পার্থিব বিকিরণ ও উত্তাপের ভারসাম্য (Terrestrial Radiation and Heat Budget):
আমরা আগেই প্রত্যক্ষ করেছি যে পৃথিবী একটি আদর্শ কৃষ্ণবস্তু। তাই পৃথিবী সূর্য থেকে আগত সৌর বিকিরণের (কার্যকরী বিকিরণ) যেটুকু অংশ লাভ করে তার প্রায় সবটাই বিকিরণ করতে সক্ষম হয়। যেহেতু পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 15° সেঃ, যা সূর্যের তুলনায় অনেক কম, তাই ভিনের সরণ সূত্র অনুযায়ী (Wien's displacement law) পৃথিবী থেকে বিকীর্ণ তাপের তরঙ্গদৈর্ঘ্য আগত সৌর বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তুলনায় 20 গুণ বেশি হয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবী সর্বাধিক 10 µm অর্থাৎ অবলোহিত (Infrared) তরঙ্গের মাধ্যমেই পৃথিবী তাপ বিকিরণ করে। একেই পার্থিব বিকিরণ (Terrestrial radiation) বলে। এ ছাড়া বিকিরণ পদ্ধতিতে যে পরিমাণ শক্তি পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে ফিরে যায় না সেটিই লীন তাপ ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তাপে রূপান্তরিত হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থেকে যায়।
পার্থিব বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান এবং জলীয় বাষ্প অবলোহিত তরঙ্গের (IR) উত্তম শোষক। তাই
ভূপৃষ্ঠ বিকিরিত অবলোহিত শক্তির বেশির ভাগ অংশই এই উপাদানগুলির দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। আবার, সূর্যরশ্মির পতনকোণের পার্থক্যের কারণে ও দিনরাতের হ্রাসবৃদ্ধির কারণে কোথাও অধিক সময় ধরে সৌর বিকিরণ লাভ করে, কোথাও আবার স্বল্প সময় ধরে এই শক্তি পেয়ে থাকে। ফলে সাধারণভাবেই একটি প্রশ্ন জেগে ওঠে যে ভূপৃষ্ঠে তাপের ভারসাম্য সারাবছর কীভাবে বজায় থাকে? এ প্রসঙ্গে হাফ্টন (Haughton) একটি মডেল প্রস্তুত করে সেখানে কীভাবে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল কার্যকরী সৌর
বিকিরণকে দীর্ঘ তরঙ্গরূপে বিকিরণের মাধ্যমে তাপের ভারসাম্য (Heat balance) রক্ষিত হয় তা দেখিয়েছেন।