welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের ভিত্তি (Basis of Climatic Classification) :

জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের ভিত্তি (Basis of Climatic Classification) :


পৃথিবীকে বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করার জন্য যেসমস্ত উপাদানগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা নিচে আলোচনা করা হল। যথা-


1. নীট সৌর বিকিরণ (Net Solar Radiation): আগত ও প্রত্যাবর্তনকারী সৌর বিকিরণের মধ্যে পার্থক্যকে নীট সৌরবিকিরণ বলা হয়। নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে নীট সৌর বিকিরণের এক উল্লেখযোগ্য বার্ষিক পার্থক্য দেখা যায়। নীট বিকিরণের এই স্থানগত তারতম্য মৃত্তিকার আর্দ্রতার হ্রাসবৃদ্ধিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এ ছাড়া বিকিরিত শক্তির প্রাপ্তির পরিমাণের ওপর উদ্ভিদের বিকাশ নির্ভর করে। এই সকল কারণেই জলবায়ুবিদগণ নীট বিকিরণকে জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা করেন। 1970 খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্নার, এইচ তেরজুং নীট বিকিরণকে প্রথম ব্যবহার করে পৃথিবীর জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের চেষ্টা করেন। তিনি এই উদ্দেশে নীট বিকিরণের সর্বোচ্চ ও বার্ষিক প্রসরের মানের ভিত্তিতে রেখাচিত্র অঙ্কন করেন এবং রেখাচিত্রের বর্ণনার ভিত্তিতেই পৃথিবীর মানচিত্রে নীট বিকিরণের স্থানগত তারতম্যকে চিহ্নিত করেন।


2. তাপমাত্রা (Temperature): নিম্ন বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নিম্ন বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার ভিত্তিতে অঙ্কিত সমোয়রেখাগুলি মোটামুটি অক্ষরেখাকে অনুসরণ করে একে অপরের সমান্তরালে বিস্তৃত হয়। এই কারণে তাপমাত্রার বৈচিত্র্য অনুযায়ী অক্ষরেখা বরাবর ভূপৃষ্ঠকে নিরক্ষীয়, ক্রান্তীয়, নাতিশীতোয়, উপমেরু ও মেরু-এই পাঁচটি বৃহৎ জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে।


3. অধঃক্ষেপণ (Precipitation): জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনে অধঃক্ষেপণের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কারণ অধঃক্ষেপণের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে মৃত্তিকার আর্দ্রতার পরিমাণ, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রকৃতি, জলনির্গম প্রণালী এবং ভৌমজলের সঞ্চয় প্রভৃতি। তাই হাজার হাজার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে নিয়মিতভাবে বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে অধঃক্ষেপণ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়। এর ভিত্তিতে পৃথিবীর মানচিত্রে সমবর্ষণরেখা অঙ্কন করা হয়। এই সমবর্ষণরেখার মানচিত্র বিশ্লেষণ করে সমগ্র পৃথিবীকে 7টি অধঃক্ষেপণ অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। যথা- 

(i) আর্দ্র নিরক্ষীয় বলয়, 

(ii) সঙ্কীর্ণ উপকূলীয় বলয়, 

(iii) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়, 

(iv) মধ্য অক্ষাংশীয় মেরু ও স্তেপ বলয়, 

(v) আর্দ্র উপক্রান্তীয় বলয়, 

(vi) পশ্চিম উপকূলীয় সামুদ্রিক বলয়, 

(vii) আর্কটিক বা মেরুদেশীয় বলয়। 

তবে অধঃক্ষেপণ এককভাবে জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের ভিত্তি হতে পারে না। এর জন্য বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদনের হারও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। এই দুটি আবার উয়তা ও বায়ুপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল।


4. স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation): উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও ভূগোলবিদ উভয়েই একমত যে জলবায়ুর তারতম্যের ওপর উদ্ভিদ প্রজাতির বণ্টন নির্ভর করে। কোনো কোনো প্রজাতির উদ্ভিদ অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জন্মায়, আবার কোনো কোনো উদ্ভিদ খরাপ্রবণ অঞ্চলে জন্মায়। আবার, কিছু উদ্ভিদ অতি শীতল পরিবেশে বিকাশ লাভ করে। তাই উদ্ভিদের বণ্টন জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অধিকাংশ ভৌগোলিক জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনে উদ্ভিদ প্রজাতির বণ্টন সংক্রান্ত মানচিত্রের সাহায্য নেন।


5. মৃত্তিকার আর্দ্রতা (Soil Moisture): সাম্প্রতিককালে ভৌগোলিকগণ জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগের ভিত্তি হিসেবে জলের ভারসাম্যের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মৃত্তিকার আর্দ্রতা বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদনের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে মৃত্তিকায় পর্যাপ্ত আর্দ্রতার জোগান উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। উদ্ভিদ মৃত্তিকা থেকে জল নিয়ে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকায় আর্দ্রতার হ্রাস ঘটায়। তাই অধঃক্ষেপণ ও মৃত্তিকায় আর্দ্রতার পরিমাণের মধ্যে ভারসাম্যের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে বহু ভৌগোলিক ও জলবায়ুবিদ পৃথিবীর জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজন করেছেন। এগুলির মধ্যে থর্নওয়েট-এর জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজন উল্লেখযোগ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01