আবহাওয়ার ওপর প্রতীপ ঘূর্ণবাতের প্রভাব (Impact of anti-cyclone on weather):
(i) বায়ুর গতিপথ (Wind track) প্রতীপ ঘূর্ণবাত যে পথে অগ্রসর হয় তাকে প্রতীপ ঘূর্ণবাতের পথ বলে। সূ র্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতীপ ঘূর্ণবাতের পথ পরিবর্তিত হয়। এটি মধ্য অক্ষাংশে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়।
(ii) বৃষ্টিপাত (Rainfall) প্রতীপ ঘূর্ণবাত প্রভাবিত অঞ্চলের আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত থাকে। বৃষ্টিপাত বিশেষ হয় না। প্রতীপ ঘূর্ণবাতে ধীর গতিসম্পন্ন ও নিমজ্জমান প্রতিসারী বায়ুপ্রবাহ মেঘ ও বৃষ্টিপাতের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে না। তবে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপের পশ্চিম প্রান্ত থেকে যেখানে বায়ুর নিমজ্জন কম, সেখানে প্রতীপ ঘূর্ণবাত উয় সমুদ্রের ওপর দিয়ে কিছু পথ প্রবাহিত হলে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম হয়। উদাহরণ-উত্তর আটলান্টিকের উপক্রান্তীয় প্রতীপ ঘূর্ণবাতের প্রতিসারী বায়ুপ্রবাহ মেক্সিকো উপসাগর অতিক্রম করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলে তা এই দেশের দক্ষিণে গ্রীষ্মকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
(iii) উষ্ণতা (Temperature) বায়ুমণ্ডলের উয়তার হ্রাস ও বৃদ্ধি কী প্রকার হবে তা মূলত নির্ভর করে ক্রান্তীয় বায়ুপুঞ্জের ওপর অথবা মেরু বায়ুর ওপর। উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে সৃষ্ট শীতল উচ্চচাপের মেরু বায়ু নিম্ন অক্ষাংশীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহকালে শীতঋতুতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ঘটায়।
(iv) তুষারঝড বা ব্লিজার্ড (Blizzard) শীতল নাতিশীতোয় ও মেরু অঞ্চলে প্রতীপ ঘূর্ণবাতের ফলে বায়ু অত্যন্ত শীতল, শুষ্ক ও নিম্নমুখী হয়। উচ্চচাপীয় কক্ষের অবস্থানের ফলে ক্রমশ বায়ুর চাঁপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতীপ ঘূর্ণবাতের প্রভাবে কেন্দ্র বহির্মুখী বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। ফলে এই অঞ্চলে অতিশীতল ঝোড়ো শৈত্যপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে প্রচুর তুষার থাকে বলে একে তুষারঝড় বা ব্লিজার্ড বলে। এই বায়ুর গতিবেগ কখনো কখনো ঘণ্টায় 120-160 কিমি হয়ে থাকে এবং তাপমাত্রা -10° সেঃ পর্যন্ত নেমে আসে। গ্রিনল্যান্ড, সাইবেরিয়া ও আন্টার্কটিকায় ব্লিজার্ড দেখা যায়।