বজ্রঝড় বিকাশের পর্যায় (Stages of development of Thunderstorm) :
বজ্রঝড় সৃষ্টিকারী পরিচলন কোশগুলির জীবনচক্র 1 থেকে 2 ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং সর্বাধিক ভয়ঙ্কর অবস্থা মাত্র 20 থেকে 30 মিনিট স্থায়ী হয়। বজ্রঝড়ের এই জীবনচক্র তিনটি পর্যায়ে ঘটে। যথা-
1. কিউমুলাস পর্যায় (Cumulas stage):
উয় ও আর্দ্র বায়ু ঘনীভূত হয়ে কিউমুলাস মেঘের সৃষ্টি হলে বজ্রঝড়ের বিকাশ শুরু হয়। বজ্রঝড় বিকাশের প্রথম পর্যায়কে তাই কিউমুলাস পর্যায় বলা হয়। প্রধানত গ্রীষ্মের শুরুতে ভূপৃষ্ঠ অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুও উন্ন হয়ে পড়ে। এই উদ্বু ও আর্দ্র বায়ু ঊর্ধ্বমুখী হলে অ্যাডিয়াবেটিক প্রক্রিয়ায় শীতলীভবনের ফলে ঘনীভূত হয়ে একটি ছোটো আকারের কিউমুলাস মেঘের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই কিউমুলাস মেঘ স্থায়ী হয় না। কারণ ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট লীনতাপ গ্রহণ করে মেঘপুঞ্জের জলবিন্দুগুলি (Cloud droplets) বাষ্পীভূত হয় এবং পার্শ্ববর্তী শুষ্ক বায়ুর সঙ্গে মিশে যায়। যেহেতু জলকণা পুনরায় বাষ্পে পরিণত হয় তাই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ আগের অবস্থা থেকে আরও বেড়ে যায়। কিন্তু উদ্বুতা বেড়ে যাওয়ায় বায়ু আরও ওপরের দিকে উঠতে থাকে। এভাবে ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী সঞ্চলন, ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় জলকণা ও বরফকণায় রূপান্তর এবং পুনরায় ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট লীনতাপের প্রভাবে উর্ধ্বমুখী সঞ্চলনের ফলে কিউমুলাস মেঘ উচ্চতায় বাড়তে থাকে। এই পর্যায়ে বরফকণার (ice crystal) বিকাশ চলতে থাকায় বৃষ্টিপাত খুব একটা সংগঠিত হয় না। ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ ঘণ্টায় 15-30 কিমির মধ্যে থাকে।
2. পরিণত পর্যায় (Matured stage) :
এই পর্যায়ে ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট লীনতাপের প্রভাবে বায়ুর ঊর্ধ্বগমনের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। এই সময় বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় 100-125 কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালে কিউমুলাস মেঘ নেহাই-এর আকৃতি (Anvil shape) ধারণ করে বিশাল উঁচু কিউমুলোনিম্বাস বা বজ্রগর্ভ মেঘের সৃষ্টি করে। এই মেঘ 10-15 কিমি পর্যন্ত উঁচু হয়। এই পর্যায়ে মেঘের প্রতিবাত পার্শ্বে (windward side) প্রবল
বজ্রঝড় বিকাশের পর্যায় |
উর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহ এবং অনুবাত পার্শ্বে নিম্নমুখী বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী বায়ুপ্রবাহের জন্য পরিচলন কোশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রবিদ্যুৎসহ মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়। পরিণত পর্যায়ে সৃষ্ট নিম্নমুখী বায়ুটি অত্যন্ত শীতল হয় এবং ভূপৃষ্ঠে নেমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ভূপৃষ্ঠস্থ বায়ুমণ্ডলের উন্নতা কমতে থাকে। নিম্নমুখী এই শীতল বায়ু অপরপ্রান্তে ঊর্ধ্বমুখী উন্ন বায়ুর মাঝে একটি সীমান্তের সৃষ্টি হয়। একে আকস্মিক সীমান্ত (Gust front) বলে।
3. অবলুপ্ত পর্যায় (Dissipating stage) :
বজ্রঝড় বিকাশের অন্তিম পর্যায়ে বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী সঞ্চলন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় এবং আকস্মিক সীমান্ত বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে সমস্ত মেঘ জুড়ে বায়ু নিম্নমুখী হয়। বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় জলীয় বাষ্পের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত ধীরে ধীরে কমতে কমতে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশাল আকৃতির মেঘটি ভেঙে গিয়ে বিলুপ্ত হতে থাকে। নিম্নমুখী শীতল বায়ুপ্রবাহের কারণে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পরিবেশের তাপমাত্রা অনেকটা নেমে আসে।