিনী সুবর্ণরেখা দক্ষিণদিকে কনুই-এর ন্যায় বাঁক নিয়ে জেলার পশ্চিম সীমা নির্দেশ করছে এবং রাঁচী-মুরি থেকে ঝালদা-বলরামপুর পর্যন্ত একদা জিহ্বার ন্যায় প্রসারিত শৈলশ্রেণির অভিক্ষিপ্তাংশ (Spur) ব্যবচ্ছিন্ন করছে। এই কর্তিত জিহ্বার ন্যায় ভূমিরূপের পূর্বাংশ অযোধ্যা পাহাড় এবং পুরুলিয়া তথা জলাল মহলের প্রধান উচ্চভূমি অঞ্চল। এটি কংসাবতী ও সুবর্ণরেখা নদীদ্বয়ের মধ্যবর্তী জলবিভাজিকারূপে কাজ করছে। অযোধ্যা পাহাড়ের পশ্চিম ও দক্ষিণে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকগুলি ক্ষয়জাত পাহাড় রয়েছে। পাহাড়শ্রেণির গড় উচ্চতা ৫০০ মিটার ও বিস্তার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর। দক্ষিণ-পশ্চিমে ৬৮৮ মিটার উচু চামটু (Chamtu) উচ্চতা সর্বাধিক। জাজুহাটু গম্বুজ (Jajuhatu dome) এ দর্শনীয় পাহাড়, ৫৪২.৫ মি. উচু। এখানে কেন্দ্রবিমুখ জল-নির্গম প্রণালী দৃষ্ট হয়।

বাঘমুন্ডি-অযোধ্যা উচ্চভূমির প্রধান শিখরগুলির মধ্যে উত্তর-পশ্চিমদিকে গোঞ্জা পাহাড় ও গুগুই পাহাড় (উভয়ই ৫৮০.৫ মি.উচু এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বদিকে গোগাবুরু (৬৭৭ মি.) ও কর্মা (৬৫৩ মি.) পাহাড়।

দলমা-লাভা গঠিত পাহাড়শ্রেণি অযোধ্যা পাহাড় অপেক্ষা উচ্চতায় কম এবং ক্রমশঃ ঢালু হয়ে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনিপুরের ক্ষয়জাত সমভূমিতে নেমে গেছে। পুরুলিয়া জেলার উত্তর পশ্চিমদিকে রয়েছে ঘোড়ামারা উচ্চভূমি। বিজলি পোখার (৬২১ মি.) পূর্বপার্শ্বে উল্লেখযোগ্য শিখর। জেলার পূর্বদিকে রয়েছে পঞ্চকোট বা পাঞ্চেৎ পাহাড় (সর্বাধিক উচ্চতা ৬৪৩.৫ মি.)।

তরঙ্গায়িত সমভূমি বা ক্ষয়জাত সমভূমি: এই সমভূমির উভয় পার্শ্বে রয়েছে দামোদর উপত্যকা ও বাগোদর উচ্চভূমি। দক্ষিণে দলা পাহাড় ও পূর্বে তরঙ্গায়িত ও স্থানীয়ভাবে ক্ষয়িত ল্যাটেরাইট-অধ্যুষিত সমভূ মি। এই সমভূমি অঞ্চলে ক্ষয়কার্য এত নিপুন ভাবে হয়েছে যে, বিভিন্ন কাঠিন্যের শিলা গঠনও ক্ষয়িত হয়ে অবনমিত হয়েছে এবং সমপ্রায়ভূমি গঠনে (Peneplanation) প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে নি। তবে উত্তরে কতিপয় অতি কঠিন শিলা-গঠিত বিচ্ছিন্ন পাহাড় এই সমপ্রায় ভূমিরূপে বৈচিত্র এনেছে।

ছোটোনাগপুর মালভূমির যে অংশটি বাঁকুড়া জেলায় প্রবেশ করেছে সেখানে রয়েছে বাঁকুড়ার সর্বাধিক উচ্চতাসম্পন্ন দুটি পাহাড় শুশুনিয়া (৪৩৯.৫মি.) ও বিহারিনাথ (৪৩৯.৫ মি.)।

শুশুনিয়া পাহাড় পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। উইলিয়াম হান্টার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন বাঁকুড়ার ভূ-প্রকৃতি "পলিগঠিত সমভূমি, তরঙ্গায়িত সমভূমি বিচ্ছিন্ন পাহাড় এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শৈলশিরায় গিয়ে মিশেছে, যা আবার মধ্য ভারতের মালভূমির অগ্রবর্তী দ্বারী হিসেবে দন্ডায়মান রয়েছে।"

ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনিপুরের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাংশে উচু নীচু ভূভাগ, ছোটোনাগপুর মালভূ মির প্রসারিত অংশ তরঙ্গায়িত কঠিন ল্যাটেরাইট গঠিত ভূভাগ গঠন করে পর্যায়ক্রমে উত্তল ও অবতল ভূ মিরূপে শেষ হয়ে দক্ষিণ দিকে পলিগঠিত সমভূমিতে এসে মিশেছে। বিচ্ছিন্ন পাহাড়গুলোর মধ্যে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, দলমা পাহাড়, ঘোড়ামারা পাহাড়, পাঞ্চেত পাহাড়, বাঁকুড়ার বিহারীনাথ ও শুশুনিয়া পাহাড় প্রভৃতি। অয্যোধা পাহাড়ের গোগাবুরু (৬৭৭ মিটার) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

• মালভূমির ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য: (i) অনুচ্চ মালভূমি। পশ্চিমদিকে গড়ে ৩০০ মিটার উঁচু হলেও পূর্বদিকে তা ক্রমশ নেমে ১৫০ মিটার হয়েছে। (ii) ভূমিভাগের ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বে। (iii) এটি একটি ক্ষয়জাত মালভূমি। (iv) স্থানে স্থানে পাহাড় ও উপত্যকা বা রিজ এন্ড ভ্যালি ভূমিরূপ দ্বারা চিহ্নিত। (v) বিচ্ছিন্ন পাহাড় তরঙ্গায়িত সমভূমির বৈশিষ্ট্য।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01