প্রতীপ ঘূর্ণবাতের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Anti-cyclone) :
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আবহবিদগণ প্রতীপ ঘূর্ণবাতের শ্রেণিবিভাজন করেছেন। তবে আবহবিদ্যায় প্রতীপ ঘূর্ণবাতের শ্রেণিবিভাজনের ক্ষেত্রে নীচের দুটি ভিত্তিই সর্বাধিক গ্রহণীয় যথা-
1. উন্নতার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাজন ও
2. উৎপত্তির ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাজন।
1. উন্নতার ভিত্তিতে প্রতীপ ঘূর্ণবাতের শ্রেণিবিভাজন (Classification of Anti-cyclones based on Temperature) :
উন্নতার বিচারে আবহবিদ হ্যানজিল্ক 1909 সালে প্রতীপ ঘূর্ণবাতকে দু'টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন-
(ক) শীতল কেন্দ্রযুক্ত প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Cold core Anti-cyclone) : উত্তর ও দক্ষিণ মেরুদেশীয় অঞ্চলে বরফাবৃত ভূ-ভাগের ওপর তীব্র শীতলতার জন্য উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। উত্তরে সাইবেরিয়া ও এর দক্ষিণে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত এবং দক্ষিণে আন্টার্কটিকা মহাদেশ জুড়ে শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাত লক্ষ করা যায়। এই ঘূর্ণবাতের নীচের স্তরের বায়ু অত্যন্ত ঘন ও শীতল প্রকৃতির হয়। ওপরের দিকের বায়ু অপেক্ষাকৃত উন্ন। ফলে উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে হিমশীতল বায়ু চারদিকে প্রবাহিত হয়। তাই একে শীতল কেন্দ্রযুক্ত প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
(খ) উয় কেন্দ্রযুক্ত প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Warm core Anti-cyclone): উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় সংলগ্ন নাতিশীতোয় মণ্ডলে যে প্রতীপ ঘূর্ণবাত লক্ষ করা যায় তাকে উদ্বু কেন্দ্রযুক্ত প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। নিরক্ষীয় অঞ্চল ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের ঊর্ধ্বমুখী বায়ু উপক্রান্তীয় অঞ্চলে মিলিত হয় ও নীচের দিকে নেমে আসে। এর ফলে বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং বায়ু উয় ও শুষ্কতর হতে থাকে। এই কারণে এই প্রতীপ ঘূর্ণবাতের নিম্নস্তরে উয় বায়ু অবস্থান করে। এই উদ্বু ও শুষ্ক বায়ু অনেকসময় তাপপ্রবাহ রূপে প্রবাহিত হয়। এই কারণে একে উয় কেন্দ্রযুক্ত প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
2. উৎপত্তির ভিত্তিতে প্রতীপ ঘূর্ণবাতের শ্রেণিবিভাজন (Classification of Anti-cyclones based on their Origin) : আবহবিদ হামফ্রে উৎপত্তির ভিত্তিতে প্রতীপ ঘূর্ণবাতকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। যথা-
(ক) যান্ত্রিক (Mechanical)
(খ) বিকিরণজনিত (Radiational)
(গ) তাপীয় (Thermal)
(ক) যান্ত্রিক প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Mechanical Anti-cyclone) : উভয় ক্রান্তীয় উচ্চচাপবলয়ে ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে নিরক্ষীয় অঞ্চল ও মেরুপ্রদেশ থেকে আগত বায়ুর যান্ত্রিক প্রেষন (Mechanical squeeze) লক্ষ করা যায়। এই প্রেষণের ফলে বায়ু নিম্নমুখী হয়ে উচ্চচাপ তথা প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি করে। এই কারণে এই জাতীয় প্রতীপ ঘূর্ণবাতকে যান্ত্রিক প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। সমুদ্রের ওপর এই যান্ত্রিক প্রতীপ ঘূর্ণবাত প্রবল আকার ধারণ করে। এই প্রতীপ ঘূর্ণবাতের অবস্থানের জন্য ভূপৃষ্ঠ বরাবর নিরক্ষরেখার দিকে আয়ন বায়ু ও মেরুবৃত্তের দিকে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়।
(খ) বিকিরণজনিত প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Radiational Anti-cyclone) : কুমেরু অঞ্চলের আন্টার্কটিকায় ও উত্তর মেরুর গ্রিনল্যান্ডে অধিক উচ্চতায় স্বল্প সৌর বিকিরণ লাভ ও অবাধ তাপের বিকিরণের কারণে এই অঞ্চলে সর্বদাই অধিক উচ্চচাপ অবস্থান করে। এই উচ্চচাপবিশিষ্ট বায়ু স্থায়ী প্রতীপ ঘূর্ণবাতের জন্ম দেয়। ভূপৃষ্ঠের অধিক তাপ বিকিরণের কারণে এই জাতীয় প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় বলে একে বিকিরণজনিত প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
(গ) তাপীয় প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Thermal Anti-cyclone) : যে সমস্ত অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠের জল অধিক শীতল হয়ে যায়। ফলে বায়ুর উষ্ণতা কমে গিয়ে উচ্চচাপ কেন্দ্র তথা প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। একে তাপীয় প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। এই ধরনের প্রতীপ ঘূর্ণবাত অস্থায়ী প্রকৃতির।