welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

টর্নেডোর জীবনচক্র (Life cycle of Tornado):

টর্নেডোর জীবনচক্র (Life cycle of Tornado):


      টর্নেডোর স্থায়িত্ব খুব অল্প হলেও একে সৃষ্টি থেকে বিলুপ্তি পর্যন্ত কতকগুলি সুস্পষ্ট পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যেমন-


1. ধূলিকণার ঘূর্ণন পর্যায় (Dust whirl stage) :

টর্নেডো সৃষ্টির একেবারে শুরুর দিকে ধুলোবালি কুণ্ডলাকারে ওপরের দিকে ঘুরতে শুরু করে এবং বজ্রগর্ভ কিউমুলোনিম্বাস মেঘের নীচ থেকে একটি ক্ষুদ্র সরু ফানেলের মতো অংশের সৃষ্টি হয় যা নীচের দিকে ক্রমশ দৈর্ঘ্যে বাড়তে থাকে। এই পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি তেমনভাবে শুরু হয় না।


2. সাংগঠনিক পর্যায় (Organising stage) :

এই পর্যায়ে টর্নেডোর ফানেলটি আকারে আরও বাড়তে থাকে (দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয় দিকেই) এবং ভূমিকে স্পর্শ করে। ফলে টর্নেডো শক্তিশালী হতে থাকে।


3. পরিণত পর্যায় (Mature stage) :

এই পর্যায়ে টর্নেডো সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফানেলটির প্রস্থ সর্বাধিক হয় এবং মোটামুটি উল্লম্ব আকৃতির দেখতে হয়। এই সময় টর্নেডোর পরিব্যাপ্তি (swath) বেশি হওয়ায় অধিক অঞ্চল জুড়ে ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতি হয়।


4. সঙ্কোচন পর্যায় (Shrinking stage):

ফানেলের প্রস্থের পরিধি এই পর্যায়ে ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং ফানেলটি উল্লম্ব অবস্থান থেকে ক্রমশ হেলে পড়তে থাকে। এই পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিব্যাপ্তি (swath) কমে এলেও টর্নেডোটি ভয়ানক রূপ নেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখে।


5. অবলুপ্ত পর্যায় (Decay stage):

শেষ পর্যায়ে টর্নেডোর ফানেলটি একটি দড়ির মতো সরু হয়ে পড়ে এবং মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়।


তবে সমস্ত টর্নেডোই এই পাঁচটি পর্যায় অতিক্রম করতে পারে না। অনেক ছোটো ছোটো টর্নেডো আছে যেগুলি সাংগঠনিক পর্যায় (Organising stage)-এর পর আর এগোতে পারে না এবং বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। আবার, অনেকগুলি টর্নেডো সরাসরি পরিণত পর্যায়ে চলে আসে। তবে একবার পরিণত পর্যায়ে চলে এলে টর্নেডো বিধ্বংসী আকার ধারণ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত না ফানেলটি ভুমিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এটি ততক্ষণ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয় না।


• টর্নেডোর প্রাদুর্ভাব (Outbreaks of Tornados): খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে অসংখ্য টর্নেডো তাণ্ডব চালালে তাকে টর্নেডোর প্রাদুর্ভাব (Tornado outbreaks) বলে। 1947 সালের 3 ও 4 এপ্রিল আমেরিকার ওহিও ও জেনিয়া শহরে 16 ঘণ্টার মধ্যে 148টি টর্নেডো আছড়ে পড়েছিল। এর প্রভাবে 13টি প্রদেশে 307 জনের মৃত্যু হয়, 6000-এরও বেশি মানুষ আহত হয় এবং 600 মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনুরূপভাবে, 1999 সালের 3 মে টেক্সাস, কানসাস ও ওকলাহোমাতে 78টি টর্নেডো আছড়ে পড়ে। এগুলির মধ্যে একটি টর্নেডোর ফানেলের প্রস্থ ছিল 1 মাইল এবং ঘূর্ণায়মান বায়ুর গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় 276 নট। 40 মাইল প্রবাহ পথে টর্নেডোটি 38 জনের প্রাণ নিয়েছে এবং 600 মানুষকে আহত করেছে। এর প্রভাবে প্রায় 1 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পত্তি নষ্ট হয়।


◆ জলস্তম্ভ (Water spout) : টর্নেডো সমুদ্রে সৃষ্টি হলে কিংবা স্থলভাগ ছেড়ে জলভাগে প্রবেশ করলে ঘূর্ণায়মান বায়ুর প্রবল টানে সমুদ্রের জল ঘূর্ণবাতের কেন্দ্র বরাবর হাতির শুঁড়ের মতো ওপরে উঠে আসে। একেই জলস্তম্ভ (Water spout) বলে।



জলস্তম্ভ


ধূলোবালি থাকার কারণে টর্নেডোর ফানেলটি দেখতে সাধারণত কালো থেকে ধূসর বর্ণের হয়। তবে জলস্তম্ভের ফানেলটি কিন্তু সাদা রঙের হয়। কারণ এটি সম্পূর্ণ বায়ু ও জলদ্বারা অধিকৃত। জলস্তম্ভে জল অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ওপরের দিকে ওঠায় এই স্থানের বায়ু ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় লীনতাপ গ্রহণ করে জলীয় বাষ্পে পরিণত হলে মেঘ গঠন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে।

◆ বালিস্তম্ভ এবং Land spout: মরুভূমির মধ্য দিয়ে কোনো টর্নেডো প্রবাহিত হলে সেটি কয়েকটন বালি বহু উঁচুতে উৎক্ষিপ্ত করে। একেই বালিস্তম্ভ বলে। আবার, টর্নেডো স্থলভাগে সৃষ্টি হলে প্রবল ঘূর্ণির সঙ্গে বালি, ঘরবাড়ি সহ বিভিন্ন বস্তু ওপরে উঠে যায়। একেই Land spout বলে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01