ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গঙ্গাসহ অন্যান্য নদীগুলির ভূমিকা:
উত্তর ভারতে গঙ্গা, সিন্ধু, পূর্ব ভারতে গঙ্গা, রস্তুপুত্র, মহানদী, দক্ষিণ ভারতে কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী প্রভৃতি নদী স্ব স্ব অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
[১] কৃষিকাজেঃ নদী অববাহিকার সমভূমি নদীর পলল সঞ্চয়ে সমৃদ্ধ বলে উর্বর। সিন্ধু-গঙ্গা অববাহিকা ধান, গম, মিলেট, ভুট্টা, আখ, তুলো, তৈলবীজ, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মহানদী অববাহিকা ধান, পাট, ডাল, তৈলবীজ; কৃষ্ণা-কাবেরী-গোদাবরী অববাহিকা ধান, মিলেট, আখ, তুলো, তৈলবীজ, তামাক, রবার প্রভৃতি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য।
(২) জনবসতি বিস্তারে: নদী গঠিত সমভূমিগুলিতেই ভারতের অধিকাংশ জনবসতি গড়ে উঠেছে। এর কারণ সমভূমি উর্বর কৃষিযোগ্য, নদীপথ যাতায়াতের মাধ্যম, পাণীয় জলের ও সেচের উৎস প্রভৃতি। গঙ্গা নদী সমভূমি পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল।
শিল্পোন্নোতিতে। বহু শিল্পই গঙ্গা, কৃষ্ণা, গোদাবরী প্রভৃতি নদীর দুধারে গড়ে উঠেছে। নিম্নগঙ্গা নদীর দু'ধারে হুগলী শিল্পাঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য শিল্পের একদেশীভবনের উদাহরণ। বহু শিল্পই পরিবহণের সুবিধায় ও জলের প্রয়োজনীয়তায় নদীর দুধারে গড়ে ওঠে।
(৪) ব্যাবসা-বাণিজ্যেঃ জলপথ সবচেয়ে সুলভ পরিবহণ পথ হওয়ায় ব্যাবসা বাণিজ্যের এক উল্লেখযোগ্য অংশ জলপথে সাধিত হয়। গঙ্গা নদীর দু ধারে অনেক শিল্প বাণিজ্য কেন্দ্র (কলকাতা, পাটনা, এলাহাবাদ, কানপুর) গড়ে উঠেছে।
(৫) মৎস সংগ্রহে: নদী থেকে মৎস সংগ্রহ করে ভারতের লক্ষ লক্ষ লোক জীবিকা নির্বাহ করে। গঙ্গা নদী ইলিশ সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত। এজন্য ভারতে গঙ্গাসহ প্রধান নদীগুলির দুধারে অনেক ধীবর বসতি দেখা যায়।
(৬) বহুমুখী নদী প্রকল্পে। এরূপ প্রকল্পে মূল নদী ও বড় বড় উপনদীগুলিতে বাঁধ দিয়ে যে সকল প্রধান উদ্দেশ্য সাধন করা হয় তা হল-
[ক] বন্যা নিয়ন্ত্রণ-এতে জীবন ও সম্পত্তি বিশেষতঃ কৃষি ফসল বাঁচে।
(খ) জলসেচ-নদীর ওপর গড়ে ওঠা জলাধার থেকে সেচের জল সরবরাহ করায় ভারতে কৃষি উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
(গ) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন- জলাধারগুলি থেকে জল ছেড়ে তীব্র স্রোত উৎপন্ন করে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় যা শিল্পের উন্নতির সাহায্য করে।
(ঘ) পাণীয় জল সরবরাহ-নদীর জল নিয়ে পরিশ্রুত করে পাণীয় জল সরবরাহ করা হয়।