বজ্রঝড়ের অনুকূল অবস্থা (Favourable conditions of Thunderstorm) :
1. বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিতিশীলতা (Atmospheric instability):
নিম্ন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের উন্নতার বিরাট পার্থক্য বজ্রঝঞ্ঝা সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এক্ষেত্রে চরম অস্থিতিশীল বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা (Absolute instability condition) বজ্রঝড় সৃষ্টির জন্য আদর্শ। এই অবস্থায় বায়ুমণ্ডলে স্বাভাবিক পরিবেশগত তাপবিযুক্তি হার (ELR) অ্যাডিয়াবেটিক তাপবিযুক্তি হারের (ALR) অপেক্ষা সবসময় বেশি থাকে। তাই বায়ু যতই ওপরে উঠুক না কেন কখনোই পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সমতুল্য উয়তায় আসতে পারে না। উপরন্তু বায়ু শিশিরাঙ্ক তাপমাত্রায় পৌঁছলে ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট লীনতাপের প্রভাবে আরও ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং ধীরে ধীরে বিশালাকার কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি করে।
2. অস্থির বাতাসের উত্থান (Lifting of potentialy unstable air) :
অস্থিতিশীল বায়ুর ক্রমাগত উত্থান বজ্রগর্ভ মেঘ তথা কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। বায়ু যতই ওপরে উঠতে থাকে অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে ততই শীতল হতে থাকে। বায়ুপুঞ্জ শিশিরাঙ্ক তাপমাত্রায় পৌঁছলে ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এই অবস্থাতেও ঘনীভবনের লীনতাপের প্রভাবে বায়ু ঊর্ধ্বমুখী হলে আর্দ্র বায়ু অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে শীতল হওয়ার কারণে মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া অনেক উচ্চতা পর্যন্ত চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়াই কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সৃষ্টির জন্য দায়ী। ট্রেওয়ার্থার মতে, বজ্রঝড়ের ক্ষেত্রে ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট লীনতাপ তাপশক্তিকে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত করে। ফলে বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী সঞ্চলনকে ত্বরান্বিত করে। সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে উয় বায়ু শীতল সীমান্ত বরাবর ক্রমাগত ওপরে উঠতে থাকে বলে বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টির সুযোগ পায়।
3. পর্যাপ্ত উয় ও আর্দ্র বায়ুর জোগান (Supply of warm and moist air) :
বজ্রঝড় সৃষ্টির জন্য নিম্ন বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে উয় ও আর্দ্র বায়ু থাকা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমপক্ষে 75% থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে পরিবেশগত তাপবিযুক্তি হার প্রতি কিলোমিটারে 10° সেঃ হলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু অতিদ্রুত সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।
4. মেঘের গভীরতা (Thickness of cloud) :
উল্লম্বভাবে বিস্তৃত গভীর মেঘ বজ্রঝড় সৃষ্টিতে সাহায্য করে। ট্রেওয়ার্থার মতে, বজ্রঝড় সৃষ্টির জন্য মেঘের গভীরতা অর্থাৎ, ঘনীভবন স্তর ও হিমায়ন স্তরের মধ্যে যথেষ্ট গভীরতা থাকা প্রয়োজন। এই গভীরতা অন্তত 3000 মিটারের অধিক হওয়া উচিত। ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই অবস্থা সহজেই তৈরি হওয়ায় এখানে অধিক বজ্রঝড় দেখা যায়। কিন্তু মধ্য-অক্ষাংশীয় অঞ্চলে হিমায়ন স্তরটি খুবই কম উচ্চতায় অবস্থান করায় কদাচিৎ বজ্রঝড়ের উৎপত্তি ঘটে।
5. স্থানীয় পরিচলন কোশের উপস্থিতি (Local convective cell) :
পরিচলন কোশে না থাকলে বজ্রঝড় সৃষ্টি হয় না। কারণ পরিচলন কোশই উয় জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী চলনকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে এবং বজ্রগর্ভ মেঘের শক্তি বৃদ্ধি করে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থানীয় পরিচলন কোশের উপস্থিতির জন্য প্রতিদিন বিকালে বজ্রঝড়ের সৃষ্টি হয়।