ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের পূর্বাভাস (Forecasting of tropical cyclone) :
অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে সৃষ্ট এই ধরনের ঘূর্ণবাতের গতিপথ, ঘূর্ণাবর্তে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ, সৃষ্টির কারণ ইত্যাদি সংক্রান্ত পূর্বাভাস দেওয়া আবহবিদদের কাছে অত্যন্ত কঠিন। তবে আধুনিক কম্পিউটারচালিত প্রযুক্তি এবং উপগ্রহ চিত্রের পর্যালোচনা দ্বারা ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের পূর্বাভাস দেওয়া অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়েছে।
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের পূর্বাভাস সংক্রান্ত ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যায় যে প্রথম ঘূর্ণবাতের পূর্বাভাস দেন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল উইলিয়াম রিড 1847 সালে কার্বেডোসে। মূলত ব্যারোমিটারে পারদস্তম্ভের ওঠানামার উপর ভিত্তি করেই রিড এই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এরপর 1870 সালে হাভানাতে বেনিটোভাইন নামে এক ব্যক্তি মেঘাচ্ছন্নতার তারতম্যের উপর বিচার করে সাইক্লোনের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তবে ঘূর্ণাবর্তের পূর্বাভাসের ব্যাপারে প্রকৃত উন্নতি ঘটে রেডিও আবিষ্কারের ফলে। 1943 সালে ঘূর্ণাবর্ত পূর্বাভাসের এক অভিনব পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিতে 'হ্যারিকেন হান্টার' নামে এক ধরনের বিশেষ প্লেন প্রস্তুত করা হয় যা উড়িয়ে হ্যারিকেনের মধ্যে সরাসরি প্রবেশ করত এবং ঘূর্ণবাতের চরিত্র সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করত। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে ঘূর্ণাবর্তের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হত। এরপর 60-এর দশকে প্রথম স্যাটেলাইট-এর ব্যবহার শুরু হয় ঘূর্ণাবর্তের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য।
তবে ঘূর্ণাবর্তের পূর্বাভাস সংক্রান্ত এই সমস্ত পদ্ধতিগুলো ছিল অত্যন্ত স্বল্পমেয়াদী, অর্থাৎ খুব বেশি আগে থেকে ঘূর্ণবাতের চরিত্র বোঝার উপায় ততটা ছিল না। তাই দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসের জন্য 70-এর দশকে গবেষণা শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে প্রথম উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসে উইলিয়াম গ্রে-এর কাছ থেকে। 1984 সালে প্রকাশিত তাঁর এক গবেষণাপত্রে তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে ঘূর্ণাবর্তের সাথে জড়িত পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলি অনুধাবন করলে দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দেওয়া যায়। গ্রে-এর দেখানো পথ অনুসরণ করে পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আরও গবেষণা চলে। এই ধরনের গবেষণার ফলশ্রুতি হিসাবে একটি মডেল প্রস্তুত করা হয় যার নাম 'লার্জ স্কেল সিনপটিক ফ্লো' (Large Scale Synoptic Flow)। এই মডেল ব্যবহার করেই বর্তমানে ঘূর্ণাবর্তের গতিপথের পূর্বাভাষ দেওয়া হয়, যার মোটামুটি 70 থেকে 90 শতাংশ মিলে যায়। তবে ঘূর্ণাবর্তের গতিপথের পূর্বাভাস প্রায় নিখুঁত দেওয়া গেলেও আসন্ন ঝড়ের গতিবেগ সংক্রান্ত পূর্বাভাস এখনো দেওয়া মুশকিল। ঝড়ের গতিবেগ সংক্রান্ত বিষয়ে নানা ধরনের মডেল থাকলেও তা সঠিক পূর্বাভাসের জন্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় এ বিষয়ে গবেষণা এখনো চলছে।