welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

তাপমাত্রার উল্লম্ব বণ্টন (Vertical Distribution of Temperature) :

 তাপমাত্রার উল্লম্ব বণ্টন (Vertical Distribution of Temperature) :


বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণে গঠিত। এই গ্যাসগুলির মিশ্রণের অনুপাতও আবার সর্বত্র একই রকম হয় না। ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব কমতে থাকে। এর ফলে অপেক্ষাকৃত কম ঘনত্বের গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে অবস্থিত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আগত সৌর বিকিরণের ক্ষেত্রে আবার বিভিন্ন গ্যাস ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে। যেমন- ০, ক্ষুদ্র তরঙ্গের অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে এবং CO₂ দীর্ঘ তরঙ্গের বিকিরণকে শোষণ করে। আবার, বায়ুমণ্ডলের উপরিস্থিত স্তরগুলিতে সৌর বিকিরণের প্রভাবও অধিক। এসব কারণে ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধিতে উন্নতার তারতম্য লক্ষ করা যায়। উম্নতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলে 4টি সুস্পষ্ট স্তর সৃষ্টি হয়েছে।


1. ট্রপোস্ফিয়ার: এটি ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর। এর গড় উচ্চতা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 11 কিমি। এই স্তরের প্রতি কিমি উচ্চতা বৃদ্ধিতে উন্নতা গড়ে 6.4° সেঃ হারে কমতে থাকে এবং এর সর্বোচ্চ সীমায় উন্নতা কমে -80° সেঃ-এ এসে পৌঁছায়। আমরা জানি বায়ু তাপের কুপরিবাহী। তাই বায়ুমণ্ডল আগত সৌর বিকিরণ সরাসরি শোষণ করতে পারে না এবং খুব একটা উত্তপ্তও হয় না। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরটি পরিচলন, পরিবহণ ও বিকিরণ পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়। তবে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয় পরিচলন পদ্ধতিতে। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু প্রথমে উত্তপ্ত হয় এবং হালকা হয়ে আয়তনে বৃদ্ধি পায়, ফলে ঘনত্ব কমায় ঊর্ধ্বমুখী হতে বাধ্য হয়। এই অবস্থায় ওপরের দিকের তুলনামূলক শীতল ও ঘন বায়ু নিম্নমুখী হয়ে ওই স্থান দখল করে। ক্রমাগত এই প্রক্রিয়ায় পুনরাবৃত্তির দ্বারা ধীরে ধীরে সমগ্র বায়ুমণ্ডল উয় হয়ে ওঠে। তবে এটিও ঠিক যে মোট গ্যাসীয় উপাদানের 75% এবং জলীয় বাষ্প ও ধুলিকণার 99% এই স্তরেই রয়েছে। বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে এদের পরিমাণও কমতে থাকে। ফলে এর ঘনত্বও কমে আসে। তাই উচ্চতা বৃদ্ধিতে উন্নতাও হ্রাস পায়। এই উন্নতা হ্রাসপ্রাপ্তির হার প্রতি কিমিতে গড়ে 6.4° সেঃ-একে স্বাভাবিক তাপবিযুক্তি হার (Normal Lapse Rate) বলে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক তাপবিযুক্তি হারের বৈপরীত্য দেখা যায়। অর্থাৎ, উচ্চতা বৃদ্ধিতে উয়তা বৃদ্ধি পায়। একে উন্নতার বৈপরীত্য বা বৈপরীত্য উত্তাপ (Inver- sion of temperature) বলে। পার্বত্য উপত্যকায় মেঘমুক্ত রাতে এই পরিস্থিতি সর্বাধিক লক্ষ করা যায়। এখানে ভূপৃষ্ঠ রাতে তাপ বিকিরণ করলে সংলগ্ন বায়ু উয় ও হালকা হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং অপেক্ষাকৃত ভারী ও শীতল বায়ু পর্বতের ঢাল বেয়ে নিম্নমুখী হয়। এই শীতল বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু (Katabetic Wind) বলে। এই ক্যাটাবেটিক বায়ুর প্রভাবে উপত্যকার নিম্নভাগে উন্নতা অনেকটা কমে আসে এবং উপত্যকার ঢাল বরাবর যত ওপরের দিকে ওঠা যায় উন্নতা ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে

বিকিরজনিত উষ্ণতার বৈপরীত্য


2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার: ট্রপোস্ফিয়ারের ঠিক ওপরের এই স্তরটিতে বায়ুমণ্ডলের উয়তা উচ্চতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উয়তা বেড়ে প্রায় ০°-সেঃ-এ এসে পৌঁছায়। এই স্তরে উম্নতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ ওজোন গ্যাসের (O₃) উপস্থিতি। ভূপৃষ্ঠ থেকে 15-35 কিমি উচ্চতায় ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। ওজোন গ্যাস সূর্য থেকে আগত সৌর বিকিরণের ক্ষুদ্র তরঙ্গের অন্তর্গত অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করতে সক্ষম। এই কারণে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উয়তা উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাড়তে থাকে।


3. মেসোস্ফিয়ার: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরে মেসোস্ফিয়ার স্তরটিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবার তাপমাত্রা পুনরায় কমতে থাকে এবং ৪০ কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে-90° সেঃ-এ চলে আসে। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব খুব কম থাকায় সৌরশক্তি তেমনভাবে শোষণ করতে পারে না। উপরন্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে এই স্তর এতটাই ওপরে অবস্থিত যে পরিচলন পদ্ধতিতে তাপপ্রবাহ এখানে এসে পৌঁছায় না। এই স্তরে বায়ুর চাপও তাই অত্যন্ত কম। 50 কিমি উচ্চতায় বায়ুচাপ যেখানে গড় সমুদ্রতলের সাপেক্ষে ¹/ 1000 ভাগ। বা 1 মিলিবার সেখানে 80 কিমি উচ্চতায় ¹/ 100000 ভাগ 0.01 মিলিবার। সুতরাং বায়ুচাপ কম থাকায় বায়ুর ঘনত্বও কমে যায়।


4. থার্মোস্ফিয়ার: মেসোস্ফিয়ারের পরবর্তী এই থার্মোস্ফিয়ার স্তরটিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে। মহাশূন্যের মধ্য দিয়ে আসা সৌর বিকিরণ সর্বপ্রথম বায়ুমণ্ডলের এই স্তর ভেদ করায় বেশ কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া, আয়নিতকরণ পদ্ধতি ইত্যাদির কারণে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হওয়ায় এই স্তরে তাপমাত্রা অত্যন্ত দ্রুতহারে বাড়তে থাকে। থার্মোস্ফিয়ারে যেখানে 120 কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা থাকে প্রায় 500° সেঃ, সেখানে 200 কিমি উচ্চতায় তা বেড়ে দাঁড়ায় 700° সেঃ ও 480 কিমি উচ্চতায় 1232° সেঃ। প্রধানত সূর্য থেকে আগত হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মুক্ত ইলেকট্রন সমন্বিত সৌর ঝড়ের প্রভাবে থার্মোস্ফিয়ারে অবস্থিত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণু বিশ্লিষ্ট ও আয়নিত হয়ে পড়ে। উপরন্তু বায়ুর ঘনত্ব কম থাকায় এদের মুক্ত ইলেকট্রনের গড় মুক্ত প্রবাহপথ (free meanpath) অনেকটাই বেশি পায়, ফলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলি অত্যন্ত দ্রুত গতিশক্তি লাভ করে, যা বায়ুমণ্ডলে তাপের সঞ্চয় ঘটায়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01