বায়ুপুঞ্জের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Air mass) :
(ক) বার্জেরন প্রদত্ত শ্রেণিবিভাগ (Classification according to Tor Bergeron) :
বায়ুপুঞ্জের শ্রেণিবিভাজন সম্পর্কিত ধারণাটিও প্রথমে টর বার্জেরন (Tor Bergeron)-এর লেখা থেকেই পাওয়া যায়। তিনি বায়ুপুঞ্জের দুই ধরনের শ্রেণিবিভাজনের উল্লেখ করেন। যথা-
1. ভৌগোলিক শ্রেণিবিভাগ (Geographical Classification), যা মূলত উৎস অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বিকাশ লাভ করে।
2. তাপগতি সম্বন্ধীয় শ্রেণিবিভাগ (Thermodynamic Classification), যা প্রধানত বায়ুপুঞ্জটি যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যকে গ্রহণ করে নিজের পরিবর্তন ঘটায়।
(খ) পিটারসেন প্রদত্ত শ্রেণিবিভাজন (Classification according to Petterssen) :
বার্জেরন প্রদত্ত শ্রেণিবিভাজনের ওপর ভিত্তি করে আবহবিদ্যার অধ্যাপক পিটারসেন (Petterssen) বায়ুপুঞ্জের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক শ্রেণিবিভাজন করেন।
1. ভৌগোলিক শ্রেণিবিভাজন (Geographical Classification) :
2. তাপগতি সম্বন্ধীয় শ্রেণিবিভাজন (Thermodynamic Classification) :
মূলত এই ধরনের শ্রেণিভুক্ত বায়ুপুঞ্জের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলীয় স্থিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতা বিষয়টি যুক্ত। এর প্রভাবে দুই ধরনের বায়ুপুঞ্জ লক্ষ করা যায়।
(a ) শীতল বায়ুপুঞ্জ (Cold Air mass) :
বায়ুপুঞ্জটি সংলগ্ন ভূভাগ অপেক্ষা অধিক শীতল বলে পিটারসেন তাকে শীতল বায়ুপুঞ্জ বলেছেন। এই ধরনের বায়ুপুঞ্জ ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্তাপ গ্রহণ করলেও তা ধীরে ধীরে তাপবিযুক্তি প্রক্রিয়ায় শীতল হয় এবং বায়ুমণ্ডলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
(b) উয় বায়ুপুঞ্জ (Warm Air mass) :
বায়ুপুঞ্জটি সংলগ্ন ভূভাগ অপেক্ষা অধিক উয় হলে তাকে উদ্বু বায়ুপুঞ্জ বলা হয়। এই ধরনের বায়ুপুঞ্জ থেকে ভূপৃষ্ঠে উত্তাপের স্থানান্তর ঘটলে বায়ুপুঞ্জটি নীচের দিক থেকে শীতল হতে শুরু করে। দ্রুত তাপবিযুক্তির কারণে বায়ুপুঞ্জটি এই ধরনের অস্থিতিশীল প্রকৃতির হয়ে পড়ে।
3. যান্ত্রিক পরিবর্তন (Mechanical Modification): পরবর্তীকালে পিটারসেন ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলীয় নিয়ন্ত্রকগুলির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আরও দুই ধরনের বায়ুপুঞ্জের উল্লেখ করেন- (a) স্থিতিশীল (stable or s) এবং (b) অস্থিতিশীল (unstable or u)।
(গ) ট্রেওয়ার্থা প্রদত্ত শ্রেণিবিভাজন (According to Trewartha) :
পরবর্তীকালে ট্রেওয়ার্থা (Trewartha) উৎস অঞ্চলের ভিত্তিতে 4 ধরনের বায়ুপুঞ্জের ধারণা দেন। এগুলি হল-
1. মহাসাগরীয় ক্রান্তীয় বায়ুপুঞ্জ (Maritime Tropical Air mass or mT),
2. মহাদেশীয় ক্রান্তীয় বায়ুপুঞ্জ (Continental Tropical Air mass or cT),
3. মহাসাগরীয় মেরু বায়ুপুঞ্জ (Maritime Polar Air mass or mP) এবং
4. মহাদেশীয় মেরু বায়ুপুঞ্জ (Continental Polar Air mass or cP)।
মহাদেশীয় মেরু বায়ুপুঞ্জকে তিনি আবার ঋতুভেদে বৈচিত্র্যময়তা ও ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্তাপ গ্রহণের তারতম্য অনুয়ায়ী দুটি ভাগে ভাগ করেন। যথা- (a) মহাদেশীয় আর্কটিক বায়ুপুঞ্জ (Continental Arctic or Air mass or cA) এবং মহাদেশীয় মেরু বায়ুপুঞ্জ (Continental Polar Air mass or cP)।
(ঘ) সাধারণ শ্রেণিবিভাজন (General Classification) :
বায়ুপুঞ্জের উৎস অঞ্চল (Source regions) এবং পরিবর্তনের (modifications) ওপর ভিত্তি করে একটি সাধারণ শ্রেণিবিভাজন করা যেতে পারে।