উন্নতার বৈপরীত্যের তাৎপর্য (Significance of Temperature Inversion):
উন্নতার বৈপরীত্যের জলবায়ুগত, এমনকি অর্থনৈতিক তাৎপর্যও রয়েছে।
(i) মেঘের সৃষ্টি, অধঃক্ষেপণ ও বায়ুমণ্ডলীয় দৃশ্যমানতা প্রভৃতি উন্নতার বৈপরীত্য দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী বায়ুসঞ্চালন এমনকি বায়ুমণ্ডলীয় স্তরের মিশ্রণ বিযুক্তি হার ও বিভিন্ন স্তরের উল্লম্ব উয়তার ঢালের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণভাবে, ঊর্ধ্বমুখী শুষ্ক বায়ু শুষ্ক রুদ্ধ তাপবিযুক্তি হার (প্রতি কিমিতে 10° সেঃ)-এ শীতল হয় এবং ঊর্ধ্বমুখী আর্দ্র বায়ু এর থেকে কম হারে শীতল হয়
(ii) উত্থিত বায়ুস্রোতের প্রতিরোধক হিসেবে বৈপরীত্য স্তর ভূমিকা পালন করে। কাজেই, দিনের বেলায় প্রখর সৌরতাপে উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে সৃষ্ট পরিচলন স্রোত বৈপরীত্য স্তরের নিম্নভাগ পর্যন্ত উত্থিত হতে পারে। ফলে ধোঁয়া ও অন্যান্য পদার্থ বৈপরীত্য স্তরের নিম্নে অবস্থান করে। এই অঞ্চলে মেঘের উল্লম্ব বিকাশ পরিবর্তিত হয়। যে কারণে অধঃক্ষেপণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কিন্তু, নিম্নস্তরের ভূপৃষ্ঠ বৈপরীত্য ভূপৃষ্ঠের ওপর বা নিকটে কুয়াশা সৃষ্টির পক্ষে উপযোগী, যার ফলে বায়ুমণ্ডলীয় দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়। এরূপ অবস্থা নানান অর্থনৈতিক ও মানবিক কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে। ঘন কুয়াশার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(iii) উন্মুতার বৈপরীত্যের দ্বারা দৈনিক তাপমাত্রা প্রভাবিত হয়। বৈপরীত্য স্তর শুষ্ক ও আর্দ্র বায়ুস্তরের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা সৃষ্টি করে। ওপরে শুষ্ক বায়ু ও নিম্নে আর্দ্র বায়ু অবস্থান করে। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে আর্দ্রতার সমবণ্টনে বৈপরীত্য স্তর প্রভাব বিস্তার করে
(iv) বায়ুমণ্ডলে উল্লম্ব তাপমাত্রা বণ্টনে নিয়ন্ত্রণ করে বৈপরীত্য উয়তা স্থানীয় আবহাওয়াগত অবস্থাকে প্রভাবিত করে। ভূপৃষ্ঠ বায়ুমণ্ডলীয় শক্তির প্রত্যক্ষ উৎস, এটি আগত সৌর বিকিরণকে তাপশক্তিতে রূপান্তর করে। ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী বায়ুস্তর পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, ভূপৃষ্ঠ বিকিরণের দ্বারা তাপে ঊর্ধ্বমুখী স্থানান্তরের ঊর্ধ্বসীমা হল বৈপরীত্য স্তর। যদি উন্নতার বৈপরীত্য স্তর গভীর ও ভূপৃষ্ঠের নিকট অবস্থান করে তাহলে বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক বেশি বিকিরিত শক্তি পেয়ে থাকে। অন্যদিকে বৈপরীত্য স্তর অনেক ওপরে অবস্থান করলে বায়ুমণ্ডলের বিস্তৃত অংশের মধ্যে তাপ ছড়িয়ে পড়ে বলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম হয়।
আধুনিক যুগে বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে উন্নতার বৈপরীত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর দ্বারা বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের বায়ুর গতিবেগ ও দিক নিয়ন্ত্রিত হয়। এর ফলে, বায়ুর গতি, দিক ও ঘনত্ব পরিবর্তনের সাথে বিমানের সাবলীলতা বিঘ্নিত হয়। ভূপৃষ্ঠ উন্নতার বৈপরীত্যের প্রভাবে সমস্ত রকমের যানবাহন ব্যবস্থা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার সম্মুখীন হয়।