তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic Wave):
1860-এর দশকে জেমস্ ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (James Clerk Maxwell) সর্বপ্রথম তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ বা বিকিরণ (EMR)-এর ধারণা দেন।
Pic1
এটি শূন্য মাধ্যম দিয়ে আলোর গতিবেগের ন্যায় প্রতি সেকেন্ডে 3,00,000 km (3 × 10 m/s) বা 1,86,282 মাইল বেগে প্রবাহিত হয়। EMR-এর দুটি অনিয়মিত পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র (fluctuating field) আছে যা পরস্পরের সঙ্গে সমকোণে অর্থাৎ 90° কোণে অবস্থান করে। এই দুটি পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র হল তড়িৎ এবং চুম্বকীয় ক্ষেত্র, যা প্রবাহের অভিমুখের সঙ্গে উল্লম্বভাবে অবস্থান করে ("The Electromagnetic wave consists of two fluctuating fields-one electric and the other magnetic. These two fluctuating fields are at right angles (90°) to one another, and both are perpendicular to the direction of propagation.")
Pic 2 scroll down for picture 👇
তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (wavelength) মাধ্যমে EMR প্রবাহের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়। কোনো তরঙ্গের সন্নিহিত তরঙ্গশীর্ষ বা চূড়ার (crest) মধ্যবর্তী দূরত্ব পরিমাপ করে তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ণয় করা হয়। তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে গ্রিক শব্দ ল্যামডা এবং এর পরিমাপক একককে মিটার (m) অথবা মাইক্রোমিটার (µm) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এক মাইক্রোমিটার হল 1 মিটারের 1 মিলিয়ন ভাগের 1 ভাগ। অর্থাৎ, 1 µm = 0.000001 m = 10 m EMR-এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর প্রবাহমাত্রা (frequency)। একক সময়ে নির্দিষ্ট বিন্দুকে যতগুলি তরঙ্গশীর্ষ (crest) অতিক্রম করে, তাকে প্রবাহমাত্রা বলে। একে hertz (Hz) একক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। EMR-এর প্রবাহমাত্রা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের EMR-এর প্রবাহমাত্রা বেশি। তরঙ্গ- দৈর্ঘ্য যত বড়ো হবে
Pic3 scroll down for picture 👇
প্রবাহমাত্রা তত কমবে। আলোকরশ্মির গতিবেগ ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রবাহমাত্রার দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। যদি রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১. হয় এবং প্রবাহমাত্রা প্রতি একক সময়ে । হয়, তবে আলোর গতিবেগ (c) হল-c = f.
সুতরাং EMR বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ও প্রবাহমাত্রার হতে পারে। তবে এর মধ্যে EMR-এর অতি সামান্য অংশ, 0.4 µm থেকে 0.7 µm তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যন্তই আমরা দেখতে পাই। তাই এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অংশকে দৃশ্যমান আলোক- রশ্মি (Visible Region of Light) বলে। এই দৃশ্যমান আলোকরশ্মির সমস্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মিশ্রণেই সৃষ্টি হয় সাদা রং। তাই আমরা আলোকে সাদা রঙের দেখি। 1672 সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন সর্বপ্রথম আলোর প্রতিসরণের (refraction) ধর্মকে কাজে লাগিয়ে একটি প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোকতরঙ্গ পাঠিয়ে দৃশ্যমান আলোকরশ্মিকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুসারে ভেঙে সাতটি রঙের ক্রমপর্যায় দেখান। এই ক্রমপর্যায়টি সর্বনিম্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি নীল থেকে সর্বাধিক বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি লাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের একত্রে 'VIBGYOR' বা বাংলায় বেনীআসহকলা বলে। এভাবে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা প্রবাহমাত্রা অনুযায়ী EMR-কে বিশ্লিষ্ট করে এর শ্রেণিকরণ করাকেই তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালী (Electromagnetic Spectrum) বলে। সাদা আলোকে একটি প্রিজমের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে প্রিজম থেকে নির্গত রশ্মিগুচ্ছকে একটি সাদা পর্দায় ফেললে একটি রঙিন বলয় দেখা যায়। এই বলয়ের নীচে বেগুনি থেকে শুরু করে নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং সবার ওপরে লাল বর্ণ অবস্থান করে। এই রঙিন বলয়কেই একত্রে দৃশ্যমান আলোকরশ্মির বর্ণালী (Visible spectrum) বলা হয়। তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুযায়ী (ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ) দৃশ্যমান আলোর বর্ণালীকে তিনটি বৃহৎ শ্রেণিতে ভাঙা হয়। যথা-
Pic4 scroll down for picture 👇
এই তিনপ্রকার বর্ণালীকে আবার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে একাধিক ভাগে ভাগ করা যায়।
Pic5 scroll down for picture 👇
Pic 1 |
Pic 2 |
Pic 4 |
Pic 5 |
Pic 3 |