welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অঞ্চল গঠনে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ(Factors influencing the Formation of Regions):

 অঞ্চল গঠনে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ(Factors influencing the Formation of Regions):


অঞ্চল গঠনে যে সমস্ত উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল-

(A) প্রাকৃতিক প্রভাব (Physical factors)

(i) ভূপ্রকৃতি (Landform) : ভূপ্রকৃতি হল অঞ্চল গঠনের একটি অন্যতম প্রাথমিক নিয়ামক। সাধারণত অঞ্চলরূপে যে সমস্ত পরিসরের কথা বিবেচনা করা হয়, তার মধ্যে নির্দিষ্ট একটি ভূ-প্রাকৃতিক আধার অবশ্যই থাকে। এই ধরনের ভূ-প্রাকৃতিক আধারে মূলত পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি প্রভৃতি এককগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও, আরও বেশকিছু উপনির্ধারক রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে ভূপ্রকৃতিকেন্দ্রিক আঞ্চলিক ধারণাটি যথেষ্ট স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এগুলি হল-

ভূমিভাগের ব্যাপ্তি, ভূমিভাগের উচ্চতা, ভূমির ধারণক্ষমতা, ভূমিভাগের বসবাসযোগ্যতা, ভূমির উৎপাদনশীলতা ভূমিভাগের পরিবর্তনশীলতা প্রভৃতি। আসলে ভূমিভাগের এই ধরনের প্রতিটি নির্ধারকগুলিকে অবলম্বন করে অঞ্চলভিত্তিক দৈশিক পরিসর বাস্তবসম্মত হয়ে ওঠে। অঞ্চল গঠনে দু-প্রাকৃতিক প্রভাব বিশ্লেষণের একজন গোঁড়া সমর্থক ছিলেন প্রখ্যাত মার্কিন ভৌগোলিক রিচার্ড হার্টশোর্ন। পরবর্তীকালে জে, ডব্লু পাওয়েল (1895 খ্রিস্টান্ড) আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে ভূমিরূপ কেন্দ্রিকতার বিষয়টি নিয়েও বিশদ গবেষণা শুরু করেছিলেন।

(ii) জলবায়ু (Climate): সমগ্র পৃথিবীব্যাপী উন্নতা ও বৃষ্টিপাতের স্থানীয় বণ্টন, বায়ুপ্রবাহগত প্রকৃতি, আবহাওয়ার বৈচিত্রাতা প্রভৃতি আঞ্চলিক পরিসরের একাধিক ঘটনাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করায়, অঞ্চল গঠনে জলবায়ুগত উপাদানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে, বিভিন্ন ভৌগোলিক তাঁদের আঞ্চলিক গবেষণায় জলবায়ুগত ক্ষেত্রটিকেও যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছেন। পরবর্তীকালে জলবায়ুকেন্দ্রিক ক্ষেত্রপটে আঞ্চলিক স্তরে বিভিন্ন প্রজাতির জীব বণ্টনের পাশাপাশি মানুষের বসবাসযোগ্যতার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এপ্রসঙ্গে হান্টিংটনের একটি উল্লেখযোগ্য বক্তব্য হল- Temperate marine climate withtheir stimulating and mungorating effects on the psychological and mental framework ofmen are among the climates par excellance the best area for maximum, concentration of human settlement

(iii) স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural vegetation): পৃথিবীতে বিভিন্ন স্বাভাবিক উদ্ভিদগোষ্ঠীর স্বতন্ত্রতাও অঞ্চল গঠনের সহায়ক হয়ে ওঠে। সাধারণত মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্থানীয় ভূ-প্রকৃতি, মাটি ও জলবায়ুর ওপর ভিত্তি করে সম বা বিষম প্রজাতির উদ্ভিদগোষ্ঠী একত্রে ভিন্ন ভিন্ন উদ্ভিদাঞ্চল গড়ে তোলে। আসলে, স্বাভাবিক উদ্ভিদাঞ্চলগুলি বিপুল পরিমাণে জৈব সম্পদে পরিপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীগোষ্ঠীর স্বাভাবিক বিচরণস্থলরূপে কাজ করে। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত স্বাভাবিক উদ্ভিদাঞ্চলগুলির একটি নির্দিষ্ট সীমানা থাকে, যার সাহায্য কোনও একটি ভূখণ্ডের সস্থানিক পরিচয় আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন-আমাজন অরণ্যকেন্দ্রিক (নিরক্ষীয় চিরহরিৎ) ব্রাজিলের আন্তর্জাতিক পরিচিতি, নাতিশীতোয় সরলবর্গীয় অরণ্যাঞ্চলকেন্দ্রিক কানাডার পরিচিতি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।


(iv) নদী অববাহিকা (River basin): অনেকসময় প্রধান নদী, এবং তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা উপনদী, শাখা নদী, প্রশাখা নদী বরাবর গড়ে ওঠা বিস্তীর্ণ কোনও অববাহিকাগুলি আঞ্চলিক সত্ত্বায় বা অঞ্চল গঠনে ক্রিয়াশীল হয়। এই ধরনের নদী অববাহিকাগুলি এমনই একটি ক্ষুদ্র পারিসরিক প্রাকৃতিক একক, যেখানকার ভৌগোলিক অবস্থানগত আনুকূল্যতা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত জল এবং উর্বরতা সমৃদ্ধ মৃত্তিকাকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রাথমিক বাসভূমি এমনকি কর্মকেন্দ্রিক জীবনধারা প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং সেটি পরবর্তীকালে একটি উন্নত নগরকেন্দ্রিক অঞ্চলে উপনীত হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাচীন নগরকেন্দ্রিক অঞ্চলগুলি বিভিন্ন নদীতীরবর্তী অববাহিকাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। যেমন-মিশরীয় নীলনদের তীরবর্তী অঞ্চল, ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস তীরবর্তী অঞ্চল প্রভৃতি।

(v) প্রাকৃতিক পরিবেশ (Natural environment): যে পারিপার্শ্বিকতায় মানুষসহ সমস্ত জীবজগৎ পরিবেষ্টিত থাকে তাকেই বলা হয় প্রাকৃতিক পরিবেশ। পৃথিবীর উৎপত্তির ক্রান্তিকাল থেকেই প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক নানা উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা পরিবেশ অঞ্চলকে একটি মৌলিক কার্যকরী কাঠামোতে উপনীত করেছে। পরিবেশীয় কাঠামোয় থাকা আলো, বাতাস, জল, মাটি, বিভিন্ন জীবজন্তু এমনকি মানুষসহ প্রত্যেকটি উপাদানই স্বতন্ত্রভাবে অদ্বিতীয় প্রান ভরপুর পৃথিবী গঠনে সহায়ক হয়েছে। সেই কারণে ভৌগোলিকরা মনে করেন- 

সভ্যতার বিবর্তনের অন্যতম প্রাপ্তি হল এই পরিবেশ (Environment)। তাই অঞ্চল গঠনের ধারণায় প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে।


ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে অঞ্চলভিত্তিক মানুষের বাসস্থান বিশ্লেষণে প্রাকৃতিক পরিবেশকেন্দ্রিক একাধিক চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণবাদের কাঠামোয় গড়ে উঠেছিল। হান্টিংটন, ম্যাকিন্ডার, ই. সি. সেম্পেল প্রমুখ একাধিক বিশেষজ্ঞের ধারণায় এই বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণভাবে স্থান পেয়েছিল।


(B) মনুষ্যকেন্দ্রিক প্রভাবকসমূহ (Human oriented factors)

আসলে মানুষকে বাদ দিয়ে অঞ্চল গঠনের ধারণাটি যথেষ্ট অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বিশিষ্ট অধ্যাপক মার্ক জেফারসন এবং ওয়াল্টার টাওয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর জনবণ্টনকে প্রাধান্য দিয়েই অঞ্চলের সমীক্ষা করেছিলেন। বিশেষত অঞ্চলের স্বতন্ত্র কাঠামোয় মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনৈতিক বিভিন্ন পরিসরের মধ্যে থাকা একাধিক উপাদানের সার্থক সমন্বয় ঘটে থাকে বলেই প্রতিটি অঞ্চলের পৃথক পৃথক সত্ত্বাগুলিকে চিহ্নিত করা আরো সহজ হয়ে যায়।


(i) জনগোষ্ঠী ও পরিবার (Peoples and Family): অঞ্চল গঠনের মনুষ্যকেন্দ্রিক প্রধান শর্তটিই হল জনগোষ্ঠী ও তাদের পারিবারিক কাঠামো। সাধারণত পরিবারকে মানুষের একটি আদিম এবং নিরাপদ সামাজিক সংগঠন বলা হয়। প্রতিটি অঞ্চলেই পৃথক পৃথক জনগোষ্ঠী পারস্পরিক আত্মিক সম্পর্কের একটি অভিন্ন সূত্রে গেঁথে থাকে। পারিবারিক কাঠামোয় মানুষের আত্মীয়তা, পারস্পরিক সাহচর্যতা, ঐক্যবন্ধতা ও বংশানুক্রমিক সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্রিক রীতিনীতি তথা নৈতিক সুঅভ্যাসগুলির চিরন্তন প্রবাহ ঘটতে দেখা যায়। এর ফলে, পরিবারভিত্তিক মানুষের বংশপরিচয় তথা রক্তের সম্পর্ক, নামকরণ, জৈবিক সম্পর্কের একটি শাশ্বত প্রথাগুলি প্রতিটি অঞ্চলেই বিশেষভাবে স্বীকৃতি পায়। তাই অঞ্চল গঠনে পৃথিবীর বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তথা স্থানীয় জনজাতিগুলির মধ্যে গড়ে ওঠা পারিবারিক ঐতিহ্যগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-আফ্রিকান জনজাতি, আমেরিন্ডিয়ান জনজাতি, ইউরোপীয় জনজাতিরা তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যকে অবলম্বন করেই বিভিন্ন মহাদেশে এক-একটি বৃহৎ ভৌগোলিক মানব অঞ্চল গড়ে তুলেছে। রবার্ট প্লাট বলেছেন-অঞ্চল সর্বদা কোনও একটি ভৌগোলিক সীমানায় সেখানকার অধিবাসীদের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের নিরিখে গড়ে ওঠে।


(ii) সংস্কৃতি (Culture): অঞ্চল গঠনের ক্ষেত্রে সংস্কৃতিকে সভ্যতার ধারাবাহিক উৎকর্ষতার একটি অন্যতম বাহক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত কর্মকেন্দ্রিক অঞ্চলগুলি সংস্কৃতির পথ ধরেই বিকশিত হয়েছে। সাধারণত সাংস্কৃতিক পরিসর তার নমনীয় এবং সমন্বয়ী ভাবধারায় এমন কিছু সুঅভ্যাস গড়ে তোলে, যার প্রভাবে দীর্ঘকাল ধরে প্রায় সমস্ত অঞ্চল নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। আবার, সাংস্কৃতিক দীক্ষা প্রতিটি মানুষকে সামাজিক ভারসাম্যযুক্ত এমন একটি বিশেষ কাঠামোয় বেঁধে রাখে, যা নতুন নতুন ক্রিয়াশীল অঞ্চল সৃষ্টিকেও অনুপ্রাণিত করে। রেইমন পানিক্কার মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিতে সংস্কৃতির উদ্রেকের কারণ হিসেবে মোট 29টি প্রভাবকের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যার সবকটিই সাংস্কৃতিক পরিবেশের আওতাভুক্ত। এরমধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল-উন্নয়ন, বিবর্তন, আত্মীকরণ, নতুন ভাবনা, নবরূপ দান, মানসিক ঔদার্য, সমন্বয়, প্রচেষ্টা, আধুনিকীকরণ, শিল্প, বাণিজ্য, রূপান্তরকরণ, পুনর্জাগরণ, প্রথা, রীতি প্রভৃতি। এ ছাড়াও, অতীতের আঞ্চলিক ক্ষেত্রপটে সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য (Cultural landscape), সাংস্কৃতিক ব্যাপন (Cultural deffusion), সাংস্কৃতিক সংযোগ (Cultural combination) প্রভৃতিকে সহায় করেই বিশ্বে এক-একটি গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার সূতিকাগার আত্মপ্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল-পশ্চিম ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক অঞ্চল, মধ্য আমেরিকান সাংস্কৃতিক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় সাংস্কৃতিক অঞ্চল, উত্তর চিন দেশীয় সাংস্কৃতিক অঞ্চল, মিশরীয় সাংস্কৃতিক অঞ্চল, সিন্ধু প্রদেশীয় সাংস্কৃতিক অঞ্চল প্রভৃতি।


(iii) অর্থনৈতিক পরিসর (Economical extent): পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন কর্মকেন্দ্রিক পরিমণ্ডল যে-সমস্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে, সেটিকেও অঞ্চল গঠনের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রূপে গণ্য করা হয়। মূলত উৎপাদন বা আয়ের পথ ধরেই মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত পরিসরে যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। সাধারণত আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সম্পদের সুষম ব্যবহার, শিক্ষাগত কর্মক্ষেত্র, উৎপাদনমূলক অর্থনীতি, ভোগবিলাসিতা-সহ একাধিক বিষয় বহুমুখী অর্থনৈতিক ক্ষেত্র দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01