অনুন্নয়ন" ধারণাটির রূপান্তর ও উন্নয়নের দিকে যাত্রা(The journey towards the transformation and development of the concept of underdevelopment)
একটি দেশে অনুন্নয়নের ধারণাটি কখনোই চিরস্থায়ী হতে পারে না। বিশেষ করে, যে দেশটির আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বর্তমানের নিরিখে যথেষ্ট পিছিয়ে পড়া, সেখানে উন্নয়ন যে একেবারেই থেমে থাকে, এমনটা কিন্তু । এক্ষেত্রে যে কোনো মুহূর্তেই একটি দেশ অনুন্নয়নের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে উন্নয়নের সুযোগগুলিকে সম্প্রসারিত করে নিজেদের অর্থনীতির বা বুপান্তর ঘটাতে পারে। তা সত্ত্বেও, বিশ্বব্যাপী অনুন্নয়ন শব্দটির বিকৃত রূপ এখনো কিছুটা হলেও রয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলির মানুষজন মনে করেন, অনুন্নয়ন মানেই "অনগ্রসরতা" বা 'দারিদ্র'-এর কাছাকাছি কোনও একটা স্তর, যেটি উচ্চ জন্মহার, উচ্চ শিশুমৃত্যু, অপুষ্টি, একটি বৃহৎ কৃষি ও ছোটো শিল্পখাত, মাথাপিছু জিডিপি কম, নিরক্ষতার উচ্চ মাত্রা এবং স্বল্প আয়ুকে নির্দেশ করে থাকে। এই ধারণাটি সংকীর্ণ অর্থে কিছুটা সত্য হলেও, বাস্তবের সাথে তার বেশকিছুটা ফারাক রয়েছে। কারণ, পৃথিবীতে এমন কিন্তু অনুন্নত দেশ রয়েছে, যাদের অনুন্নয়নের তকমা কোনওভাবেই উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি। দৃস্টান্তস্বরূপ, খনিজ তেল-সমৃদ্ধ সৌদি আরবে সম্পদের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি এবং উচ্চ আয়ের সুবিধাগুলি সার্বিক উপভোগ করার সুবাদে অতীতের অনুন্নয়নের প্রথাগত ধারণাটি এখানে সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।
একসময়, ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও অবশ্য এই একই কথা প্রযোজ্য হত। সম্প্রতি, এই দেশটিকে যথেষ্ট উন্নত বলে মানা হয়। অন্যদিকে, 2021 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সার্বিক উত্তরণের মধ্যে দিয়ে জাতি সংঘের Committee for Development Policy (CDP)-এর নির্ধারিত অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে হয়তো আর কয়েক বছরের মধ্যেই বেরিয়ে আসবে।
বর্তমানে অনুন্নয়ন থেকে বেরিয়ে এসে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিধিসম্মত কার্যকরী পদ্মা সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন-
• জাতীয় আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি দেশের সামগ্রিক উৎপাদনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো।
• দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে উৎপাদন কাঠামোয় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ঘটানো।
• ধনী-দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে আর্থ-সামাজিক ব্যবধানকে দ্রুত কমিয়ে আনা।
• যাতে উন্নয়নের সার্বিক ক্ষেত্রগুলি সমানভাবে বিকশিত হয়ে যায়, সেই লক্ষ্য মৌলিক চাহিদা এবং বন্টনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।
• আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো এবং মানব উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়ে বাজেট পুনঃনির্ধারণ করা।
• বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে দেশে কৃষি এবং শিল্পের সমন্বয় ঘটিয়ে মজবুত উৎপাদন ব্যবস্থার পরিসর বৃদ্ধি ঘটানো।
• ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের সঠিক বণ্টনের বিষয়েও যথাযথ লক্ষ্য রাখা, প্রভৃতি।
মন্তব্য (Remarks)
অনুন্নয়ন কেবল বিকাশের ব্যর্থতা নয়, অনুন্নয়ন একটি সার্বিক অভিশাপ। বর্তমানে, বিশ্বের অনুন্নত সমস্ত দেশগুলি উন্নয়নের অভিমুখে এগিয়ে যেতে সমস্তরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও, তাদের কাছে সম্ভাবনার তুলনায় বাধার পরিমাণটাই এখনও সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বব্যাংক, জাতিপুঞ্জের অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলি অবশ্য বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বন্ধপরিকর। তাছাড়া, বর্তমানে অনুন্নত দেশগুলির প্রতি উন্নত দেশগুলির পরিবর্তিত সহানুভূতিশীল মনোভাবকে অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলা যেতে পারে।।
কাজেই, আজকে যে দেশটিকে আমরা অনুন্নতরূপে দেখি, ভবিষ্যতে তারাই কিন্তু উন্নয়নের প্রকৃত দাবিদার। এই দিক থেকে বিচার করলে, যে কোনো দেশের অনুন্নয়নের পরিস্থিতিতেও সমৃদির একটি বৃহৎ সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় থাকে।