রাসায়নিক বিক্রিয়া অনুসারে স্তরবিন্যাস (Classification based on Chemical reaction):
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে আগত সৌর বিকিরণের ক্ষুদ্র তরঙ্গের বিভিন্ন রশ্মির ও সৌর ঝড়ের (solar storm) প্রভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। এই বিক্রিয়ার উপস্থিতির সাপেক্ষে বায়ুমণ্ডলকে দুটি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা-
(a) কেমোস্ফিয়ার (Chemosphere) ও
(b) নন্-কেমোস্ফিয়ার (Non-Chemosphere)।
(a) কেমোস্ফিয়ার (Chemosphere) :
সৌর বিকিরণের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের যে অংশে রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাব লক্ষ করা যায় তাকে কেমোস্ফিয়ার বলে। এই ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ট্রপোপজ থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এবং 90 থেকে 110 কিমি-এর মধ্যে লক্ষ করা যায় যেখানে সমমণ্ডল ও বিষমণ্ডলের পরিবর্তনশীল বলয় রয়েছে।
★ 15 থেকে 35 কিমি উচ্চতার মধ্যে অক্সিজেন পরমাণু ও ওজোন গ্যাসের সঙ্গে সূর্যরশ্মির আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। ওজোন (O₃) গ্যাসের প্রাধান্য থাকায় (চিত্র: 4-5) এই স্তরের নাম ওজোনোস্ফিয়ার (Ozono- sphere)। এই স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
উচ্চতা ভেদে ওজনের ঘনত্বের পরিমাণ |
(i) 0.1-0.2 মাইক্রোমিটার (µm) তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অতিবেগুনি রশ্মি অক্সিজেন (O₂) অণুকে ভেঙে অক্সিজেন পরমাণু উৎপন্ন করে। (O₂ + Av O+O, যেখানে হল Planck's Constant)
(ii) দুটি অক্সিজেন পরমাণু (O) আবার নিরপেক্ষ অনুঘটক (M)-র সহায়তায় শক্তি বিনিময় করে অক্সিজেন অণুতে (O₂)-তে পরিণত হয়। [O + O + (M) = 0,]
(iii) এই অক্সিজেন অণুর (০১) সঙ্গে অক্সিজেন পরমাণুর বিক্রিয়ায় তিনটি আইসোটোপ বিশিষ্ট অক্সিজেন যৌগ ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি হয়। [O₂+00, + (M)]
রাতের বেলায় বায়ুমণ্ডলের দিকে তাকালে ক্ষীণ আলোর আভা দেখা যায়। কোনো অন্ধকার স্থানে গিয়ে নিজের হাতকে আকাশের দিকে রেখে তাকালে বোঝা যায় হাত আকাশের তুলনায় অধিক অন্ধকারাচ্ছন্ন। এর প্রধান কারণ Air glow। কেমোস্ফিয়ারে দিনের বেলায় গ্যাসীয় অণুগুলি সৌর বিকিরণের প্রভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে পরমাণুতে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু রাতের বেলায় এই পরমাণুগুলি পুনরায় সংযুক্ত হয়ে অণুতে পরিণত হওয়ার সময় আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। এর ফলেই রাতে Air glow-এর সৃষ্টি হয়। ক্রমাগত Air glow-এর ফলেই রাতে আকাশকে উজ্জ্বল দেখায়। সর্বাধিক Air glow সৃষ্টি হয় 90 থেকে 110 কিমি উচ্চতায় যেখানে দুটি অক্সিজেন পরমাণুর (O) সংযোজনে অক্সিজেন অণুর (O₂) সৃষ্টি হয়।
(b) নন-কেমোস্ফিয়ার (Non-Chemosphere) :
বায়ুমণ্ডলের বাকি অংশ যেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়া খুব একটা লক্ষ করা যায় না, তাকে নন্-কেমোস্ফিয়ার বলে।