ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র (Life-cycle of Tropical Cyclone):
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের আয়ু মোটামুটি 10 দিনের মতো। ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সম্পূর্ণ জীবনচক্রকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। এদের সম্বন্ধে নীচে আলোচনা করা হল-
1. প্রারম্ভিক পর্যায় (Initial Stage) :
এই পর্যায়ে হাজার হাজার বর্গ-কিমি জুড়ে সমুদ্রের ওপর পরিবর্তনশীল বাতাস এলোমেলো ভাবে প্রবাহিত হয় ও বজ্রবিদ্যুৎসহ ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায়। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বায়ুর চাপ ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। বাতাস ক্রমাগত আবর্তিত হয়ে একটি ঘূর্ণি (vortex) সৃষ্টি করে ও অবশেষে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়।
একটি হ্যারিকেন এর চিত্র |
2. বিকাশশীল পর্যায় (Developing Stage) :
এই পর্যায়ে বায়ুর চাপ ক্রমশ কমতে থাকে। বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়। ঝড়ের চক্ষুকে কেন্দ্র করে বাতাস আবর্তিত হতে থাকে ও ঘূর্ণবাত অগ্রসর হতে থাকে। বিশাল অঞ্চল জুড়ে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায় ও মুষলধারে বৃষ্টি হয়। কোনো কোনো সময়ে একটি ঘূর্ণবাত ভেঙে কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে একটি ঘূর্ণবাত ক্রমশ বড়ো হয়ে বিধ্বংসী শক্তিশালী ঘূর্ণবাতে পরিণত হয়।
3. পরিণত পর্যায় (Matured Stage) : এই পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় প্রবল আকার ধারণ করে। একে চারটি বৃত্তীয় বলয়ে ভাগ করা যায়- |
(a) 10-20 কিমি ব্যাসযুক্ত কেন্দ্র অঞ্চল। এই অংশে মৃদুমন্দ বাতাস বয় ও আকাশ পরিষ্কার থাকে।
(b) এর পরবর্তী অংশে আছে বিক্ষুব্ধ বলয়, যার ব্যাস 50-150 কিমি। এই অংশে বায়ুর চাপঢাল খাড়া হয়, বাতাসের বেগ বেশি থাকে ও প্রবল বৃষ্টি হয়।
(c) বহিস্থ ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ বলয়ে বাতাস প্রবলতম বেগে প্রবাহিত হয় এবং
(d) সর্ববহিস্থ বলয়ে দুর্বল ঘূর্ণিবায়ু প্রবাহিত হয়।
4. সমাপ্ত পর্যায় (Dissipating Stage):
শক্তিশালী ঘূর্ণবাত স্থলভাগে প্রবেশ করার পর দুর্বল হয়ে পড়ে। ভূপৃষ্ঠে ঘর্ষণজনিত বাধা ও সমুদ্র থেকে জলীয় বাষ্পের সরবরাহ-জনিত ঘাটতির কারণে ঘূর্ণবাতের শক্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসে। কোনো কোনো স্থানে দু-এক পশলা ভারী বৃষ্টি হয়। বায়ুপ্রবাহ দুর্বল হতে থাকে ও কেন্দ্রের নিম্নচাপ ক্রমাগতউচ্চচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণবাতের বিনাশ ঘটে।