welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অঞ্চলের গাঠনিক রূপ (Structure of Region):

অঞ্চলের গাঠনিক রূপ (Structure of Region):

আঞ্চলিক পরিমণ্ডলকে নির্দিষ্ট একটি বিন্যাসে কাঠামোভুক্ত করার প্রচেষ্টা পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই লক্ষ্য করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট পরিসীমায় এই ধরনের প্রচেষ্টা স্থানিক এবং কার্যকেন্দ্রিক একাধিক উপাদানগুলিকে অত্যন্ত স্পষ্ট করে তোলে। সংশ্লিষ্ট ধারণাটিকে গুরুত্ব দিয়েই "American Society for Planning" নামক প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে-'অঞ্চল এমন স্থান যার মধ্যে কয়েকটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কাঠামো বর্তমান।"ভৌগোলিক কাঠামোগত দিক থেকে যে-কোনো অঞ্চলেরই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। যেমন-

1. গ্রন্থি (Node): একটি অঞ্চলের অন্তর্বর্তী মুখ্য স্থলটিকে গ্রন্থি বলা হয়। এটি আসলে এমন একটি ক্রিয়াশীল স্থল, যেখানে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বাহ্যিক পরিবর্তনগুলি লক্ষ্য করা যায়। সামাজিক তথা অর্থনৈতিক মেরুকরণের মধ্য দিয়ে কোনও অঞ্চলকে ক্ষুদ্র বা বৃহদায়তন এক বা একের অধিক গ্রন্থিতে বিভক্ত করা হয়। আঞ্চলিক পরিসরে থাকা গ্রন্থিগুলিতেই পারস্পরিক সহযোগী কার্যাবলীর ঘনিষ্ঠ আদানপ্রদানমূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাধারণত, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের কার্যকরী প্রবাহপথটি সর্বদা এই ধরনের কেন্দ্রীয়স্থল অভিমুখী হয়ে থাকে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পেরক্স (Perraux), বাওডিভেলি (Baodiveli), ফ্রেইডম্যান (Friedman) প্রমুখ অন্তল বিশারদ তাঁদের প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বে আঞ্চলিক পরিসরের প্রতিটি গ্রন্থিগুলিকেই যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁদের মতে, বিভিন্ন শিল্পভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জনপ্রশাসনমূলক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলি গ্রন্থি অঞ্চলে একদিকে যেমন অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করে, তেমনই আবার সার্বিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে গ্রন্থিস্থলগুলিই সর্বাধিক প্রাধান্য পায় ।

সংলগ্ন পরিবলয় (Zone): পারিপার্শ্বিক কেন্দ্রীয় গ্রন্থিস্থলে প্রায় সম বা বিষমধর্মী যে পরিপূরক ক্ষেত্র গড়ে ওঠে, তাকে সংলগ্ন পরিবলয় বলা হয়। পরিসরগত দিক থেকে এই অংশটি গ্রন্থির তুলনায় যথেষ্ট বৃহদাকার এবং সহযোগী একটি উপঅশ্বলরূপে স্বীকৃতি পায়। অনেকক্ষেত্রে, কোনও একটি অঞ্চলে প্রতিটি সংলগ্ন পরিবলয়গুলির মধ্যে যথেষ্ট সমধর্মিতা লক্ষ্য করা যায়। আঞ্চলিক দিক থেকে এই ধরনের পরিসরে বিভিন্ন শিল্পতালুক, প্রশাসনিক সহযোগী দপ্তর বা অন্য কোনও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে উঠতে দেখা যায়।দশেই লক্ষ্য দানগুলিকে নবুত্ব দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি কটি নির্দিষ্ট

যেমন-ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লি, অথবা কলকাতা মহানগরীর পার্শ্বস্থ পরিসেবা অথবা বাজারকেন্দ্রিক এলাকাগুলি সংলগ্ন পরিবলয়ের অন্তর্গত।

প্রান্তবর্তী এলাকা (Outlying areas): কোনও একটি অঞ্চলের মূল গ্রন্থি অথবা সংলগ্ন পরিবলয় ক্ষেত্রের একেবারে বাইরের অংশটি প্রান্তবর্তী এলাকা নামে পরিচিত। ফ্রেইডম্যান অঞ্চলের এরূপ অংশটিকে পরিধিসদ্ধ অঞ্চল (Periphery region)-ৰূপে আখ্যায়িত করেছেন। একাধিক প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তবর্তী এলাকাটি সম্পদের সর্বোত্তম জোগান অঞ্চলরূপে বিবেচিত হয়। সাধারণত, অঞ্চলের বিভিন্ন গাঠনিক পরিসরগুলির মধ্যে প্রান্তিক এলাকার ক্ষেত্রফল সবচেয়ে বেশি।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অঞ্চলের গ্রন্থি অভিমুখী অংশের দিকটি যেমন সমসত্ত্বতা (Homogenity)-র নির্দেশক, তেমনই প্রান্তিক এলাকা অভিমুখী অংশটি বিষমসত্ত্বা (Heteregenity)-র নির্দেশক।

যেমন-গ্রামাঞ্চলগুলির সমন্বয়ে পৃথিবীর অধিকাংশ প্রান্তবর্তী এলাকা গড়ে ওঠে।


অঞ্চলের সামগ্রিক সত্ত্বা (Overall Entity of the Region):

সাধারণত কোনো ভৌগোলিক পরিসর যখন একটি অঞ্চলরূপে স্বীকৃতি পায়, তখন তার সামগ্রিক সত্ত্বাই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে। মূলত, অঞ্চলের ক্ষেত্রে সামগ্রিক সত্ত্বা বলতে বোঝায়-


গ্রন্থি সংলগ্ন + পরিবলয় + প্রান্তবর্তী এলাকাসমূহ = অঞ্চলের সামগ্রিক সত্ত্বা


আসলে, কাঠামোগত দিক থেকে এখানে সামগ্রিক সত্ত্বাই একটি অঞ্চলের প্রকৃত ক্ষেত্রফল নামে পরিচিত। অনেকসময় আঞ্চলিক কাঠামোয় স্থানীয় একাধিক এলাকাভিত্তিক একটি মিশ্র প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সেই কারণে, বিশেষ এই মিশ্র আঞ্চলিক ক্ষেত্রটিকে Transitional zone বা রূপান্তর অঞ্চল বলা হয়ে থাকে। তবে, অনেক ক্ষেত্রে অঞ্চলের একটি কাঠামোগত অংশ অপর একটি কাঠামোকে অধিক্রম (Overlap) করলে, বিশেষ এই পরিবর্তনশীল ক্ষেত্রটির ধারণা প্রায় বিলীন হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও, আঞ্চলিক কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা এই ধরনের নির্দিষ্ট সীমানাগুলিকে কার্যকরী দিক থেকে কখনোই কিন্তু অস্বীকার করা যায় না।


আঞ্চলিক মাত্রা (Regional Dimension):

ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে অঞ্চল বিশ্লেষণের মাত্রায় তিনটি উল্লেখযোগ্য স্তর পরিলক্ষিত হয়, যথা-

1. স্থানীয় মাত্রা(Local dimension): অঞ্চল বিশ্লেষণের সর্বনিম্ন মাত্রাটি সর্বদা স্থানীয় স্তরকেন্দ্রিক। সাধারণত গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক বা মিউনিসিপ্যালিটি এলাকাগুলিতে "Micro level planning"-এর আওতায় বিভিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়নে কার্যকরী প্রায় সমস্ত পদক্ষেপ স্থানীয় স্তর থেকেই পরিচালিত হয়।

2. প্রাদেশিক মাত্রা (Provincical dimension): অঞ্চল বিশ্লেষণের প্রাদেশিক মাত্রায় বেশ কিছুটা স্বতন্ত্রতালক্ষ্য করা যায়। কারণ, মধ্যমস্তরের এই ক্ষেত্রটি সর্বদা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হয়। আঞ্চলিক উন্নয়নের পদক্ষেপগুলিকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিপার্শ্বিক অঞ্চলগুলির বিশেষ তৎপরতা এখানে স্পষ্টতই লক্ষ্যণীয়। প্রসঙ্গত, কয়েকটি। স্থানীয় স্তরের অঞ্চল একটি নির্দিষ্ট প্রাদেশিক স্তরে মিলিত হলে, অথবা এদের পারস্পরিক সংযোগসাধনের ক্ষেত্রটি দৃঢ় হলে একটি রাষ্ট্রের আঞ্চলিক পরিধি (Zonal dimention) যথেষ্ট অর্থবহ হয়ে ওঠে। যেমন, ভারতের নিম্ন-গাঙ্গেয় অঞ্চলটি এই ধরনের পরিমাত্রায় বিবেচিত হয়। 

3. বিশ্বব্যাপি মাত্রা (Global dimension): সাধারণত পরিকল্পনার বিকেন্দ্রিকরণ প্রক্রিয়ার ধারণায় বিশ্বব্যাপী বহুমাত্রিক ও জটিল আঞ্চলিক ক্ষেত্র স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। প্রয়োগমূলক দিক থেকে এই ক্ষেত্রটি সম্পূর্ণভাবে ক্রিয়াশীল প্রকৃতির, যেখানে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের পারস্পরিক আদানপ্রদানমূলক সাহচর্যতা বা নির্ভরশীলতার বিষয়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন-বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত গবেষণামূলক পরিকল্পনাগুলিতে এই ধরনের আঞ্চলিক মাত্রাটিকে বিবেচনা করা হয়।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01