welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ঘনীভবন প্রক্রিয়া (Condensation Process)

ঘনীভবন প্রক্রিয়া (Condensation Process):


বায়ুমণ্ডলের উক্ত আবহাওয়াগত অনুকুল বিষয়গুলির উপস্থিতিতে দুটি শীতলীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘনীভবন সংঘটিত হয়। প্রক্রিয়া দুটি হল-(a) ডায়াবেটিক প্রক্রিয়া (Diabetic Process); (b) অ্যাডিয়াবেটিক প্রক্রিয়া (Adiabetic Process).


(a) ডায়াবেটিক প্রক্রিয়া (Diabetic Process):

আয়তনের কোনোরূপ পরিবর্তন না ঘটিয়ে বায়ুমন্ডলে তাপের বিযুক্তিকরণ প্রক্রিয়ায়ই হল বায়ুর শীতলীকরণের ডায়াবেটিক প্রক্রিয়া। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে ডায়াবেটিক প্রক্রিয়াটি সম্পাদিত হয়-


(ক) সংস্পর্শজনিত শীতলীকরণ (Contact Cooling): তাপবিকিরণ করে ভূপৃষ্ঠ শীতল হয়ে পড়লে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে পরিবহণ প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে তাপবিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়ে। এর ফলে অনেকসময় ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হয়।


(খ) বিকিরণজনিত শীতলীকরণ (Radiation Cooling): ভূপৃষ্ঠের মতো বায়ুমণ্ডলও তাপবিকিরণ করে। তবে এই ধরনের বিকিরণের হার খুবই ধীরগতিসম্পন্ন। এটি ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সংস্পর্শজনিত শীতলীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।


(গ) অনুভূমিক প্রবাহজনিত শীতলীকরণ (Advection Cooling): দুটি ভিন্নধর্মী বায়ু একে অপরের সংস্পর্শে এলে এই পদ্ধতিতে শীতলীকরণ ঘটে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ উয় বায়ু অধিক উয়তার কারণে সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌঁছাতে পারে না। এই অবস্থায় কোনো শীতল বায়ুপুঞ্জের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে উয় বায়ু দ্রুত তাপবিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়ে এবং বায়ুমধ্যস্থ আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে 100 শতাংশে পৌঁছে যায়। ফলে ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।


(b) অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতি (Adiabetic Process):

বাইরে থেকে উত্তাপ গ্রহণ বা বর্জন না করে কেবলমাত্র সংকোচন ও প্রসারণের দ্বারা আয়তনের পরিবর্তনের ফলে বায়ুতে যে পরিমাণ তাপের সংযোজন বা বিযুক্তিকরণ ঘটে তাকেই তাপ বিযুক্তকরণের অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতি বলে। ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। পিটারসেন অনুযায়ী অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে ঘনীভবনের জন্য দুটি আদর্শ অবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। (ক) জলাকর্ষী কণা (Hygroscopic Nuclei) দ্বারা জলীয় বাষ্পের শোষণ এবং (খ) বাষ্পীভবনের কারণে সৃষ্ট লীন তাপের (Latent heat of vaporization) উপস্থিতি।


(ক) অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে শীতলী- ভবনের কারণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু শিশিরাঙ্ক তাপমাত্রায় পৌঁছালেই যে ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে এমনটি ভাবা উচিত নয়। জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ জলাকর্ষী কণার উপস্থিতি না থাকলে ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হয় না। বাতাসে উপস্থিত অ্যারোসল দুই ধরনের হয়- 




(a) জলাকর্ষী (Hygroscopic) ও (b) জলবিদ্বেষী (Hygrophobic)। জলাকর্ষী কণাগুলি জলকণাকে শোষণ করে বহুক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। এই ধরনের জলাকর্ষী কণার প্রধান উৎসগুলি হল-সমুদ্রের লবণকণা (ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড বা সোডিয়াম ক্লোরাইড), আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় উপস্থিত সালফার ডাইঅক্সাইড, কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়াতে উপস্থিত সালফার ও নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ, জৈব কণা ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে সামুদ্রিক লবণকণা জলকর্ষী কণার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সমুদ্র অঞ্চলের বাতাসে প্রতি কিউবিক মিটারে 10 লক্ষ এবং স্থলভাগে 50 থেকে 60 লক্ষ জলাকর্ষী কণা উপস্থিত থাকে। এই সকল জলাকর্ষী কণাগুলি জল শোষণ করে ঘনীভবন কণাতে (Condensation Nuclei) পরিণত হয়। এই ঘনীভবন কণা আদর্শ পরিবেশে মোটামুটি গড়ে 100 সেকেন্ডে জলকণায় (Cloud droplet) পরিণত হয় এবং 24 ঘণ্টার মধ্যে এটি বৃষ্টি বিন্দুতে (rain drop) পরিণত হয়। ঘনীভবন কণাগুলি বিভিন্ন ব্যাসার্ধের হয়, মোটামুটি 0.001 থেকে 10 মাইক্রোমিটার পর্যন্ত। 0.2 মাইক্রোমিটারের (um) কম ব্যাসার্ধযুক্ত কণাকে আবিষ্কর্তা ব্রিটিশ পদার্থবিদ অ্যাটকেন (Aitken)-এর নামানুসারে অ্যাটকেন কেন্দ্রাণু (Aitken Nuclei) বলে। 0-2 থেকে 1 µm ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট ঘনীভবনের কণাকে বৃহৎকণা (Large Nucli) বলে। 1 µm-এর অধিক ব্যাসার্ধযুক্ত কণাকে অতিকায় বৃহৎ কণা (Giant Nuclui) বলে। ঘনীভবন কণার আকৃতি যত ছোটো হবে তত দ্রুত জলকণার সৃষ্টি হবে। অপেক্ষাকৃত বড়ো ঘনীভবন কণাগুলি তুলনামূলক ধীরগতিতে জলকণা সৃষ্টি করে। সাধারণত 0.1 µm-এর কম ব্যাসার্ধযুক্ত ঘনীভবন কণাগুলিই জলকণা সৃষ্টিতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি কিউবিক মিটার বায়ুতে এই ধরনের কণার উপস্থিতি মাত্র 100 থেকে 1000টি।



(খ) জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু শিশিরাঙ্ক তাপমাত্রায় পৌঁছালেই জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হওয়ায় লীনতাপ ত্যাগ করে। একে ঘনীভবনের লীন তাপ (Latent Heat of Condensation) বলে। এর পরিমাণ প্রতিগ্রামে 590 ক্যলরি। এই লীন তাপ সংলগ্ন বায়ুতে সংযুক্ত হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বায়ুমণ্ডলের উন্নতা বাড়িয়ে তোলে এবং বায়ুকে আরো শুষ্ক করে তোলে। এর ফলে বায়ু ঊর্ধ্বমুখী ও বিভিন্ন দিকে চালিত হওয়ার শক্তি অর্জন করে। এভাবে বায়ু ঘনীভবন অবস্থাকে বজায় রাখার জন্য অতিসম্পৃক্ত (Super Cooled) হয়ে পড়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01