welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ (Local Wind Systems) :

স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ (Local Wind Systems) :


পৃথিবীব্যাপী সংঘটিত প্রধান প্রধান বায়ুসঞ্চলন চক্র ছাড়াও স্থানীয়ভাবে উন্নতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য কোনো কোনো অঞ্চলে ক্ষুদ্র পরিসরে বায়ু সঞ্চলন চক্র তথা বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। ভূপ্রকৃতির পরিবর্তন, জলভাগ ও স্থলভাগের বণ্টন ইত্যাদি হল স্থানীয় বায়ু সৃষ্টির প্রধান প্রভাবক। সুতরাং এই ধরনের আঞ্চলিক গোলযোগের কারণে সৃষ্ট বায়ুপ্রবাহকে স্থানীয় বায়ু (Local winds) বলে। স্থানীয় বায়ুপ্রবাহগুলি আঞ্চলিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


বিভিন্ন প্রকার স্থানীয় বায়ু (Different types of local winds) :


(ক) সাময়িক স্থানীয় বায়ু (Local Periodical wind):

 সারা পৃথিবী জুড়ে যে সমস্ত স্থানীয় বায়ু দেখা যায় সেগুলির মধ্যে বেশ কতকগুলি বায়ুপ্রবাহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিক পরিবর্তন করে। যেমন-


1. সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ু (Land Breeze and Sea Breeze):

প্রধানত জলভাগ ও স্থলভাগের বৈষম্যমূলক উত্তাপ গ্রহণের ক্ষমতার জন্য বায়ুচাপের পরিবর্তন দেখা যায়। দিনের বেলায় প্রখর সূর্যের তাপে স্থলভাগ জলভাগের তুলনায় দ্রুত তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে স্থলভাগ সংলগ্ন বায়ু ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্তাপ গ্রহণ করে দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায় ও আয়তনে প্রসারিত হয় এবং তুলনামূলকভাবে হালকা হয়ে পড়ায় ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু ওই সময় জলভাগ তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে উত্তপ্ত হয়। তাই দিনের বেলায় স্থলভাগে নিম্নচাপ ও জলভাগে উচ্চচাপীয় অবস্থা সৃষ্টি হলে জলভাগ থেকে বায়ু স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয়। একেই সমুদ্রবায়ু (Sea Breeze) বলে। সমুদ্রবায়ু সাধারণত দুপুরের একটু আগে থেকে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং বিকেলবেলায়

এর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি হয়, ঘণ্টায় প্রায় 10 থেকে 20 কিমি। সমুদ্র থেকে আসে বলে এই বায়ু তুলনামূলকভাবে শীতল ও আরামদায়ক হয়। তবে সমুদ্রতট থেকে এই বায়ু স্থলভাগের দিকে 30 থেকে 100 কিমি পর্যন্ত প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। ট্রেওয়ার্থার মতে, সমুদ্রবায়ু মধ্য-অক্ষাংশীয় অঞ্চলে স্থলভাগের ভিতরে প্রায় 15 থেকে 50 কিমি পর্যন্ত এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলে 50 থেকে 65 কিমি পর্যন্ত প্রবেশ করে। ভূমিভাগ থেকে অধিক উচ্চতায় এর একটি বিপরীত বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়। জলভাগ থেকে আসায় এই বায়ু আর্দ্র হয়। তাই মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত ঘটায়।




রাতের বেলায় তাপ বিকিরণের ক্ষেত্রেও জলভাগ ও স্থলভাগ বৈষম্যমূলক আচরণ করে। জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়ে। ফলে বায়ুচাপের বণ্টন পরিবর্তিত হয়ে স্থলভাগে উচ্চচাপ ও জলভাগে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তাই স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে বায়ু চাপের ঢাল অনুযায়ী একপ্রকার বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। একেই স্থলবায়ু (Land Breeze) বলে। এর গড় গতিবেগ ঘণ্টায় 10 কিমি। সারারাত ধরে প্রবাহিত হলেও ভোরের দিকে স্থলবায়ুর গতিবেগ সর্বাধিক হয়। এই বায়ুর প্রভাব সমুদ্রতট থেকে 10-15 কিমি অভ্যন্তর পর্যন্ত দেখা যায়।

2. উপত্যকা বায়ু ও পার্বত্য বায়ু (Valley and Mountain Breeze):

দিনের বেলায় সূর্যের তাপে উপত্যকা বা পর্বতের ঢাল উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে উপত্যকা সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত হয়ে আয়তনে বাড়ে। এভাবে ঘনত্ব হ্রাস পেলে বায়ু পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। একেই উপত্যকা বায়ু (Valley Breeze) বলে। সাধারণত দিনের শেষে সবচেয়ে বেশি এই বায়ু প্রবাহিত হতে দেখা যায়। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় অ্যাডিয়াবেটিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত শীতল হয়ে ঘনীভবনের ফলে উপত্যকা বায়ু মেঘ সৃষ্টি করে ও বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই রূপ বায়ুপ্রবাহকে অ্যানাবেটিক বায়ু বলে।

রাতের বেলায় পাহাড় বা উপত্যকার ঢাল দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়ে। ফলে সংলগ্ন বায়ু শীতল, ভারী ও অধিক ঘন হয়ে পড়ে এবং পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিম্নমুখী হয়। একেই পার্বত্য বায়ু (Mountain Breeze) বা ক্যাটাবেটিক বায়ু বলা হয়। এই বায়ুর প্রভাবে উপত্যকার নীচু অংশে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়। ভোরের দিকে সূর্যোদয়ের সময় পার্বত্য বায়ুর প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়।


উপত্যকায় বায়ু বা অ্যানাবেটিক বায়ু




পার্বত্য বায়ু বা ক্যাটাবেটিক বায়ু



(খ) অন্যান্য স্থানীয় বায়ু (Other local winds): 

স্থানীয় বায়ুকে উন্নতার বিচারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (1) উয় স্থানীয় বায়ু ও (2) শীতল স্থানীয় বায়ু।


1. উয় স্থানীয় বায়ু (Warm Local Winds):

সাধারণত উয় ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে কিংবা রুদ্ধ তাপবিযুক্তি প্রক্রিয়ায় সঙ্কুচিত হলে বায়ুর উয়তা বৃদ্ধি পায়। স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে এই উয় বায়ু শুষ্ক প্রকৃতির এবং জলভাগ দিয়ে প্রবাহিত হলে এই বায়ু আর্দ্র প্রকৃতির হয়। এগুলি অনেকসময় বিস্তীর্ণ মরুভূমি অতিক্রম করে আসে বলে প্রচুর ধুলোবালি বয়ে আনে এবং মাঝে মধ্যে ধুলিঝড়ের সৃষ্টি করে। আবার, ধুলোবালি মিশ্রিত আর্দ্র বায়ু অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। তুষারাবৃত অঞ্চলের ওপর দিয়ে উয়-শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হলে অঞ্চলটিকে বরফমুক্ত করে। একটি ছকের সাহায্যে কয়েকটি প্রধান প্রধান উয় স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের নাম, প্রভাবিত অঞ্চল, প্রবাহের সময় ও বৈশিষ্ট্য উপস্থাপনা করা হল।


2. শীতল স্থানীয় বায়ু (cold local winds):

সাধারণত শীতল ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হলে কিংবা কোন শীতল বায়ুপুঞ্জ থেকে সৃষ্টি হলে শীতল প্রকৃতির স্থানীয় বায়ু প্রবাহ দেখা যায় বিস্তীর্ণ জলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে এটি শুষ্ক প্রকৃতির এবং জলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে আদ্র প্রকৃতির হয় শীতল স্থানীয় বায়ুর প্রভাবে স্থানীয় অঞ্চলের উষ্ণতা এক লাফে অনেকটা নেমে যায় এবং আদ্র প্রকৃতির হলে মাঝে মাঝে তুষারপাতও হতে দেখা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01