এল নিনো ও দক্ষিণ দোলনের প্রভাব (Effects of El Nino and Southern Oscillation) :
আপাতভাবে এল নিনো একটি আঞ্চলিক সমুদ্রস্রোেত হলেও এর বিশ্বব্যাপী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এর প্রভাবগুলি হল-
1. এল নিনোর উৎপত্তি ওয়াকার সঞ্চলনের স্বাভাবিক অবস্থার বিঘ্ন ঘটায়। এর ফলে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে বায়ুসংবহন তন্ত্রে এক বিরাট মাত্রায় পরিবর্তন আসে। প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে খরা-বন্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে।
2. এল নিনোর প্রভাবে সমুদ্রজলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পেরু উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে প্রচুর সামুদ্রিক মাছ মারা যায়। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল সংলগ্ন দেশগুলিতে মৎস্য আহরণে বাধা পেয়ে মৎস্যজীবীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
3. উন্নতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র জলের প্লাঙ্কটনগুলি মারা যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
4. দক্ষিণ দোলনের কারণে এল নিনো বছরগুলিতে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে খরা এবং পেরু-চিলির শুষ্ক মরুভূমিতে অতিবর্ষণে বন্যার সৃষ্টি হয়।
5. উত্তর আমেরিকার মধ্য-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অংশে এবং কানাডায় শীতের প্রকোপ কমে।
6. আমাজন নদী অববাহিকা, কলম্বিয়া, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। ফলে এখানকার বনভূমিতে দাবানল সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
7. পূর্ব আফ্রিকায় বৃষ্টিপাতের সময় বেড়ে যাওয়ায় মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আর্দ্র ঋতু বিরাজ করে।
৪. দক্ষিণ-মধ্য আফ্রিকায় এল-নিনোর আবির্ভাবের বছরে ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুষ্ক আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।
9. এল নিনো আবির্ভাবের পর উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় গ্রীষ্মকালের অর্ধেকের বেশি সময় বাতাসের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে। এই সময় আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে উয় স্রোতের প্রাধান্যের কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বজ্রঝঞ্ঝার প্রকোপ বাড়ে। 1997 খ্রিস্টাব্দে এই কারণে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে একাধিক শীতকালীন ঝঞ্ঝা দেখা গেছে।
10. স্বাভাবিক বছরগুলিতে পেরু-চিলির শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 10-13 সেমি সেখানে এল নিনো বছরে বেড়ে দাঁড়ায় 300-400 সেমি। এর ফলে ওই অঞ্চলে ফসল উৎপাদন বেড়ে যায় এবং অর্ধশুষ্ক অঞ্চল সবুজ ঘাসে ঢেকে যায়।
11. এল নিনোর প্রভাবে ভারতবর্ষে মৌসুমি ট্রাফ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে মৌসুমি বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম হয়। এর প্রভাবে ভারতে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে। 2009 খ্রিস্টাব্দে এল নিনোর কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অভাবে ভারতে প্রায় 250টি জেলায় খরার প্রাদুর্ভাব হয়।