welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতে মৌসুমি বায়ুর ওপর ENSO-এর প্রভাব (Effects of ENSO phenomena on Monsoon in India) :

 ভারতে মৌসুমি বায়ুর ওপর ENSO-এর প্রভাব (Effects of ENSO phenomena on Monsoon in India) :


এল নিনো ও দক্ষিণী-দোলনের প্রভাবে সমগ্র পৃথিবীজুড়ে বায়ু সংবহন তন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভারতে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহে এক বিরাট ছন্দপতন ঘটে। যদিও ENSO-এর সঙ্গে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নিয়ে আবহবিদ মহলে এখনো যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তা সত্ত্বেও পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এল নিনো বছরগুলিতেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং মৌসুমি ট্রাফও অন্যান্য বছরের তুলনায় দুর্বল থাকে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আবহবিদগণ লক্ষ করেন যে, ওয়াকার চক্রের স্বাভাবিক অবস্থায় পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর অর্থাৎ দক্ষিণ আমেরিকা উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে উচ্চচাপ ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর অর্থাৎ পূর্ব অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সংলগ্ন অঞ্চলে নিম্নচাপ অবস্থান করায় মাসকারেনাস উচ্চচাপ কক্ষ ও সোমালিয়াতে অবস্থিত নিম্নচাপ কক্ষ দুটি সক্রিয় থাকে। ফলে মাসকারেনাস থেকে পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়ার দিকে বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় হয় এবং পূর্ব আফ্রিকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই ট্রাফটি সক্রিয় থাকলে ভারতের দিকে মৌসুমি ট্রাফটিও সক্রিয় হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ে মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করে। কিন্তু ওয়াকার চক্রের নিষ্ক্রিয় পর্যায়ে দক্ষিণী-দোলনের ফলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে নিম্নচাপ ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে উচ্চচাপ সৃষ্টি হলে ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় (পশ্চিম থেকে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে) এবং দক্ষিণ-পূর্ব


আয়ন বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় এল নিনো নামক উন্ন সামুদ্রিক স্রোতের আবির্ভাব ঘটে। এর ফলে ওয়াকার সঞ্চালন কোশগুলির অবস্থান ও বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন হওয়ায় ম্যাসকারেনাস উচ্চচাপ ও সোমালিয়ায় নিম্নচাপ বলয়টি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই মাসকারেনাস থেকে সোমালিয়ার দিকে যথেষ্ট বায়ুপ্রবাহ না থাকায় পূর্ব আফ্রিকায় বৃষ্টিপাতের অভাবে খরার প্রাদুর্ভাব ঘটে। এর ফলে মৌসুমি ট্রাফটিও যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসে।


প্রতি 3-5 বছরে একবার এল নিনোর উৎপত্তি ঘটে। একবিংশ শতকে 2002, 2004, 2006, 2009 এবং 2014-তে এল নিনোর প্রাদুর্ভাবে ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক ছন্দপতন ঘটে। এল নিনোর প্রভাবে ভারতবর্ষের জনজীবনে যে সমস্ত প্রভাব পড়ে তা নীচে আলোচনা করা হল-


1. স্বল্প বৃষ্টিপাত ও খরার প্রাদুর্ভাব: এল নিনোর প্রভাবে মৌসুমি ট্রাফ দুর্বল হয়ে পড়ায় ভারতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম বৃষ্টিপাত ঘটে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় 65%-এরও কম। ফলে পশ্চিম, মধ্য, দক্ষিণ ও উত্তর ভারতে আবহাওয়াগত ও কৃষি সংক্রান্ত খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি খরার কবলে পড়ে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, কর্ণাটক, ঝাড়খন্ড ও বিহার। 1871-এর পর বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া 6টি বড়ো মাপের খরা এল নিনো বছরেই হতে দেখা যায়।


2. কৃষিতে উৎপাদন হ্রাস: ভারতীয় কৃষিব্যবস্থা জলের জন্য এখনো মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। তাই এল নিনো বছরগুলিতে বৃষ্টিপাতের অভাবে ভারতে কৃষিতে উৎপাদন প্রায় 30% কমে আসে। ধান, তুলো, সয়াবিন, ভুট্টা, আখের চাষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খারিফ ঋতুতে ধান ও তৈলবীজ উৎপাদন অনেকটাই কমে যায়।


3. অর্থনৈতিক ক্ষতি বৃদ্ধি: কৃষির উৎপাদনে ঘাটতির অর্থ মোট জাতীয় উৎপাদনে (GDP) ঘাটতি। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এল নিনো বছরগুলিতে বৃষ্টিপাতের অভাবে সংঘটিত খরার কারণে ভারতে GDP বৃদ্ধির হার 2 থেকে 5 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে'। Chamber of Commerce and Industry of India-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এল নিনোর কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের 5 শতাংশ ঘাটতি হলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার 1.75% কম হয়, যা 2014-15-এর দামস্তর অনুযায়ী 180,000 কোটি টাকা ক্ষতির সমান।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01