welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আয়ন বায়ু বা পুবালি বায়ু (Trade wind or Easterlies):

আয়ন বায়ু বা পুবালি বায়ু (Trade wind or Easterlies):

স্যাকসন শব্দ 'Tradon' থেকে "Trade' কথাটি এসেছে। 'Tradon' শব্দের অর্থ-গতিপথ। এটি সামুদ্রিক নৌবিদ্যা সম্বন্ধীয় বাগধারা 'To blow trade' থেকে এসেছে যার অর্থ 'On a Constant Course' অর্থাৎ নিয়মিত গতিপথে। আবার, বাংলা প্রতিশব্দ 'অয়ন'-এর অর্থ পথ। যে বায়ু নির্দিষ্ট গতিপথে দুই (কর্কটীয় এবং মকরীয়) ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়, তাকে আয়ন বায়ু বলা হয়।


বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(i) এই বায়ু উভয় গোলার্ধে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে মোটামুটি 30° থেকে 0° সমাক্ষরেখার মধ্যে প্রবাহিত হয়।


(ii) স্থলভাগ ও জলভাগ মিলিয়ে পৃথিবীর প্রায় '/, অংশে এই বায়ু প্রবাহিত হয়।


(iii) ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে আসার সময় ডান দিকে বেঁকে গিয়ে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু রূপে এবং মকরক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে আসার সময় বাঁ দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু রূপে প্রবাহিত হয়


(iv) আয়ন বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণত পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে একে ক্রান্তীয় পুবালি বায়ু (Tropical Easterlies)-ও বলে। আন্তঃক্রান্তীয় অভিসৃত অঞ্চল (ITCZ)


(v) নিরক্ষীয় অঞ্চলে 5° উত্তর থেকে 5° দক্ষিণ সমাক্ষরেখার মধ্যে যে নিম্নচাপ অঞ্চলটি বিস্তৃত, তাকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ দ্রোণী (Equatorial trough of low pressure) বলে। এই নিম্নচাপ অঞ্চলে (দ্রোণী) উভয় গোলার্ধ থেকে প্রবাহিত আয়ন বায়ুর সমাবেশ ঘটে। তাই এই দুই বায়ুর মিলন অঞ্চলকে আন্তঃক্রান্তীয় অভিসৃতি অঞ্চল (Inter Tropical Convergence Zone, বা ITCZ) বলে


(vi) এই অভিসৃতি অঞ্চলে অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ নেই বললেই চলে, বায়ু প্রবাহিত হলেও তা অত্যন্ত মৃদু প্রকৃতির ও পরিবর্তনশীল এবং কোনোরূপ প্রবল বায়ুচাপের অবক্রম দেখা যায় না, এই অঞ্চলের বায়ু শান্ত থাকায় একে 'doldrums', বা 'শান্তবলয়' বলা হয়।


(vii) আয়নবায়ুকে ইংরেজিতে 'Trade Wind' বলে। তাই এই বায়ুকে আমরা বাণিজ্য বায়ু বলে থাকি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে Trade-এর অর্থ 'বাণিজ্য' নয়, এই কথাটি এসেছে সামুদ্রিক নৌবিদ্যা সম্বন্ধীয় বাগধারা 'to blow trade' থেকে, যার অর্থ 'On a constant course' অর্থাৎ 'নিয়মিত গতিপথে'। অবশ্য পালতোলা জাহাজের যুগে এই বায়ুকে অনুসরণ করে 'নির্দিষ্ট গতিপথে' জাহাজ চলাচল করার ফলে বাণিজ্যে অনেক সুবিধা হত।


(viii) উত্তর গোলার্ধের উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ঘণ্টায় 16 কিমি বেগে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগের বিস্তার বেশি হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু অধিক গতিবেগে ঘণ্টায় প্রায়, 22.4 কিমি বেগে প্রবাহিত হয়।


(ix) উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে অর্থাৎ, ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয় বলে আয়নবায়ুর উদ্বুতা বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতাও যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে যায়। ফলে এই বায়ু সহজে সম্পৃক্ত হতে পারে না। তাই সহজে বৃষ্টিপাতও ঘটাতে পারে না। আবার, এই বায়ু প্রধানত পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। সুতরাং এই বায়ু যখন সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহাদেশের পূর্বদিকে এসে উপস্থিত হয় তখন বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকার জন্য ওই অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু এই বায়ু যতই পশ্চিম দিকে যেতে থাকে ততই শুষ্ক হতে থাকে। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ একেবারে কমে যায়। অবশেষে এই বায়ু এত শুষ্ক হয়ে যায় যে বৃষ্টিপাত তো ঘটাতেই পারে না, উপরন্তু উক্ত অঞ্চলের জলকণাকে শোষণ করে নেয়। ফলে মরুভূমির সৃষ্টি হয়। সেই কারণে বলা যায়, আফ্রিকা মহাদেশের সাহারা অঞ্চল উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর দ্বারা এভাবেই মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01