পৃথিবীর প্রধান প্রধান সীমান্ত অঞ্চল (Principal frontal zones of the world) :
উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ ও জলভাগের অসম বণ্টনের জন্য বায়ুপুঞ্জের বৈচিত্র্য অনেক বেশি লক্ষ করা যায়। তাই ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জের উপস্থিতির ফলে তিন ধরনের সীমান্তের উদ্ভব হয়। যথা-1. আর্কটিক সীমান্ত, 2. মেরু সীমান্ত ও 3. ভূমধ্যসাগরীয় সীমান্ত। এই সীমান্তগুলি আবার ঋতুভেদে স্থান পরিবর্তন করে।
1. আর্কটিক সীমান্ত (Arctic front):
সমগ্র আর্কটিক অঞ্চলকে ঘিরে আর্কটিক সমুদ্রের ওপর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত ব্যারোক্লিনিক সীমান্তকে আর্কটিক সীমান্ত বলে। এই সীমান্তটি উত্তরের চিরতুষারাবৃত্ত অতিশীতল আর্কটিক অঞ্চলের সাথে দক্ষিণের তুষারময় মাঝারি শীতল তুন্দ্রা বা মেরু অঞ্চলের পরিবেশকে আলাদা করেছে। প্রধানত উত্তরের অতিশীতল শুষ্ক আর্কটিক বায়ুপুঞ্জ এবং আর্দ্র/শুষ্ক শীতল মেরুবায়ুপুঞ্জের প্রভাবে আর্কটিক সীমান্তের সৃষ্টি হয়। আর্কটিক সীমান্তকে আবার অবস্থানের ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
(a) আটলান্টিক-আর্কটিক সীমান্ত (Atlantic-Arctic Front or AAF):
এটি আটলান্টিক মহাসাগরের উপর অবস্থান করে। ঋতুভেদে এই সীমান্তটির খুব একটা স্থান পরিবর্তন হয় না।
(b) প্রশান্ত মহাসাগরীয়-আর্কটিক সীমান্ত (Pacific-Arctic Front or PAF):
এটি প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর অবস্থান করে। ঋতুভেদে এই সীমান্তটি উত্তর-দক্ষিণে স্থান পরিবর্তন করে। এটি শীতকালে সামান্য উত্তরে ও গ্রীষ্মকালে সামান্য দক্ষিণে অবস্থান করে।
2. মেরু সীমান্ত (Polar front) :
এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সীমান্ত অঞ্চল, যা নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের জন্য আমাদের কাছে অতিপরিচিত। এই সীমান্তটি উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসা শীতল মেরুবায়ু এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা উয় পশ্চিমা বায়ুর সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। মেরু সীমান্তটিকেও আবার অবস্থানের ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
(a) আটলান্টিক মেরুসীমান্ত (Atlantic Polar Front or APF) :
আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত এই সীমান্তটি ঋতুভেদে স্থান পরিবর্তন করে। শীতকালে এটি নিরক্ষরেখার দিকে স্থানান্তরিত হয়ে মেক্সিকো উপসাগরের ওপর অবস্থান করে। প্রধানত উত্তর আমেরিকার শীতল মহাদেশীয় মেরুবায়ুপুঞ্জ (cP) ও মহাসাগরীয় ক্রান্তীয় উয় বায়ুপুঞ্জের (mT) প্রভাবে এই সীমান্তের সৃষ্টি ও স্থান পরিবর্তন হয়। নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের প্রভাব এই সীমান্তে সর্বাধিক।
b) প্রশান্ত মহাসাগরীয় মেরু সীমান্ত (Pacific Polar Front or PPF) :
প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর অবস্থিত এই মেরু সীমান্তটি মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। ঋতুভেদে এই সীমান্তটিও উত্তর-দক্ষিণে স্থানান্তরিত হয়।
3. ভূমধ্যসাগরীয় সীমান্ত (Mediterranean Front) :
ভূমধ্যসাগরের ওপর ইউরোপ থেকে আসা শীতল মহাদেশীয় অথবা মহাসাগরীয় মেরু বায়ুপুঞ্জ (cP or mP) এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত উদ্বু মহাদেশীয় ক্রান্তীয় বায়ুপুঞ্জের (cT) ফ্রন্টোজেনেসিস (Frontogeni- sis) প্রক্রিয়ার ফলে একটি নতুন সীমান্তের উদ্ভব হয়। কেবলমাত্র শীতকালেই এই সীমান্তের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই সীমান্ত বরাবর ঘূর্ণবাত বিকাশের ফলে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বজ্রঝঞ্ঝা, বৃষ্টিপাত, তীব্র বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়। গ্রীষ্মকালে সূর্যের উত্তরায়ণের জন্য কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়টি উত্তরে স্থানান্তরিত হওয়ায় এই অঞ্চলটিতে উচ্চচাপ বলয় বিরাজ করে এবং সমগ্র অঞ্চলটি উপক্রান্তীয় জেট বায়ুর অধীনে আসে। তাই ভূমধ্যসাগরীয় সীমান্ত বিকাশ লাভ করতে পারে না।