welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য (Biodiversity of Sundarban)

সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য (Biodiversity of Sundarban)


ম্যানগ্রোভ জন্মানোর অনুকূল পরিবেশ ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য (Conditions Favourable for the Growth of Mangroves and Plant Diversity): সুন্দরবনের অগভীর খাঁড়ি-অধ্যুষিত মোহনা ও উপকূ লীয় জলসিক্ত ও কর্দমযুক্ত ভূমিতে ক্রান্তীয় অঞ্চলের আদর্শ ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। ক্রান্তীয় জলবায়ু ও মৃত্তিকা ম্যানগ্রোভ ও অন্যান্য স্বাভাবিক উদ্ভিদের ব্যাপক বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এই বনভূমি এত গভীর ও ঘন যে, বনভূমিতে মধু, মোম ও কাষ্ঠসাংগ্রাহকদের প্রবেশ অসুবিধাজনক। ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের শ্বাসমূল মাটি ভেদ করে ওঠে এবং জোয়ারের জল সরে গেলে তা দেখতে পাওয়া যায়। সুন্দরবন অঞ্চলে ম্যানগ্রোভবৃক্ষাদির প্রাচুর্য দেখা যায়। এদের মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতি ম্যানগ্রোভ, লবণাক্ত এবং স্বাদু জলের Heritiera উদ্ভিদ। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং একসময় প্রাচুর্য ছিল কিন্তু বর্তমানে বিলায়মান বৃক্ষটির নাম সুন্দরী (Heritiera Littovalis)। সম্ভবত এ-থেকেই এই অঞ্চলের নাম সুন্দরবন হয়েছে।

সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘন বনভূমিতে আবৃত। এর এক বৃহৎ অংশ সংরক্ষিত অরণ্য। সমগ্র অঞ্চলে সুন্দরী বৃক্ষ দেখা যায়, যদিও তা সংখ্যায় কমে গেছে। এছাড়াও গরান, গেওয়া, গর্জন, হেতাল, কেওড়া, পশুর, শুধুল, হোগলা, বেত এবং অন্যান্য বিভিন্ন বৃক্ষ, ঘাস ও কাটাজাতীয় উদ্ভিদ ও লতাগাছ জন্মে। সুন্দরী সর্বাপেক্ষা মূল্যবান বৃক্ষ। কারণ এটি শক্ত, টেকসই এবং সুন্দর পালিশ ধরে বলে বাসগৃহ ও আসবাবপত্র নির্মাণে এই গাছের যথেষ্ট চাহিদা রহিয়াছে। গরান ও গর্জন গাছের ছাল চামড়া ট্যান করবার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই গাছগুলির কাঠ জ্বালানী, স্থানীয় অধিবাসীদের বাসগৃহের কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গেওয়া কাঠ দিয়াশালাই বাক্স ও প্যাকিং বাক্স তৈয়ারীতে কাজে লাগে। বনভূমি একটি নিয়মিত সরকারী আয়ের উৎস এবং স্থানীয় বহু অধিবাসীর জীবিকার সংস্থান করে। স্থানীয় অধিবাসীগণ মধু, মোম, গোলপাতা ও কাঠ সংগ্রহ করে জীবিকা অর্জন করেন।

প্রানী বৈচিত্র্য (Animal Diversity): সুন্দরবন অঞ্চলে অসংখ্য ধরণের জীবজন্তু আছে। সুন্দরবনের রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার-এর পৃথিবীজোড়া খ্যাতি আছে। অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে চিতা, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বন্যশূকর, বানর, বিষাক্ত সাপ প্রভৃতি। নদীনালা ও খাঁড়িগুলিতে রয়েছে প্রচুর কুমির, ঘড়িয়াল, কচ্ছপ, কাঁকড়া এবং নানধরণের মাছ। পক্ষীকূলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ'ল সীগাল, সারস, পাতিহাঁস, হাঁস, থুথু প্রভৃতি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবনের লোথিয়ান দ্বীপে গড়ে উঠেছে কুমীর প্রকল্প, সজনেখালিতে ব্র্যাঘ্র প্রকল্প, পাখিরালয় প্রভৃতি।

সুন্দরবনের নদী, নালা ও খাড়িগুলিতে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর মাছ রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিংড়ি, ভেটকি, ভোলা, পাশে, ট্যাংড়া, গুরজালি, কৈ, শিং, মাগুর প্রভৃতি মাছ।

জীব বৈচিত্র্য হ্রাস এবং হ্রাসের কারণ (Biodiversity lose and its causes): সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য বর্তমানে হ্রাস পাচ্ছে। এখন আর দেখা যায় না হগ ডিয়ার, সোয়াম্প ডিয়ার। দেখা যায় না জাভা দেশীয় গন্ডার, এশিয়াটিক বন্য জলমহিষ এবং কয়েক প্রজাতির কুমির, এগুলি সুন্দরবন থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01