অক্ষাংশগত উত্তাপের সমতা (Latitudinal Heat Balance):
পৃথিবীতে আগত সৌর বিকিরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হল দিনরাতের হ্রাসবৃদ্ধি ও সূর্যরশ্মির পতনকোণের পার্থক্য। আমরা জানি, নিরক্ষরেখা থেকে যতদুরে যাওয়া যায় সূর্যের পতনকোণের তির্যকতা তত বাড়তে থাকে বলে ঊর্ধ্ব অক্ষাংশের দিকে আগত সৌর বিকিরণের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে এবং বহির্গামী পার্থিব বিকিরণের হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ফলে আগত সৌর বিকিরণ ও বহির্গামী পার্থিব বিকিরণের মধ্যে সমতা কখনোই লাভ করা সম্ভব নয়। অক্ষাংশভেদেও আবার এদের মধ্যে ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে উত্তাপের উদ্বৃত্ত ও ঊর্ধ্ব নাতিশীতোয় ও মেরু অঞ্চলে ঘাটতি লক্ষ করা যায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডলীয় সংবহন প্রক্রিয়া, সমুদ্রস্রোত ইত্যাদির মাধ্যমে নিম্ন অঞ্চলের উদ্বৃত্ত উত্তাপ উচ্চ অক্ষাংশের ঘাটতি অঞ্চলের দিকে এবং উচ্চ অক্ষাংশের তাপের ঘাটতি শৈত্য প্রবাহ ও শীতল সমুদ্রস্রোত দ্বারা নিম্ন অক্ষাংশের উদ্বৃত্ত অঞ্চলের দিকে চলে আসে। ফলে সামগ্রিকভাবে উন্নতার যে ভারসাম্য সংগঠিত হয়, তাকেই অক্ষাংশীয় উত্তাপের সমতা (Latitudinal Heat Balance) বলে।
হাফ্টন 1954 সালে উত্তর গোলার্ধে নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে 10° অক্ষাংশের পার্থক্যে উত্তাপের সমতা রক্ষা কীভাবে কার্যকরী হয় তা গণনা করে দেখান এবং একটি চিত্রের সাহায্যে সেটি তুলে ধরেন। চিত্র 1.1 অনুযায়ী অক্ষাংশভেদে অর্থাৎ নিরক্ষরেখা থেকে মেরুবিন্দু পর্যন্ত আগত সৌর বিকিরণ ও বহির্গামী বিকিরণ দুটি আলাদা আলাদা
রেখার দ্বারা একই লেখচিত্রে উপস্থাপন করে দেখান যে মোটামুটিভাবে 35° N অক্ষাংশে আগত ও বহির্গত সৌর বিকিরণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষিত হয় এবং নিরক্ষরেখা থেকে 35°N অক্ষাংশের মধ্যে উত্তাপের উদ্বৃত্ত ও 35°-এর পর উত্তাপের ঘাটতি লক্ষ করা যায়। এর সঙ্গে তিনি 10° অক্ষাংশের পার্থক্যে মেরুঅঞ্চলের দিকে দৈনিক কতটা পরিমাণে উত্তাপের স্থানান্তর হয় তাও গণনা করে দেখান।
চিত্র : 1.1 অক্ষাংশ ভেদে উত্তাপ এর উদ্ধৃত ও ঘাটতির পরিমাণ |