welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে জেট বায়ুপ্রবাহের গুরুত্ব (Significance of Jet Stream on Climate control):

জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে জেট বায়ুপ্রবাহের গুরুত্ব (Significance of Jet Stream on Climate control):


কোনো অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব অপরিসীম। তবে জেট বায়ুর গতিপ্রকৃতি এতটাই জটিল যে অবহাওয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। নীচে আবহাওয়ার ওপর জেট বায়ুর প্রভাবগুলি আলোচনা করা হল-


1. নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের ওপর প্রভাব:

মেরুপ্রাচীর সংলগ্ন অঞ্চলে জেট বায়ু মধ্যঅক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি ও এর গতিপ্রকৃতিকে প্রভাবিত করে। জেট বায়ু সৃষ্ট ট্রাফগুলি শুরুর দিকে বায়ুর সম্মিলন (Convergence) এবং ট্রাফের শেষপ্রান্তে বায়ুর বিক্ষেপণ (divergent) ঘটে। এই ট্রাফের উপস্থিতির ফলে শীতল সীমান্ত বরাবর নিম্নমুখী বায়ুস্রোত ও উয়সীমান্ত বরাবর ঊর্ধ্বমুখী বায়ুস্রোত সক্রিয় থাকে। ফলে ঘূর্ণবাতে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া মধ্যঅক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতে বায়ুপ্রাচীর সৃষ্টিতেও জেট বায়ু বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনেকে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেট বায়ু দ্বারা নতুন একটি গৌণ শীতল সীমান্ত সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন।


2. স্ট্যাটোস্ফিয়ারে সিরাস মেঘের সৃষ্টি:

মেরুবৃত্তীয় অঞ্চলে ট্রপোপজের উচ্চতা কম হওয়ায় জেট বায়ু কখনো কখনো ট্রপোপজ অতিক্রম করে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ঢুকে পড়ে। ফলে মেঘহীন অঞ্চলে জেট বায়ু কর্তৃক সামান্য জলীয় বাষ্পের অনুপ্রবেশের ফলে সিরাস মেঘের সৃষ্টি হয় যা mother of pearl নামে পরিচিত।


3. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তির ওপর প্রভাব:

প্রাক্-মৌসুমি ঋতুতে উপক্রান্তীয় জেট বায়ুর পরিত্যক্ত ট্রাফগুলি ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া সাইক্লোনের গতিপথ পশ্চিমি জেট বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।


4. মৌসুমি বায়ুর ওপর প্রভাব:

ভারতীয় উপমহাদেশে মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর উপক্রান্তীয় জেট বায়ু এবং পুবালি জেট বায়ুর প্রভাব অপরিসীম। শীতকালে পশ্চিমি উপক্রান্তীয় জেটের একটি শাখা উত্তর ও মধ্য ভারতের ওপর অবস্থান করায় স্থলভাগে উচ্চচাপ ক্ষেত্র তৈরি হয়। এর প্রভাবে মৌসুমি বায়ু আসতে বাধা পায়। কিন্তু গ্রীষ্মে উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে উপক্রান্তীয় জেট বায়ু ভারত থেকে সরে গেলে স্থলভাগের ওপর গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবেশের পথ প্রশস্ত হয়। এ ছাড়া ক্রান্তীয় পুর্বালি জেট মৌসুমি বায়ুর গতিপথ ও বৃষ্টিপাতকে নিয়ন্ত্রণ করে।


5. নিয়ত বায়ুপ্রবাহ ও দ্রাঘিমারেখা বরাবর সঞ্চলন চক্রকে সক্রিয় রাখা:

জেট বায়ু পৃথিবীর কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ করে ত্রিকোশ সঞ্চলন চক্রকে (হ্যাডলি চক্র, ফেরেল চক্র, মেরু চক্র) সক্রিয় রেখে নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সচল রাখতে সাহায্য করে। অধিকাংশ নিয়তবায়ু পুবালি হওয়ায় তা পশ্চিম অভিমুখী কৌণিক ভরবেগের স্থানান্তরের মাধ্যমে পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্ব অভিমুখী আবর্তন গতিকে বাধা প্রদান করে। কিন্তু পশ্চিমি জেট বায়ুর গতিবৃদ্ধি পৃথিবীর কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ করে আবর্তন গতিকে সচল রাখতে সাহায্য করে।


6. বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ :

বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, বজ্রঝড়, টর্নেডোর আবির্ভাব, শৈত্যপ্রবাহ, তুষার ঝড় ইত্যাদি অনেকটাই জেট বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।


7. অক্ষাংশগত উত্তাপের ভারসাম্য রক্ষা:

জেট বায়ুর দক্ষিণায়নের সময় অধিক তরঙ্গাকারে প্রবাহিত হয়ে উপক্রান্তীয় অঞ্চলে চলে আসে এবং উত্তরায়ণের সময় পুনরায় উত্তরে মেরুর দিকে ফিরে যায়। এর ফলে মেরু অঞ্চলের শীতল বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলে এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের উয় বায়ু মেরু অঞ্চলের দিকে স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ পায়। এভাবে তাপমাত্রার স্থানান্তরের দ্বারা অক্ষাংশগত উত্তাপের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01