অ্যারোসল (Aerosols):
'Aero' শব্দের অর্থ বায়ু ও 'Sol'-এর অর্থ কণা অর্থাৎ বায়বীয় কণা। বায়ুমণ্ডলে ভাসমান অতিক্ষুদ্র কলয়েড ধর্মী সূন্নকণাগুলিকে একত্রে অ্যারোসল বলে।
• উৎস: বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসল প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় প্রকার উৎস থেকেই আসে। অ্যারোসলের প্রধান উৎস হল-সামুদ্রিক লবণ কণা, ধূলিকণা, বালুকণা, বিভিন্ন জৈবপদার্থ, ধোঁয়া, শিল্পাঞ্চলের কয়লার পোড়া ছাই, সামুদ্রিক তরঙ্গের ভাঙনের ফলে সৃষ্ট লবণ কণা, অগ্ন্যুদ্গম বা দাবানল থেকে নির্গত ধোঁয়া ইত্যাদি। এই সকল উৎস থেকে আসা যে সকল কণা বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়াতে সক্ষম তারাই প্রকৃতপক্ষে অ্যারোসল। এই সকল উৎস থেকে সৃষ্ট যেসমস্ত কণা বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়াতে পারে না সেগুলি পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।
• বৈশিষ্ট্য:
(i) অ্যারোসল হল অতিসূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাসমান কণা। এদের সর্বাধিক গড় ব্যাস 100 মাইক্রোমিটার।
(ii) এগুলি তাপ ও জলীয় বাষ্পের উত্তম শোষক অর্থাৎ জলাকর্ষী কণা (Hygroscopie Nuclei) রূপে কাজ করে।
(iii) অ্যারোসল বায়ুমণ্ডলের অস্থায়ী উপাদান। স্থান ও ঋতুভেদে এদের তারতম্য ঘটে।
• গুরুত্ব:
বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসল অস্থায়ী উপাদান হলেও এর গুরুত্ব অপরীসীম। যেমন-
( 1) ভাসমান এই ধুলিকণাকে কেন্দ্র করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং মেঘ, কুয়াশা, তুহিন ইত্যাদির সৃষ্টি হয়।
(ii) বায়ুতে ভাসমান এই ধুলিকণাগুলি সরাসরি সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত করে নানান রঙ ও বর্ণচ্ছটার সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে নীলাভ বর্ণটির প্রাধান্য বেশি থাকায় দিনের বেলায় আকাশকে নীল দেখায়।
(iii) আপতিত সূর্যালোককে বিচ্ছুরিত করে পৃথিবীর তাপমাত্রায় সমতা বজায় রাখে।
তবে বায়ুমণ্ডলের গতিশীলতায় অ্যারোসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও জীবজগতে এর কিছু ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে। যেমন-
(ক) বায়ুমণ্ডলে ধুলিকণার আধিক্য বায়ুমণ্ডলকে অস্বচ্ছ করে তোলে ও দৃশ্যমানতা কমায়।
(খ) জলীয় বাষ্পকে শোষণ করে অনেকসময় আপতিত সূর্যালোককে ধরে রেখে বায়ুমণ্ডলের উয়তাকে বাড়িয়ে তোলে।
(গ) বায়ুতে ভাসমান SO, NO, CO, কণাগুলি জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যাসিডে পরিণত করে। ফলে অ্যাসিড বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ে।