welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

মৌসুমি বায়ু ও ভারতের ঋতু বৈচিত্র্য (Monsoon and Seasonal Changes in India):

 মৌসুমি বায়ু ও ভারতের ঋতু বৈচিত্র্য (Monsoon and Seasonal Changes in India):


ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ঋতু পরিবর্তন। মৌসুমি বায়ুর আসা ও যাওয়ার ওপর ভিত্তি করে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (IMD) ঋতু পরিবর্তনের পালাবদল অনুযায়ী ভারতের জলবায়ুকে চার ভাগে ভাগ করেছে।


যথা-1. গ্রীষ্মকাল বা প্রাক্মৌসুমি, 2. বর্ষাকাল বা মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল, 3. শরৎকাল বা মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল এবং 4. শীতকাল।


1. গ্রীষ্মকাল (মার্চের মধ্যভাগ-জুনের মধ্যভাগ) :

অধিক উদ্বুতা এবং স্বল্প আর্দ্রতা ভারতে গ্রীষ্ম ঋতুর প্রধান বৈশিষ্ট্য।


• উষ্ণতা : 21 মার্চের পর থেকে সূর্য ধীরে ধীরে ভারতের দিকে এগোতে থাকে এবং সূর্যরশ্মি ধীরে ধীরে লম্বভাবে পড়ার কারণে ভারতের বিভিন্ন অংশের উন্নতা বাড়তে থাকে। 1935 সালের 14 জুন রাজস্থানের গঙ্গানগরে 50-6° সেঃ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এখনো পর্যন্ত ভারতের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে উপকূল অঞ্চলে (27°-30° সেঃ) সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে এবং অধিক উচ্চতার কারণে পার্বত্য অঞ্চলে (15°-20° সেঃ) গড় উন্নতা কম থাকে।


• বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ : অধিক উন্নতার কারণে সারা ভারত জুড়েই বায়ুর চাপ কম থাকে এবং রাজস্থান ও এর কাছাকাছি অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই সময় ভারতের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় বায়ুর প্রভাব লক্ষ করা যায়।

• বৃষ্টিপাত: যদিও ভারতের গ্রীষ্মকাল শুষ্ক, তবুও কয়েকটি স্থানে স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের ফলে সামান্য বৃষ্টি হয়।

কালবৈশাখীর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও তার কাছাকাছি অঞ্চলে গড়ে 15-40 সেমি পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। কেরালা ও কর্ণাটক উপকূল অঞ্চলে 'আম্লবৃষ্টি'-র প্রভাবে 10-25 সেমি পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। কর্ণাটকে এই প্রকার বৃষ্টি 'আম্রবৃষ্টি' (Cherry blossoms) নামে পরিচিত।


2. বর্ষাকাল (জুনের মধ্যভাগ-সেপ্টেম্বর):

মৌসুমি বায়ুর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে বর্ষাকাল শুরু হয়। বেশি উন্নতা ও আর্দ্রতা এবং পরপর বৃষ্টি বর্ষাকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বর্ষাকালের বেশির ভাগ সময় আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে।


• উষ্ণতা: ভারতের বিভিন্ন অংশের গড় তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালের তুলনায় বর্ষায় 5°-10° সেঃ কম থাকে। দক্ষিণ ভারতে এই সময় গড় তাপমাত্রা থাকে 25°-30° সেঃ।


• বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ: এই সময় গড় উয়তা মোটামুটি বেশি থাকে। তাই এখানে নিম্নচাপ দেখা যায়। এ সময় মৌসুমি বায়ু ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।


• মৌসুমি বায়ুর আগমন ও বৃষ্টিপাত : গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে মৌসুমি বায়ু প্রতিবছর গড়ে 1 জুন তারিখে কেরালায় এসে পৌঁছায় এবং 15 জুলাই-এর আগেই এই বায়ু সারা ভারত দখল করে নেয়। জলীয় বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ু মালাবার উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতে প্রথম বাধা পেয়ে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে 'মৌসুমি বিস্ফোরণ' (Burst of Monsoon) বলে। মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। শাখা দুটি হল-(ক) আরবসাগরীয় শাখা ও (খ) বঙ্গোপসাগরীয় শাখা।


3. শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বর):

সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পর ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিতে শুরু করে এবং অক্টোবর মাসের শুরুতেই শরৎকাল সূচিত হয়। এই সময় সমগ্র ভারত থেকে মৌসুমি বায়ু দক্ষিণে চলে যায়। তাই এই ঋতুকে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকালও বলে।


• উয়তা: মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনে আকাশ মেঘমুক্ত হয়। ফলে বিভিন্ন অংশে দিনের উয়তা বাড়তে থাকে। পূর্ব ভারতে গড় উন্নতা থাকে 30° সেঃ, মালভূমি অঞ্চলে 33° সেঃ এবং রাজস্থানে প্রায় 36° সেঃ। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের উন্নতা হিমাঙ্কের কাছে নেমে যায়।


• বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ: সূর্যের দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণে উয়তা বাড়তে থাকে এবং উত্তরে উন্নতা কমতে থাকে।


• বৃষ্টিপাত: মৌসুমি বায়ু ফিরে যাওয়ার ফলে যেহেতু আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তাই এই সময় খুব একটা বৃষ্টিপাত ঘটে না। তবে প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে করমণ্ডল ও তৎসংলগ্ন অন্ধ্র উপকূলে বৃষ্টিপাত (প্রায় 40 সেমি) হয়। তাই তামিলনাড়ু উপকূলে বছরে দুবার বর্ষাকাল হয়। কখনো কখনো সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের প্রভাবে পূর্ব উপকূল বরাবর প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়। পশ্চিমবঙ্গে একে 'অশ্বিনের ঝড়' বলে।


4. শীতকাল (ডিসেম্বর মার্চের মধ্যভাগ):

• মেঘমুক্ত পরিষ্কার আবহাওয়া, উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত হালকা শীতল বাতাস, কম উয়তা ও স্বল্প আর্দ্রতা এদেশের শীতকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য।


• উষ্ণতা : এই সময় পুরো ভারত জুড়ে উন্নতা কম থাকে। উত্তর-পশ্চিম ভারতে গড় উন্নতা থাকে 10°-15° সেঃ, উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতে 15°-20° সেঃ। দক্ষিণ ভারতে এই সময় তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে, গড়ে 25° সেঃ। হিমালয় পর্বতের অনেক স্থানে উয়তা হিমাঙ্কের অনেক নীচে নেমে যায়। জম্মু-কাশ্মীরের লাডাক ও দ্রাস অঞ্চলে উয়তা -40° সেঃ-এর নীচে নেমে যায়।


• বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ: স্বল্প উন্নতার কারণে ভারতে এই সময় উচ্চচাপ বিরাজ করে এবং উত্তর দিক থেকে শীতল বাতাস প্রবাহিত হয়।


• বৃষ্টিপাত : সমগ্র শীতকালে ভারতে বৃষ্টি হয় না। তবে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর ভারতে 'পশ্চিমি ঝঞ্ঝা'র প্রভাবে 5-10 সেমি বৃষ্টি হয়। জম্মু-কাশ্মীরে তুষারপাত ঘটে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01