হাফটন প্রদত্ত উত্তাপের ভারসাম্য মডেল (Heat balance Model, after Houghton):
বিভিন্ন গবেষক ও আবহবিদ পৃথিবীর উত্তাপের ভারসাম্য সংক্রান্ত একাধিক মডেল উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি মডেলই একে অপরের থেকে একটু ভিন্ন প্রকৃতির। এই মডেলগুলিতে আগত সৌর বিকিরণের সাপেক্ষে অ্যালবেডো এবং কার্যকরি সৌর বিকিরণের অনুপাতও ভিন্ন ভিন্ন। বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক এদের শোষণের হারও ভিন্ন ভিন্ন। তাই উত্তাপের ভারসাম্য সংক্রান্ত তত্ত্বগুলির মধ্যে কোন্টি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উত্তাপের ভারসাম্য তত্ত্বগুলির মধ্যে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি হল হাফটন প্রদত্ত উত্তাপের ভারসাম্য তত্ত্বটি। তবে একবিংশ শতাব্দীতে নাসা (NASA) সহ বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রগুলি প্রেরিত উপগ্রহ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর আগত সৌর বিকিরণের সাপেক্ষে অ্যালবেডো ও কার্যকরি সৌর বিকিরণের পরিমাণের অনুপাত সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে তাতে হাফ্টন প্রদত্ত মডেলটি বহুল পরিমাণে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
হাফ্টন 1954 খ্রিস্টাব্দে মেটেওর (Meteor) পত্রিকায় প্রকাশিত 'On the annual heat balance of the Northern Hemisphere' শীর্ষক প্রতিবেদনে তাঁর উত্তাপের ভারসাম্য তত্ত্বটি প্রকাশ করেন। হাফ্টন প্রদত্ত মডেল অনুযায়ী পৃথিবীতে আগত সৌর বিকিরণের 34 শতাংশ অ্যালবেডো হিসেবে মহাশূন্যে ফিরে যায় এবং বাকি 66 শতাংশ কার্যকরী সৌর বিকিরণরুপে ভূপৃষ্ঠ ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। এই 34 শতাংশ অ্যালবেডোর মধ্যে 2 শতাংশ ভূপৃষ্ঠ থেকে, 7 শতাংশ বায়ুমণ্ডল থেকে এবং 25 শতাংশ বায়ুমণ্ডলে ভাসমান জলীয় বাষ্প, মেঘ, ধূলিকণা থেকে সরাসরি প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায় অর্থাৎ, এর পরিমাণ 2+7+25=34%। বাকি 66 শতাংশ কার্যকরী সৌর বিকিরণের মধ্যে 19 শতাংশ বায়ুমণ্ডল প্রত্যক্ষভাবে এবং 47 শতাংশ ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগ ও জলভাগ শোষণ করে। এই 47 শতাংশের মধ্যে 19 শতাংশ সরাসরি (direct radiation), 5 শতাংশ বিচ্ছুরণ দ্বারা (scatter ra- diation) এবং 23 শতাংশ বিকীর্ণ রশ্মির (diffused radiation) দ্বারা স্থলভাগ ও জলভাগ কর্তৃক শোষিত হয়
চিত্র: 1.1 উত্তাপের ভারসাম্য (হাফটন অনুযায়ী) |
কিন্তু চিত্র নং 1.1 পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় আগত সৌর বিকিরণ এবং কার্যকরী সৌর বিকিরণ যথাক্রমে 100 ইউনিট এবং 66 ইউনিট হলেও ভূপৃষ্ঠ 120 ইউনিট তাপশক্তি বিকিরণ করে। এর মধ্যে 6 ইউনিট বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সরাসরি মহাশূন্যে ফিরে যায় এবং বাকি 114 ইউনিট বায়ুমণ্ডল কর্তৃক শোষিত হয়। 10 ইউনিট পরিচলন প্রক্রিয়ায় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যরূপে বায়ুমণ্ডলে জমা হয় এবং 23 ইউনিট ঘনীভবনজনিত লীনতাপের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে এসে পৌঁছায়। আর পূর্বেই বলা হয়েছে কার্যকরী সৌর বিকিরণের 66 ইউনিটের মধ্যে - 19 ইউনিট বায়ুমণ্ডল সরাসরি শোষণ করে। সুতরাং বায়ুমণ্ডলে সঞ্চিত মোট শক্তির পরিমাণ হয়ে দাঁড়ায়- 19+114 +10 + 23 = 166 ইউনিট, যার মধ্যে 106 ইউনিট বায়ুমণ্ডল পুনরায় ভূপৃষ্ঠে প্রেরণ করে। ফলে বাকি পড়ে থাকা কা 60 ইউনিট মহাশূন্যে ফিরে যায়, এর সাথে 6 ইউনিট শক্তি ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক সরাসরি মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায় যা পূর্বেই বলা হয়েছে। সুতরাং মোট 60+6=66 ইউনিট শক্তি ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল থেকে মহাশূন্যে ফিরে যায় 1 কার্যকরী সৌর বিকিরণের সমান। এ ভাবে হাফটনের তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীতে উত্তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে