বায়ুপুঞ্জের পরিবর্তন (Modification of Air Mass) :
বায়ুপুঞ্জ উৎস অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রবাহিত হতে শুরু করলে তার ভৌতধর্ম, যথা-তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করে এবং বায়ুপুঞ্জটি যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের বায়ুর ধর্মকে পরিবর্তন করতে থাকে। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলটি স্থলভাগ অথবা জলভাগ যে চরিত্রেরই হোক না কেন বায়ুপুঞ্জটির পরিবর্তন প্রথমে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন নিম্ন বায়ুস্তরে সংঘটিত হয়, তারপর পরিবর্তনগুলি ধীরে ধীরে ওপরের বায়ুস্তরে বিস্তার লাভ করে। সুস্থিত বায়ুর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন ধীরগতিসম্পন্ন হয় কিন্তু অস্থিতিশীল বায়ুর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়। বায়ুপুঞ্জের এই পরিবর্তন দুটি পদ্ধতিতে সংঘটিত হয়। যথা-
1. তাপগতি সম্বন্ধীয় পরিবর্তন (Thermodynamic Modification) এবং
2. যান্ত্রিক পরিবর্তন (Mechanical Modification)।
1. তাপগতি সম্বন্ধীয় পরিবর্তন (Thermodynamic Modification) :
বায়ুপুঞ্জ ভূপৃষ্ঠের তাপ গ্রহণ করে নীচের বায়ুস্তরকে উত্তপ্ত করে এবং ধীরে ধীরে ওপরের স্তরে তা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বায়ুপুঞ্জটি তার স্থিতিশীলতা হারায়। একেই বায়ুপুঞ্জের তাপগতি সম্বন্ধীয় পরিবর্তন বলে। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের অনুপ্রবেশ ঘটলেও বায়ুপুঞ্জটির তাপীয় পরিবর্তন ঘটে। ট্রেওয়ার্থার মতে, বায়ুপুঞ্জের এই ধরনের পরিবর্তন নির্ভর করে-
(ক) প্রাথমিক অবস্থায় বায়ুর উয়তা ও আর্দ্রতার ওপর,
(খ) বায়ুপুঞ্জটি যে ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সেটির চরিত্রের ওপর,
(গ) যে পথ অনুসরণ করে বায়ুপুঞ্জটি প্রবাহিত হচ্ছে তার প্রকৃতির ওপর এবং
(ঘ) একস্থান থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য কতটা সময় নিচ্ছে তার ওপর।
বায়ুপুঞ্জটি যদি নিজের উয়তা অপেক্ষা অধিক উয় ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাহলে ভূপৃষ্ঠ থেকে উন্নতা গ্রহণ করে ওই বায়ুপুঞ্জটি দ্রুত উত্তপ্ত হতে থাকে এবং অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এই ধরনের বায়ুপুঞ্জে ঘনীভবন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়ে মেঘের বিকাশ ঘটায় ও অধঃক্ষেপণের হার বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে বায়ুপুঞ্জটি নিজের থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে তা ধীরে ধীরে শীতল হতে শুরু করে এবং বায়ুপুঞ্জটি স্থিতিশীলতা লাভ করে।
2. যান্ত্রিক পরিবর্তন (Mechanical Modification) :
ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে কিংবা বায়ুপুঞ্জের উল্লম্ব ও অনুভূমিক মিশ্রণের ফলে উন্নতার পরিবর্তনে বায়ুপুঞ্জের ভৌত গুণাবলির পরিবর্তন ঘটে। একেই বায়ুপুঞ্জের যান্ত্রিক পরিবর্তন বলে। যদি বায়ুপুঞ্জ কোনো পর্বতের ঢালে বাধা পেয়ে ওপরে উঠতে বাধ্য হয়, তাহলে অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে তাপের বিযুক্তির ফলে উন্নতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুর সংঘর্ষেও এই ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
Byer-এর মতে, বায়ুপুঞ্জের যান্ত্রিক পরিবর্তন এক বা একাধিক কারণের সম্মিলিত ফল। এই কারণগুলি হল-
(i) পরিচলন স্রোত অথবা ঘূর্ণবাতের প্রভাবে বায়ুর মিশ্রণ।
(ii) বায়ুর সম্মিলন অথবা বিক্ষেপণের (Convergence or divergence) ফলে বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে তাপমাত্রার পরিবর্তন।
(iii) বায়ুপুঞ্জের পার্শ্বীয় প্রসারণ (Lateral spreading); শীতল বায়ুর নিম্নমুখী সঞ্চালন কিংবা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বায়ুর নিম্নমুখী হওয়ার প্রবণতা।
(iv) পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বায়ু ওপরের দিকে উঠতে শুরু করলেও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বায়ুপুঞ্জের পরিবর্তন হয়।
(v) বায়ুতে নতুন কিছু ভৌত গুণাবলির সংযোজন।