আঞ্চলিক ধারণার বিবর্তন বা পটভূমি(Evolution or Background of Regional Concept):
ভূগোল শাস্ত্রের কেন্দ্রীয় বিষয়রূপে অঞ্চলের ধারণাগত পটভূমিটি যথেষ্ট প্রাচীন। অতীতে গ্রিক ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্ষেত্র বিবরণবিদ্যা (Chorography) এবং ক্ষেত্রতত্ত্ব (Chorography) যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই দুটি ধারণাই পরবর্তীকালে অঞ্চল সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার বিপুল গ্রন্থসম্ভারের জন্ম দেয়। গ্রিক দার্শনিক হেকেটিয়াস (550-476 খ্রিঃপূঃ) প্রণীত "Gesperiodos" গ্রন্থটিতে পৃথিবীপৃষ্ঠের অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষা বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছিল। এরপর, হেরোডোটাস (485-425 খ্রিঃপূঃ) কর্তৃক বিভিন্ন ভৌগোলিকো এলাকাভিত্তিক মানুষের জীবন-প্রণালী বিশ্লেষণের প্রচেষ্টায় অঞ্চল শব্দটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অবশ্য, অঞ্চলকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে ইমানুয়েল কান্ট (1724-1804 খ্রিঃ)-এর সময়কাল থেকে। সেই সময় কান্ট ভূগোল শাস্ত্রটিকে স্থানভিত্তিক সাদৃশ্যতা প্রদর্শনে বিভিন্ন আঞ্চলিক তথ্য বণ্টনের আধাররূপে আখ্যায়িত করেছিলেন। এরপর, আলেকজান্ডার ভন হামবোন্ড (1769-1859)কৃত ক্ষেত্রসমীক্ষায় ভ্রমণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের প্রথাটি আঞ্চলিক ভূগোল, চর্চার একটি বিজ্ঞানসম্মত ভিত গড়ে তোলে।
কার্ল রিটার (1817-1859 খ্রিঃ) এলাকাভিত্তিক মানুষ এবং প্রকৃতি মিথস্ক্রিয়ার অভিজ্ঞতা বা লক্ষ্ম জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন অঞ্চল পৃথকীকরণে সার্বিক প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। বস্তুত, এই দৃষ্টিভঙ্গিকে কাজে লাগিয়েই রিটার আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া প্রভৃতি মহাদেশকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করে, সেগুলির বিশদ বিবরণ দিয়েছিলেন। তাঁর প্রকাশিত "Erdkunde" গ্রন্থটিতে বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক 'Unity in diversity' বিশ্লেষণ আকারে বিশেষভাবে। ফুটে ওঠে।
আধুনিক যুগে অঞ্চল সংক্রান্ত ধারণাটি আরওকিছুটা স্পষ্টতা পায় জার্মান ভৌগোলিক
ফারডিনান্ড ফন রিখটহোফেন (1833-1905 খ্রিঃ)-র "Spezial Geographie" রূপায়ণের মাধ্যমে। বিশেষ করে, 1833 খ্রিস্টাব্দে লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দেওয়ার প্রারম্ভে "Aufgaben und Methoden der Heutigen Geographie" শিরোনামে জার্মান ভাষায় যে উদ্বোধনী বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তার ইংরেজি অনুবাদটি হল (ডিকিনসন প্রদত্ত) "Geography may be pursued through the most detailed investigation of the smallest areas, as well as through comperative study of larger areas." রিখটহোফেনের এই ধরনের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি ভূগোল শাস্ত্রকে পরবর্তীকালে একটি দৈশিক বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত করে ।